কয়রার হরিনখোলা বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ধস, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আতঙ্কে এলাকাবাসী।
কয়রা,খুলন প্রতিনিধি।
সোমবার ভোর ৪ টায় ভাটার টানে সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদ
খুলনার কয়রা উপজেলার হরিণখোলা এলাকায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে হঠাৎ
ফাটল দেখতে পান স্থানীয় মাছের ঘেরের মালিক আনারুল ইসলাম।
বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়িয়েই তিনি হাঁক ছাড়েন, ‘বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেঙ্গে
যাচ্ছে। তার হাঁক শুনে পার্শ্ববর্তী ঘের থেকে বেরিয়ে আসেন কয়েকজন।
তাদের সামনেই কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই বেড়িবাঁধের দীর্ঘ একটি
অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বাঁধভাঙার আতঙ্কে নিজেদের ঘরবাড়ি, সম্পদ
নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ জন্য মসজিদের মাইকে
গ্রামবাসীকে ঝুড়ি আর কোদাল নিয়ে বেড়িবাঁধে আসার ডাক দেন
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আবুল কালাম শেখ। নিজেদের রক্ষার তাগিদে ভাঙা
বাঁধে গ্রামবাসী হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুরু করেছেন বাঁধ
মেরামতের কাজ। দুপুরে নদীতে জোয়ার আসার আগ পর্যন্ত একটানা মাটি
কেটে, বাঁধ উঁচু করার কাজ করছেন তারা । এরপর ইউপি সদস্য আবুল কালাম
শেখ জানান, ‘সাধারণ মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের প্রচেষ্টায় দুপুরে জোয়ারের
কপোতাক্ষের নোনা পানি আটকাতে সক্ষম হয়েছি। তবুও পাউবোর
কতর্ৃপক্ষের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে কাজ না করা হলে যে কোন মুহুর্তে
বাধ ভেঙ্গে গোটা এলাকা প্লাবিত হবে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবর সকাল থেকেই কয়রার আকাশ
মেঘাচ্ছন্ন। মধ্যরাত থেকেই অব্যাহত ঝরছে বৃষ্টি, বেড়েছে বাতাসের
গতিবেগ। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায়
এবং বেড়িবাঁধের ১২ কিলোমিটার জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় আতঙ্কে
আছেন উপকূলীয় এ এলাকার বাসিন্দারা। কয়রার কপোতাক্ষ নদের পাড়ের
সোনাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির বহু মানুষ উৎকণ্ঠা নিয়ে
বেড়িবাঁধের রাস্তায় ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড়
সিত্রাং আঘাত হানলে গ্রামের সামনের ছোট্ট বেড়িবাঁধটি ভেঙে যাবে।
এতে লোনা পানিতে পুরো এলাকা ভেসে যাবে। এ সময় দেখা যায় অনেকে
দড়ি দিয়ে শক্ত করে ঘরবাড়ি বেঁধে রাখার চেষ্টা করছেন। অনেকে গরু-ছাগল
নিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যাচ্ছেন। সোনাপাড়া এলাকার ষাটোর্ধ্ব
বয়সের বৃদ্ধ আবদুল হাকিম শেখ বলেন, ‘চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি। সত্যি
সত্যি যদি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, তবে পুরো এলাকা লবণপানিতে ভেসে
যাবে। তলিয়ে যাবে মাছের ঘের।’ কয়রা উপজেলাটি খুলনা শহর থেকে সড়ক
পথে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস হলেই যে
কয়টা জনপদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এর মধ্যে কয়রা অন্যতম। এর
আগে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আইলায় সর্বস্ব হারানো অনেকেই এখনোখুঁজে ফিরছেন স্থায়ী নিবাস। আবার অনেকেই আবাস হিসেবে বেছে
নিয়েছে বেড়িবাঁধের কিনারাকে। সেগুলোর অবস্থাও এখন নাজুক। পানি
উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, কয়রা উপজেলায় পাউবোর
১৫৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ
ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
Challenge your friends and rise to the top in online gaming Lucky Cola