গার্মেন্টস শিল্প টিকিয়ে রাখা নিয়ে মালিকদের সংশয়

Share Now..

শ্রমিকনামধারী একশ্রেণির নেতাদের উসকানিতে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প। এ খাত নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। লাগাতার আন্দোলন, ভাঙচুর ও সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাভারে ১৩০টি গার্মেন্টস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রো ও এর আশপাশের ১২৩টি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করা হয়েছে, যেগুলোতে ভাঙচুর করা হয়েছিল।

এমন অবস্থার কারণে অনেক বিদেশি ক্রেতা তাদের অর্ডার অন্য দেশে নিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর আছে। বর্তমানে গার্মেন্টস খাত গভীর সংকটে পড়েছে দাবি করে গার্মেন্টস মালিকরা বলেন, গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত রয়েছে। গার্মেন্টস সহিংসতার পেছনেও রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের হাত। এ কারণে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের স্থান গার্মেন্টস শিল্প টিকিয়ে রাখা নিয়ে মালিকরা সংশয়ে রয়েছেন।    

চলমান সংকট নিরসনে সবার সহযোগিতা কামনা করে তারা বলেন, কোনো কারণে গার্মেন্টস খাত অন্য দেশে চলে গেলে, সরকার, রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক—কোনো পক্ষের জন্য তা ভালো হবে না। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো পর সাধারণ শ্রমিকরা খুশি। কিন্তু তারপরও ভাঙচুর কেন হচ্ছে?

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গার্মেন্টস শ্রমিক নামধারী ৩৬ জন নেতা রয়েছেন। তারা ঢাকায় থাকেন না। ঢাকার বাইরে থাকেন। অনেকে থাকেন বিদেশে। দেশে যখন রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়, তখন মৌমাছির মতো দেশে উড়ে আসেন। এসব নেতাদের তখন দৌড়ঝাঁপ রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়ে যায়। বিদেশি প্রভুদের আদর্শ অনুযায়ী এসব নেতা গার্মেন্টস খাতে সহিংস ঘটনা ঘটানোর জন্য নানা পরিকল্পনা করেন। ঐ সময় পান থেকে চুন খসলেই গার্মেন্টস শিল্পের সাধারণ শ্রমিকদের উসকে দেন। দাবি আদায়ের নামে গার্মেন্টসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ সহিংস ঘটনা শুরু হয়ে যায়। এই সহিংস ঘটনার নেপথ্যে যারা জড়িত, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ৩৬ জনের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে। তাদের বেশির ভাগ বিদেশে থাকেন। আন্তর্জাতিক চক্রান্তের দূত হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। ঐসব নেতা এসব করেন, শ্রমিকদের স্বার্থ আদায়ের নামে কোটি কোটি টাকা বিদেশ থেকে পেয়ে থাকেন। শ্রমিকদের নামে নানা অনুদান এনে তারা আত্মসাৎ করেন—এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। এই সহিংস ঘটনা লাগিয়ে এবার অনেকে বিদেশে চলে গেছেন। তাদের তথ্যও রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকানিদাতাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ঐ ৩৬ জন তালিকাভুক্ত নেতার মধ্যে দুই জন সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। সব রাজনৈতিক দলের নেতাও রয়েছেন। তারা সবাই ষড়যন্ত্রে জড়িত। এই ৩৬ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে বিদেশিদের পক্ষ থেকে নানাভাবে বাধা আসে। 

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, দেশের গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। শ্রমিকনামধারী একশ্রেণির নেতা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত। তারাই সহিংস ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও চলছে। যারা সহিংসতার উসকানি দিচ্ছেন তারা শ্রমিক নন, কিন্তু উসকানি দিয়ে নাশকতা করছেন। এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে গাজীপুরে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। অনেক গার্মেন্টস চালু হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত গাজীপুর মেট্রো এলাকায় ১৮টি গার্মেন্টস বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি অপশক্তি গার্মেন্টস শিল্পকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। তারা কখনো দেশের মঙ্গল চায় না।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় গার্মেন্টস শ্রমিকদের। এবার পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টস খাত অন্য দেশে নিতে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রে শ্রমিক নামধারী ৩৬ জন নেতা রয়েছেন। তারা অনেক টাকার মালিক। বিদেশেও তাদের বাড়ি-গাড়ি রয়েছে। তারা কখনো গার্মেন্টসে কাজ করেননি। তাদের বাবা-দাদারাও গার্মেন্টসে কাজ করেননি। ফেডারেশন খুলে ষড়যন্ত্র করাই তাদের ব্যবসা। তাদের নামের তালিকা শীর্ষ প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে। তাদের অর্থের উৎস এবং বিদেশে কোথায় থাকেন তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত শীর্ষ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *