লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত সোহেলের বাড়িতে শোকের মাতম, জ্ঞান হারিয়ে স্ত্রী হাসপাতালে

Share Now..

ভোলা থেকে ঢাকাগামী এম.ভি সুরভী-৮ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা থেকে ভোলার চরফ্যাশনগামী টিপু-১৪ লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত সোহেলের চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের ওসমান আলী ফরাজী বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্য রাতে চাদপুরের হাইমচর এলাকায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে সোহেল নিহত হোন আরও প্রায় ১০ জন আহত হয়।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সোমবার রাত ৯টায় ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে এমভি সুরভী-৮ লঞ্চটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এদিকে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে সোহেলদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে একমাত্র ছেলে সোহেলকে হারিয়ে বাবা সেলিম ফরাজী এখন নির্বাক। তার দুচোখ বেয়ে এখন শুধু অশ্রু ঝরছে। নতুন কাউকে দেখলেই বলেন আমার বাবা কখন আসবে। মা আকলিমা বেগম ছেলের শোকে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন।
 
সোহেলের চাচা নুরে আলম নুরু মেম্বার জানিয়েছেন সোহেলের শ্বশুর বাড়ি ভোলার ইলিশা ইউনিয়নে। প্রায় পাচ বছর আগে সোহেল বিয়ে করেন। স্ত্রী শাহিনা বেগম ভোলা সদরের মধ্য ইলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সেই সুবাদে সোহেল এবং তার স্ত্রী ভোলাতেই থাকতেন। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়ি চরফ্যাশনের আমিনাবাদে বেড়াতে যেতেন।

প্রতিবেশী মো. তকির জানান, সোহেল এলাকায় এলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলতো। তিনি ছিলেন বিনয়ী এবং সদালাপী। এ কারণে তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী এবং বন্ধুবান্ধবরা তার এমন মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না।

সোহেলের পিতা সেলিম ফরাজী কৃষি কাজ করেন। নিহতের চাচাতো ভাই মাসুদ জানান, সেলিম ফরাজীর এক ছেলে ও দুই ছেলের মধ্যে নিহত সোহেল সবার বড়। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে সোহেল স্থানীয় পশ্চিম কুলছুমবাগ নাজিউর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক এবং ভোলা সদরের পৌর কাঠালি এলাকায় তার নানা সৈয়দ আতাহার উদ্দিন মাষ্টারের কাছে থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ঢাকায় একটি ফুড কোম্পানিতে ম্যানেজার পদে চাকরি করেছিলেন। গত তিন মাস আগে তিনি ঐ চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভোলায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অবস্থান করেছেন। ৮ ডিসেম্বর ভোলায় অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছেন সোহেল।

সোহেলের দুই বোনের মধ্যে হেফি বেগম লালমোহন সরকারি হাসপাতারে নার্সিং পেশায় আছেন। অপর বোন তামান্না চরফ্যাশন সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী। নিহত সোহেলের আফিয়া জাহান নামে দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী এখন সন্তান-সম্ভাবা। মঙ্গলবার লঞ্চ দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে শাহিনা অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুুটা সুস্থ হলে তাকে তার বাবার বাড়ি ভোলা সদরের ইলিশায় নেওয়া হয়। শাাহিনার প্রতিবেশী মীর রনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সোহেলের নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোহেলের নানা সৈয়দ আতাহার উদ্দিন মাস্টার ঢাকায় রওয়ানা হয়ে দুপুরে পৌছেছেন। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার লঞ্চে সোহেলের লাশ ভোলায় নেওয়া হবে। সোহেলর প্রথম জানাজা আজ রাত ১টা ৩০ মিনিটে ভোলা পিটিআই জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। তারপর চরফ্যাশনে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে বুধবার জানাজা শেষে সমাহিত করা হবে।
 
ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব নিহতের লাশ হস্তান্তরসহ সার্বিক বিষয় মনিটরিং করছেন।

955 thoughts on “লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত সোহেলের বাড়িতে শোকের মাতম, জ্ঞান হারিয়ে স্ত্রী হাসপাতালে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *