পাহাড়ে ঘরে ঘরে বৈসাবি উৎসবের আমেজ

Share Now..


খাগড়াছড়ি শহর থেকে পাহাড়ী পল্লী ও পাড়াগ্রাম এখন উৎসবে মেতেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিশেষ করে চাকমাদের প্রাণের উৎসব বৈসু (বৈ)- ত্রিপুরাদের সাংগ্রাই (সা) ও মারমাদের বিঝু (বি) অর্থাৎ বৈসাবিকে ঘিরে ঘরে ঘরে এখন উৎসবের আমেজ।ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টরা জানান, উৎসবতে ঘিরে হাটবাজারে চলছে কেনোকাটার ধুম। ফল, কাপড় ও মুদি দোকানে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। বৈসাবি উৎসবের ঐতিহ্যবাহী পাচন বা ঘণ্ডের জন্য এখন থেকেই সবজির উপকরণ সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এ জনপদে ‘বৈসাবী’কে বরণ করতে ৭ এপ্রিল (শুক্রবার) সকাল থেকে খাগড়াছড়িতে নানান আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে খাগড়াছড়িতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নিজস্ব প্রাঙ্গনে ঐতিহ্যবাহী বেইন বুনন, পাজন রান্না, পানি খেলা, গড়িয়া নৃত্য ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে চারদিন ব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ির সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ। রোববার (৯ এপ্রিল) খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্টীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের প্রাঙ্গনে বিকেলে লেখক ও গবেষক অশোক কুমার দেওয়ান স্মরণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ চাকমা ও মারমা ব্যান্ড গ্রুপের পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া ত্রিপুরাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসু উপলক্ষে শনিবার (০৮ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি শহরে বর্নাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের উদ্যোগে সরকারি কলেজ মাঠ থেকে র‌্যালিটি বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে। এতে বর্ণিল পোশাকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এতে সব বয়সের হাজার হাজার নারী পুরুষের অংশগ্রহণে এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। পরে ত্রিপুরাদের এতিহ্যবাহী গরয়া নৃত্যসহ বিভিন্ন জুম নৃত্য পরিবেশিত হয়।

এর আগে র‌্যালির উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, খাগড়াছড়ির জেলা পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শানে আলমসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

আগামী ১২ এপ্রিল (বুধবার) নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে মূলত খাগড়াছড়িতে চাকমা সম্প্রদায়ের বিঝু পালন শুরু হবে।

এর মধ্য দিয়ে ঘরে ঘরে শুরু হবে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব। পরদিন মূল বিঝু আর বাংলা নববর্ষের পহেলা বৈশাখ পালন করবে গজ্জাপয্যা বিঝু। পুরানো বছরের শেষের দুদিন ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। সেই সঙ্গে সব বয়সী মানুষ নদী, খাল, ছড়া অথবা ঝর্নায় গঙ্গা দেবীর পূজা আরাধনা করার মধ্য দিয়ে নতুন বছরের জন্য সুখ শান্তি কামনা করবেন।

অবশ্য ত্রিপুরা সম্প্রদায় আগামী ১৪ এপ্রিল (শুক্রবার) বৈসু ও চৈত্র সংক্রান্তি এবং গড়াইয়া নৃত্য উৎসব পালন করবে।

বৈসু, সাংগ্রাই ও বিঝু (বৈসাবি) উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে মারমা উন্নয়ন সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত চার দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্য রয়েছে, মেলা, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গীতিনাট্য পরিবেশনা।

One thought on “পাহাড়ে ঘরে ঘরে বৈসাবি উৎসবের আমেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *