বাজেট ২০২২-২৩: খাতভিত্তিক ভ্যাট অব্যাহতির লাগাম টেনে ধরার চিন্তা
চলতি বছরে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ খাতে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে। তবে করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধাবস্থার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য গতিহীন হওয়ায় সার্বিকভাবে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়নি।
চলতি অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৩১ শতাংশ। তবে আগামী অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করেছে জাতীয় রাজস্ব রোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটি ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের প্রত্যাশা করছে। এনবিআর-বহির্ভূত অন্যান্য খাত মিলিয়ে নতুন বছরে মোট রাজস্ব আয়ের প্রত্যাশা করা হচ্ছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাজেটের সামগ্রিক ব্যয়ের লক্ষ্য বেড়ে যাওয়ায় নতুন বছরে রাজস্ব আদায়ের নতুন নতুন খাত চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিগত সময়ে বিভিন্ন শিল্প খাতে দেওয়া ভ্যাট অব্যাহতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়টিও বিবেচনার জন্য টেবিলে রয়েছে। বিভিন্ন খাতে দেওয়া এসব অব্যাহতির সুফল সাধারণ জনগণ পাচ্ছে কি না, তা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিগুলো এ ধরনের সুবিধা নিয়ে নিজেরাই লাভবান হচ্ছে। বরং ক্রেতাদের জন্য মানবৃদ্ধি কিংবা মূল্যে কোনো রেয়াত দিচ্ছে না। নির্দিষ্ট শিল্প খাতকে কত দিন ‘স্পুন ফিডিং’ করা হবে—সে বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। এ ধরনের একচেটিয়া সুবিধা রাজস্ব খাতে ন্যাঘ্যতা নিশ্চিত করছে না বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছে। তদুপরি, কোনো কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্তির কারণে করপোরেট কর হারে ছাড় পাচ্ছে। আবার একই কোম্পানি বছরের পর বছর ভ্যাট অব্যাহতি নিচ্ছে। আবার কোনো কোনো খাত বঞ্চিত হচ্ছে। এ ধরনের সুবিধাগুলোর ক্ষেত্রে যৌক্তিকীকরণ করার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। সে কারণে নতুন বছরে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য স্থির করেছে এনবিআর।আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য প্রস্তাব করা হচ্ছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য উৎস থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার আগের অর্থবছর থেকে মাত্র ১১ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল। আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ইতিমধ্যে বাজেটের আকারের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। ফলে বাজেটের ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা; যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাড়ে ৫ শতাংশের সমান।