টেকনাফ দিয়ে মাদক আসা থামছেই না
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা পদক্ষেপের পরও টেকনাফ দিয়ে মাদক আসা থামছেই না। বিভিন্ন সময়ে অভিযানে মাদক কারবারি আটক ও মাদক উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু অধরা থেকে যাচ্ছে মাদকের গডফাদাররা। নানা কৌশলে তারা মাদকের এ অবৈধ ব্যবসা জিইয়ে রেখেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শুধু টেকনাফ এলাকায় ৫৪ জন মাদক পাচারকারী গডফাদার রয়েছে। স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন পেশার মানুষ এই তালিকায় রয়েছে। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। তাদের সঙ্গে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর এক শ্রেণির সদস্যদের সখ্য। প্রতিটি চালানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিতে হয় নির্ধারিত উত্কোচ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, যে পরিমাণ আটক ও উদ্ধার হয়, তার ১০ গুণ মাদক দেশে ঢোকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণির সদস্য মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে টেকনাফ এলাকায় পোস্টিং নেন। এক বছর চাকরি করলে সারা জীবনে আর কিছু করা লাগে না। স্থানীয় প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীও মাদকের টাকার ভাগ পান নিয়মিত। এভাবে মাদকের টাকায় কোটিপতি হয়েছেন অনেকে। গডফাদারদের অনেকেরই বিদেশে গাড়ি-বাড়ি রয়েছে।
মাদকের টাকা তারা নানা কায়দায় বিদেশে পাচার করছেন। টেকনাফ দিয়ে দেশে মাদক প্রবেশ করে নৌপথ, স্থলপথ ও আকাশ পথ দিয়ে এবং তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী থেকে শুরু করে সারা দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত চাইলেই মাদক পাওয়া যায়।মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে মাদকের ভয়াল আগ্রাসন চলছে। এটা একটা অদৃশ্য যুদ্ধ। যে যুদ্ধ তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কি করে ধ্বংস করে দিচ্ছে—আমরা বিশেষজ্ঞরা এই যুদ্ধ সম্পর্কে জানি। কারণ আসক্তরা আমাদের কাছে আসে। কিন্তু অনেকে তা দেখতে পাচ্ছে না। এ যুদ্ধ থেকে রক্ষা পেতে হলে ঘরে ঘরে পালটা যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নইলে নতুন প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। সমাজে অবক্ষয় নেমে আসবে।সর্বনাশা মাদক ব্রেনসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ধ্বংস করে দিচ্ছে। পরিবার ধ্বংস করে দিচ্ছে। ভয়াল মাদক তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। এছাড়া উঠতি বয়সিরা নেশাগ্রস্ত হয়ে খুনখারাবিতে জড়িয়ে পড়ছে। স্কুল-কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মাদকে আসক্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যা দেশের মেধা ধ্বংসের বিপজ্জনক মাত্রা। মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ আগেই ‘জিরো টলারেন্স’নীতি গ্রহণ করেছেন। সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে দেশব্যাপী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে দেশবাসীর প্রশংসাও পেয়েছেন। মাদকের বিরুদ্ধে এ অভিযান এখনো অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন। বাস্তবতা হলো, প্রশাসনের এই অভিযানের পরও ভয়ংকর মাদকের পাচার বন্ধ করা যায়নি। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে চালান। টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অভিযান চালিয়ে ৪.২৭৮ কেজি ক্রিস্টাল মেথ (আইস) ও ১ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়ন শনিবার রাতে অভিযানটি পরিচালনা করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, উদ্ধার করা এসব মাদকদ্রব্যর মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।