যশোরে সহিংস হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ

Share Now..

এস আর নিরবঃ

যশোরের রাজনীতির মাঠ সহিংস হয়ে উঠছে। শুক্রবার মধ্যরাতে বিএনপির শীর্ষ চার নেতার বাড়িতে তাণ্ডবের পর রোববার দিবালোকে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তাণ্ডব, সাবেক মন্ত্রী তরিকুলপুত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়ি ভাঙচুর ও বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। যশোর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাংশের মিছিল থেকে এই হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বিএনপি দাবি করছে এসময় পাঁচ রাউন্ড গুলিও ছোঁড়া হয়। এসব ঘটনার পর শহরে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহর জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে বিএনপি অফিস ও নেতাদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলায় নিন্দা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপি নেতাদের দাবি, যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া বাজারে সহিংসতার ঘটনায় গ্রেফতার ২৮ নেতাকর্মীকে রোববার বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। বিকেল ৩টার দিকে আদালতে নেতাকর্মীদের দেখতে যান বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। এসময় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা শহরের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আদালত থেকে ফেরার পথে শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় হামলার শিকার হন। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একাংশের মিছিল থেকে তার গাড়ির ওপর হামলা করা হয়। লাঠিসোটা ও লোহার রডের হামলার মুখে তার চালক গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে যান। এরপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেখান থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটির নেতৃত্ব দেন জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান, প্রচার সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহজাহান কবির শিপলু। মিছিলটি শহরের লালদিঘি পাড়ের জেলা বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও তা-ব চালায়। এ সময় বিএনপি কার্যালয়ের ভিতরের চেয়ার টেবিল, ব্যানার ফেস্টুন ব্যাপক ভাংচুর করা হয়।

এরপর মিছিলটি শহরের দড়াটানা হয়ে ঘোপ পিলুখান রোডে বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুলপুত্র অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাড়িতে হামলা চালায়। সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর চালায়। এ সময় বাড়ির বাইরে থাকায় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে রোববার দুপুরের পর থেকেই যশোর শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এছাড়াও শহরে কয়েকটি পয়েন্ট গাড়ি ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাড়িতে হামলার পর ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় মহড়া দেয়। তারা ‘হই হই রই রই আওয়ামী লীগ গেল কই’ স্লোগান দিতে থাকে। ততক্ষণে ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে চলে আসে। তারা সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকা- রুখে দিতে যুবলীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, আমরা কোন হামলা চালাচ্ছি না। বিএনপিকে প্রতিহত করতে রাজপথে এসেছি।

এই বিষয়ে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, তারা আমাদের সঙ্গে রাজনীতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে একের পর এক জেলা বিএনপির শীর্ষনেতাদের উপর হামলা করেছে। জনগণ এখন রাজপথে নেমে এসেছে; তখন আওয়ামী লীগনেতাদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। সেই কারণে তারা আমাদের উপর এমন আক্রমণ করছে। আমরা রাজনৈতিক ভাবেই এসব মোকাবেলা করবো। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনেই বারবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আক্রমণ করলেও; পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গতকাল হামলায় যুবলীগের সন্ত্রাসী টাক মিলন, আনোয়ার হোসেন বিপুল, হিটার নয়ন, শিপলুর নেতৃত্বে এসব নারকীয় হামলা-ভাংচুর করা হয়েছে। তারা আমাদের বাড়ির অদূরে কমপক্ষে ৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছে। ক্যাডারদের বাঁধার কারণে আমরা প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেনি।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নারকীয় তা-ব চালিয়েছে। রাজনৈতিক দলের পবিত্রস্থান দলীয় কার্যালয়। সেটিও তা-ব থেকে রক্ষা পায়নি। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। তার গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। তাদের বাড়িতে হামলা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তাদের তা-বে আমরা কেউ নিরাপদ নয়। আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের অভিভাবকদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। তারা আসলে কি চাইছেন। তারা অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তাদের ভূমিকায় আমরা হতবাক হয়েছি।

এব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, কয়েকটি স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে যশোরে বিএনপির শীর্ষ চার নেতার বাড়িতে মধ্যরাতে তা-বের ঘটনা ঘটে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এই হামলা, ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়। হামলার ঘটনা ঘটে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান খাঁনের বাসভবনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *