হোটেল রুমে মোবাইল ফোন রেখে সীমান্ত পাড়ি দেন পি কে হালদার

Share Now..

১৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচারকারী প্রশান্ত কুমার (পি কে ) হালদার কীভাবে দেশ ত্যাগ করলেন—সেই প্রশ্ন এখন সর্বমহলে। তার একার পক্ষে এত টাকা ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করা সম্ভব না। এমন নয়, ব্যাংকের ভল্ট খুলে তিনি টাকা নিয়েছেন। অনেকের সহায়তায় পি কে হালদার বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। নানা তথ্য-উপাত্ত দেখে মনে হচ্ছে ব্যাংকিং খাতে একটি বড় মাফিয়া কাজ করছে। পি কে হালদারকে বিভিন্নভাবে সাহায্যকারী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে একটা পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থান করছিলেন তিনি। সেখানে তিনি তার নিজের মোবাইল ফোনটি রেখে যান। যাতে এটি দৃশ্যমান হয় যে তিনি হোটেলে অবস্থান করছেন। কিন্তু ঐ সময় তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি—এখন সেই প্রশ্নটি জোরালো হয়েছে। তাকে দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের খুঁজতে কাজ করছে একাধিক সংস্থা।

একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করার পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন দুদক। এই দুই কর্মকর্তার পেছনেও কারা জড়িত ছিল এবং কাদের নির্দেশে তারা কাজ করেছেন তাদেরও তথ্য পাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা।

এই দুই কর্মকর্তা ছিলেন ব্যাংকিং সেক্টরে আলোচিত মুখ। তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিরা ছিলেন তটস্থ। ধারণা করা হচ্ছে অর্থ আত্মসাৎ ও টাকা পাচারের প্রক্রিয়ার সঙ্গে ব্যাংকিং সেক্টরের লোকজনের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারাও জড়িত। ব্যাংকের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব না।
পি কে হালদার হলো শো পিস। নামে-বেনামে নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া পি কে হালদারের পিছনে যারা ছিল, তারা কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন। বিদেশে পাচার করেছেন। কিন্তু তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। তাদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত ব্যাংকিং সেক্টরের কোনো কিছুই ঠিক হবে না। এটা বিগত সরকারের আমলে হয়েছে, আগেও পি কে হালদারগণদের সংখ্যা কম ছিল না, এখনো আছে। চারদলীয় সরকারের আমলে যে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হলে শতকরা ১০ ভাগ কমিশন দিতে হতো। ঐ সময় তারা ১০ পার্সেন্ট হিসেবে আলোচিত ছিল। চারদলীয় সরকারের এক শ্রেণির নেতাদের পাশাপাশি অন্য সংস্থার কর্মকর্তারা জড়িত ছিল। এখনো একই অবস্থা বিরাজ করছে। বর্তমানে নব্য আওয়ামী লীগাররা ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচারের সঙ্গে জড়িত। তারা ঘাপটি মেরে ছিল। এখন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।পি কে হালদার বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন, আবার তাকে সহায়তাকারীরাও কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ব্যাংক কর্মকর্তাদের। অপরাধীদের ধরতে নানা কৌশল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এতগুলো বাধা পার হয়ে কীভাবে দেশ ছেড়ে পালালেন পি কে হালদার। চোরকে পালাতে দিয়ে আবার চোরকে খোঁজার মতো অবস্থা। যারা পি কে হালদারদের সহায়তা করেছে তাদেরও তালিকা করা হচ্ছে। এছাড়া পি কে হালদারের মতো আরো যারা ব্যাংকিং সেক্টর থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন তাদের তালিকাও হচ্ছে। এদিকে পি কে হালদারের মতো একজন ব্যবসায়ী, যিনি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন। তিনি সিঙ্গাপুরে এক নায়িকা বান্ধবীকে অ্যাপার্টমেন্ট কিনে দিয়েছেন। অনেকের মুখে মুখে এখন এ কথা শোনা যাচ্ছে। ঐ ব্যবসায়ী এক সময় শিবিরের নেতাও ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *