সত্তরেও ধরে রাখুন ত্বকের তারুণ্য

Share Now..

আমাদের স্বাভাবিক চিন্তাভাবনায় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। চেহারার নমনীয় ভাব থাকে না। তারুণ্যের সেই কোমল ভাবটাও হারিয়ে যায়। কিন্তু বয়স বাড়া মানে কি মুখে বার্ধক্যের ছাপ পড়বেই? এছাড়া অকালেও অনেকের মুখে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে। বার্ধক্যের ছাপ ঠেকাতে কী করবেন?

ঘড়ির কাঁটা ধরে এগোয় সময় আর ভাঁজ পড়তে থাকে কপালে। মুখে ছাপ ফেলে বলিরেখা। পরিবর্তিত জলবায়ু, অতিরিক্ত দূষণ আমাদের ত্বকে ইতোমধ্যেই বেশ প্রভাব ফেলেছে।

কয়েক বছর আগেও চট করে কম বয়সে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা খুব একটা দেখা যেত না। কিন্তু এখন অনেক ক্ষেত্রেই অকালে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যাচ্ছে। তারুণ্য যে শুধু তরুণ বয়সেই থাকে তা নয়। বয়স কেবলই একটি সংখ্যা। মনের সজীবতা বড় জিনিস। নব্বই দশকের নায়িকাদের অনেকেই এখন ধরে রেখেছেন নিজেদের রূপ-লাবণ্য। নিজের তারুণ্যের উজ্জ্বলতায় এখনো জয় করছেন বহু  মানুষের মন। এখনো নিজেদের রূপের সজীবতায় কেড়ে নেন হাজার যুবকের ঘুম। তারুণ্য ধরে রাখার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়িকা রেখা। বয়স সত্তরের কাছাকাছি হলেও ধরে রেখেছেন নিজের তারুণ্য। চেহারায় নেই বলিরেখার কোনো দাগ। উজ্জ্বলতায় হার মানবে বর্তমানের নায়িকারাও। এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার সাজগোজ দেখে মনেই হবে না তিনি সত্তরের কাছাকাছি বয়সের একজন নারী। কিন্তু কীভাবে সম্ভব হয়েছে এই সত্তর ছুঁই ছুঁই বয়সেও তারুণ্য ধরে রাখা? এর পেছনের রাজ কি? দীর্ঘদিন তারুণ্য মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। চলুন জেনে নেই কিছু অভ্যাস যেগুলো আপনাকে তরুণ  রাখবে দীর্ঘদিন সেই সম্পর্কে-

  • পানিজাতীয় ফল খান বেশি করে। আঙুর, তরমুজ, শসা এসব ফল খেতে পারেন।
  • মন খুলে হাসুন। হাসিখুশি থাকলে মন ভালো থাকে। শরীরে বয়সের ছাপ ফেলবে না সহজে।
  • খাদ্যতালিকায় সবুজ ও লাল রঙের খাবার রাখুন। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি ও কে শরীর সুস্থ রাখবে। টমেটো, ক্যাপসিকাম, ব্রকোলিসহ বিভিন্ন শাক ও সবজি খেতে পারেন।
  • খাবার তালিকায় রাখুন তৈলাক্ত মাছ। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন তেলযুক্ত মাছ খেতে পারেন।
  • বলিরেখাহীন ত্বক ও সুস্থ শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পানি শরীর থেকে দূষিত উপাদান বের করে শরীর সুস্থ রাখবে।
  • চিনি বাদ দিয়ে দিন খাদ্যতালিকা থেকে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
  • প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। কোষের তারুণ্য দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারে পর্যাপ্ত প্রোটিন।
  • মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। অহেতুক দুশ্চিন্তা দ্রুত আপনার শরীরে বয়সের ছাপ ফেলে দেবে।
  • অলস জীবন ত্যাগ করে শারীরিক পরিশ্রম করুন। শারীরিক পরিশ্রম দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয় এবং দেহে সঠিক মাত্রায় অক্সিজেনের সরবরাহ করে, যা কোষগুলোকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। সুস্থ থাকতে ও তারুণ্য ধরে রাখতে পরিশ্রম করুন।
  • অধিক তেল-মসলা যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। তেলে ভাজা খাবার, ফাস্টফুড কে না বলতে হবে। কম তেল মশলা দিয়ে খাবার খেতে হবে।

এছাড়াও তারুণ্য ধরে রাখতে আপনাকে গড়ে তুলতে হবে আরও কিছু অভ্যাস। আপনার নিজের অভ্যাসই পারে অকাল বার্ধক্যকে দূরে সরিয়ে রাখতে! জেনে নিন অকালে এই বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে কী করবেন: 

ঘুম
রাত জেগে থাকেন? এমনটা করলে ত্বকে কিন্তু বয়সের ছাপ পড়তে বাধ্য! কারণ ঘুমানোর সময় ত্বকের রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায়, যা ত্বককে বলিরেখার হাত থেকে বাঁচায়। তাই প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কম ঘুমালে মানসিক চাপ, উদ্বেগ বাড়ে। এর ফলে অচিরেই পড়তে পারে বার্ধক্যের ছাপ।

রোদ থেকে সতর্কতা
ত্বকে যদি বয়সের ছাপ তাড়াতাড়ি কেউ ফেলতে পারে, সেটা হচ্ছে রোদ। তাই রোদে বের হলে সঙ্গে রাখুন ছাতা, টুপি, কালো চশমা। সেইসঙ্গে পরুন গা-ঢাকা জামা। আর অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন মাখতে ভুলবেন না। রোদ থাকলে তো বটেই, এমনকি মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন মাখতে ভুলবেন না।

ত্বককে আর্দ্র রাখা
একটা বয়সের পর রোজ নিয়ম মেনে ত্বককে ময়শ্চারাইজ করা জরুরি। কারণ মুখে ময়শ্চারাইজার লাগালে ত্বক অনেক বেশি আর্দ্র আর তরতাজা থাকে। বলিরেখার সমস্যাও কমে। তবে ময়শ্চারাইজার কেনার আগে দেখে নিন তাতে যেন ভিটামিন সি বা ভিটামিন এ থাকে।

পুষ্টিকর খাবার
প্রতিদিন ডায়েটে এমন খাবার রাখুন, যাতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের পরিমাণ বেশি। কারণ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার ত্বককে নমনীয় করে ও অকাল বার্ধক্যের সমস্যাকে সহজেই প্রতিহত করে। ডায়েটে রাখুন বেল পেপার, ব্রকোলি, গাজর ও সবুজ শাক-সবজি। আর রোজ অন্তত বেদানা, ব্লুবেরি, অ্যাভোকাডো জাতীয় যে কোনো ফল খান। দিনের মধ্যে অন্তত একবার গ্রিন টি খেতে পারেন।

মেকআপ
বর্তমানে আমরা সবাই বাইরে বের হলে মুখে হালকা প্রসাধনী মেখে নেই। এই কৃত্রিম প্রসাধনীগুলো আমাদের ত্বকের অনেক ক্ষতি করে। তাই বাইরে থেকে ঘরে আসলেই ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। 

প্রাকৃতিক উপায়
কৃত্রিম উপায় থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। প্রাকৃতিক উপাদানের ফেস প্যাক ব্যবহার করুন সপ্তাহে দুইদিন। মধু, অ্যালোভেরা, বেসন, চন্দন, কলা, পাকা পেঁপে, টক দই, মুলতানি মাটি, মসুর ডাল ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন ত্বকের ধরন অনুযায়ী। ফেস ইয়োগা করুন প্রতিদিন। এছাড়াও মর্নিং ওয়াক, সাইক্লিং বা প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন ত্বক। ত্বকের নমনীয়তা বজায় থাকবে।

চলুন জেনে নেই ত্বকের বলিরেখা দূর করে তারুণ্য ধরে রাখার ঘরোয়া কিছু উপায়: 

  • হলুদে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। হলুদ ও আখের রস দিয়ে তৈরি ফেস মাস্ক মুখে ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের বলিরেখা দূর হয়। এটি সপ্তাহে দু’বার করুন।
  • প্রতিদিন ত্বকে নারকেল তেল ম্যাসাজ করলেও ত্বকে বলিরেখা পড়ে না। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এর বাইরেও আছে অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য, যা ত্বকের বলিরেখা আটকায়। ঘুমানোর আগে ত্বকে নারকেল তেল ম্যাসাজ করলে উপকার পাবেন।
  • দুই টেবিল চা চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং একটি ডিমের সাদা অংশ একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাকটি কপালে বলিরেখায় ব্যবহার করুন। আপনি চাইলে এই প্যাকটি সম্পূর্ণ মুখে ব্যবহার করতে পারেন। ১০-১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন। অ্যালোভেরা জেল এবং ডিমের সাদা অংশ ভিটামিন ই-এর অন্যতম উৎস। তারুণ্য দীপ্ত ত্বকের জন্য ভিটামিন ই অনেক বেশি প্রয়োজন। অ্যালোভেরা জেলের ম্যালিক অ্যাসিড ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। ডিমের সাদা অংশে অ্যালবুমিন ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *