ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবকালে সন্তান জন্ম, নাম রাখা হলো ‘মোখা’
কক্সবাজারের পেকুয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষায় সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া পাঁচ প্রসূতি জন্ম দিয়েছে পাঁচজন সন্তান। এদের মধ্যে হাসপাতালে আসার সময় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবকালে সবচেয়ে ভোগান্তি পাওয়া প্রসূতি নিজ সন্তানের নাম রেখেছেন ‘মোখা’।
রোববার (১৪ মে) ভোরে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ নবজাতকের জন্ম হয়। সন্তানের নাম মোখা রাখা প্রসূতি জয়নব বেগম (১৯) পেকুয়া উপজেলার দূর্গম রাজাখালী ইউনিয়নের বামুলাপাড়ার মো. আরকানের (২২) স্ত্রী।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়ায় তাণ্ডবের ভয়ে অন্যদের সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা জয়নবকেও গত শনিবার রাতে রাজাখালী ইউনিয়নের এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়।
আশ্রয়কেন্দ্রে আসার কয়েক ঘণ্টা পর রাতের ১টার দিকে জয়নবের প্রসববেদনা শুরু হয়। বেদনায় কাতরাতে শুরু করলে হাসপাতালের নিচে গাড়ি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন স্বামী আরকান। কিন্তু মধ্যরাতে তিনি কোনো গাড়ি পাচ্ছিলেন না।
ঠিক ওই সময় আশ্রয়ণকেন্দ্র পরিদর্শনে যান পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর হায়দার। দুর্গত দম্পতির অসহায়ত্ব দেখে সরকারি গাড়িতে তুলে নেন তিনি। দিয়ে আসেন ১২ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে। সেখানেই রোববার ভোরে জয়নব এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। পরে সকাল ১০টার দিকে জয়নব তার সন্তানকে নিয়ে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে যান। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেমে গেলে সন্ধ্যায় তারা বাড়ি ফেরেন।
এদিকে, জয়নাবের সন্তান ভূমিষ্টের খবর পেয়ে নবজাতক ও মাকে দেখতে যান ওসি। এ সময় রাজাখালীর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল সবাইকে মিষ্টি মুখ করান।
প্রথম সন্তান জন্ম দিয়ে উচ্ছ্বসিত জয়নব বেগম বলেন, ওসি স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। স্যার না থাকলে আমার কী অবস্থা হতো, জানি না।
জয়নবের স্বামী মো. আরকান বলেন, স্ত্রী জয়নবের প্রসবযন্ত্রণা হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। তখন পেকুয়া থানার ওসি স্যার নিজের গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। আমাদের কোলজুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলেসন্তান আসে। আমি খুশি হয়েছি এবং দুর্যোগকালীন সময়ে বিপদে এগিয়ে আসায় ওসি ও পুলিশের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবকালীন সময়ে পৃথিবীতে আসায় আমার ছেলের ডাক নাম রেখেছি ‘মোখা’।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, ওই নারী স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। মা ও ছেলে দু’জনই ভালো আছেন।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর হায়দার বলেন, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে প্রসববেদনায় কাতরানো ওই নারীকে আমি দুর্গত এলাকা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনেছি। ওই মুহূর্তে আমার সরকারি গাড়ি ব্যবহার করা ছাড়া উপায় ছিল না। পুলিশের কাজ তো জনকল্যাণ। আমি সে কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। ওই প্রসূতি নারীর সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি।
Challenge yourself with our innovative online games! Lucky Cola
Prove your worth—play now and rise to the top! Lucky Cola