চীন-পাকিস্তান সামরিক সম্পর্কে উদ্বিগ্ন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ

Share Now..


দ্য চায়না ইনডেক্স ২০২২ অনুসারে, চীনা প্রভাব বজায় রয়েছে এমন ৮২ টি দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত এ তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের প্রযুক্তি, পররাষ্ট্রনীতি এবং সামরিক ক্ষেত্রে চীনা প্রভাব বিদ্যমান।

ইউনাইটেড স্টেটস ইন্সটিটিউট ফর পিস (ইউএসআইপি)-এর স্টিমসন সেন্টারের সিনিয়র ফেলো সমীর লালওয়ানির ‘এ থ্রেশহোল্ড অ্যালায়েন্স: দ্য চায়না-পাকিস্তান মিলিটারি রিলেশনশিপ’ শীর্ষক ২২ মার্চের বিশেষ প্রতিবেদনে এই তিনটি ক্ষেত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। চীন এবং পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্কের দিকে মনোযোগ প্রদান করেছেন লালওয়ানি। পাকিস্তানের উপর চীনের আধিপত্য বিস্তার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

ইউএসআইপিয়ের বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন, মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতা, চীন-ভারত সম্পর্কের পতন এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মতো বিভিন্ন ঘটনা পাকিস্তান ও চীনের সামরিক বাহিনীর সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে। এ দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যকার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা সামরিক সরঞ্জাম একে অপরের সাথে ভাগ করে নিচ্ছে। তারা যৌথ মহড়ায় অংশগ্রহণ করছে এবং কর্মী বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ক আরো জোরদার করছে।

প্রতিবেদনে তিনটি ক্ষেত্রে চীন-পাকিস্তান সামরিক সহযোগিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এই তিনটি ক্ষেত্র হলো, অস্ত্র হস্তান্তর, সামরিক কূটনীতি ও অনুশীলন এবং সামরিক ঘাঁটি প্রস্তুতি।

চীনা জোট থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও গত এক দশকে, চীন-পাকিস্তান সামরিক অংশীদারিত্ব গভীরতর হয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকেই চীন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অংশীদারের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। পাকিস্তানের অস্ত্রের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হলো চীন। পাকিস্তানের সাথে চীনের সামরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রাশিয়ার সাথে তার কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে চীন ও পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান।

পাকিস্তানের পশ্চিম উপকূল থেকে ভারত মহাসাগরে চীনের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন দেশের বাইরে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের চেষ্টায় রাশিয়া ও পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করে চলেছে। চীনের অনেক বিশেষজ্ঞ, চীন-রাশিয়ার সম্পর্কের মতোই চীন-পাকিস্তান সম্পর্ককে অত্যন্ত শক্তিশালী বলে গণ্য করছেন।

গত এক দশকে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে চীনের অবস্থান শীর্ষে। পাকিস্তানও চীনের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র গ্রহীতা হয়ে উঠেছে। চীন তার মোট অস্ত্র রপ্তানির ৪০% ব্যয় করে পাকিস্তানে। ২০১৫ সাল থেকে, চীন পাকিস্তানের আমদানিকৃত মোট অস্ত্রের প্রায় ৭৫% সরবরাহ করছে।

অর্থাৎ বলা যায়, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মূল শক্তিই হচ্ছে চীন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী, এয়ার ফোর্স (পিএএফ) এবং পাকিস্তান নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ সরবরাহকারী চীন। উদাহরণস্বরূপ দেখা যায়, পাকিস্তানের তিনটি এফ-১৬ ফাইটার স্কোয়াড্রনে ১৮-২৪ টি উন্নত যুদ্ধ বিমান রয়েছে। চীনা জেএফ-১৭ পাকিস্তানের আধুনিক অস্ত্রব্যবস্থার বৃহত্তম অংশ দখল করে আছে।

লালওয়ানি উল্লেখ করেছেন যে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি এবং বৃহত্তর কৌশলগত প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সহায়তা। ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ দশকের মধ্যে পাকিস্তানকে পারমাণবিকভাবে সক্ষম করতে সব ধরনের সহযোগিতা করে চীন।

চীন-পাকিস্তানের মধ্যে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তি স্থানান্তর একমুখী নয়। আফগানিস্তানে অবতরণকারী অবিস্ফোরিত ক্ষেপণাস্ত্র হস্তান্তরের মাধ্যমে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে সাহায্য করে পাকিস্তান। ২০২২ সালের আগস্টে, পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান, জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, চীন ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে যৌথভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।

পাকিস্তানের সাথে পিএলএ-এর সামরিক সম্পৃক্ততা গত দুই দশক ধরে গড়ে ওঠা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটি। দুই দেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক তাদের প্রতিপক্ষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

পাকিস্তানের সাথে ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত চীনের উপর এ দেশের নির্ভরতা বজায় থাকবে।

One thought on “চীন-পাকিস্তান সামরিক সম্পর্কে উদ্বিগ্ন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *