এবার মেট্রোরেলের জন্য অপেক্ষা চট্টগ্রামে

Share Now..


রাজধানী ঢাকায় বহু প্রত্যাশিত মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণ নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ শহরে আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মেট্রোরেল করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। এছাড়া গত ৪ ডিসেম্বর নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায়ও প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের মেট্রোরেল নির্মাণের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার জন্য ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কন্সট্রাকশন অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন এরিয়া’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে একনেকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ নভেম্বর মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে একনেক। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা থেকে ৫৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ গত ৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে মেট্রোরেলসংক্রান্ত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠান শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে আগামী বছরের শুরুতে যেন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন সে লক্ষ্যেই কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী দুই-আড়াই বছর আগে যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন এটা করার জন্য। হাছান মাহমুদ বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মেট্রোরেল যেতে পারে। এছাড়া মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর পর্যন্ত কীভাবে মেট্রোরেল নিয়ে যাওয়া যায় এসব বিষয় মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করা উচিত। এর ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান করবে কোরীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (কোইকা)। ফিজিবিলিটি স্টাডি করে যাতে এক বছর পর প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণে ইতিমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া। সিউলে গত ২ মার্চ বাংলাদেশ-কোরিয়া যৌথ পিপিপি প্ল্যাটফরমের চতুর্থ সভায় মেট্রোরেলসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে আগ্রহের কথা জানায় কোরিয়া। একই সঙ্গে তারা মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পানির চাহিদা পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ, পিপিপি পদ্ধতিতে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং গুলশান-বনানী এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার উন্নয়নের প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাবও দিয়েছে। জানা গেছে, এ প্রস্তাবের আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি উন্নয়ন সংস্থা কোইকার মাধ্যমে মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। তখন এ কাজে তারা ৫০ লাখ ডলার অনুদান হিসেবে দিতে চেয়েছিল। এর পরই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের প্রস্তাব দেয়।

জানা গেছে, কোরিয়ার আগে চীনের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি নিজেদের খরচে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) একটি প্রস্তাব দেয়। এর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সম্পূর্ণ খরচও তারা বহন করবে বলে জানিয়েছিল। বিনিময়ে তারা মিরসরাইয়ের কাছে সাগর থেকে উদ্ধার করা ৬০ বর্গ কিলোমিটার জমিতে একটি স্মার্ট সিটি বানিয়ে সেখান থেকে লভ্যাংশ নেওয়ার প্রস্তাব করে। সিডিএ প্রস্তাবের বিষয়টি জানানোর পর গত ২২ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সুপারিশ করে। এছাড়া গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসিএল) চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। মেট্রোরেল নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেডের মাধ্যমে একটি প্রাক-যোগ্যতা সমীক্ষা করেছিল।

One thought on “এবার মেট্রোরেলের জন্য অপেক্ষা চট্টগ্রামে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *