‘একমাত্র মৈমনসিংহ গীতিকার সব কেন্দ্রীয় চরিত্রে নারী’

Share Now..

মৈমনসিংহ গীতিকার সব আখ্যানই ট্রাজিক, আপাত ব্যতিক্রম শুধু ‘কাজলরেখা’। একসময় যাত্রাপালা কিংবা বইয়ের পাতায় উঠে এসেছে এই কল্পকাহিনিটি। বড়দের মুখে এ গল্প কত শতবার শোনা, তারও হিসেব নেই। তবে পর্দায় এর উপস্থিতি ছিল খুবই সামান্য।

২০০৯ সালে ‘মনপুরা’ সিনেমা মুক্তির পর নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ঘোষণা ছিল বেশ উচ্চাভিলাষী!, ‘কাজলরেখা’ বানাবেন তিনি। কিন্তু সেটা হয়নি। সরকারি অনুদানে সে সিনেমার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে সম্প্রতি। এক দশক পর ২০২০ সালে সিনেমা তৈরিতে পাওয়া যায় সরকারি অনুদান। মাঝে বাদ সাধে মহামারি। শেষমেশ চলতি বছরের এপ্রিলে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কাজলরেখার শুটিং শুরু হয়।

কাজলরেখার মন্দিরা

চারশ বছর আগের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনেমা ‘কাজলরেখার’ নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। ছোটবেলা থেকেই একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে বিকশিত হয়েছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। বড় হয়ে ২০১২ সালে চ্যানেল আই আয়োজিত ‘সেরা নাচিয়ে’ প্রতিযোগিতায় নজর কাড়েন সবার, হয়েছিলেন দ্বিতীয় রানার্সআপও। এরপর থেকে নাচের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করছেন তিনি। তবে ‘কাজলরেখা’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি জগতে পা রাখার চেয়ে যেন ভালো কিছু হতেই পারে না! সম্প্রতি ছবিটির টিজার প্রকাশ পেয়েছে। সিনেমাটিতে নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে মন্দিরা বলেন, ‘এ সিনেমায় নিজেকে কাজলরেখা রূপে গড়ে তুলতে আমাকে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। সেলিম ভাইসহ পুরো ইউনিট আমাকে ভীষণ সহযোগিতা করেছেন। আমি ভীষণ আশাবাদী সিনেমাটি নিয়ে।’

৪০০ বছর আগের আবহ ও চরিত্র

প্রায় দুই বছর সময় নিয়ে শুটিং পর্ব চলেছে কাজলরেখা সিনেমার। সিনেমায় যেহেতু ৪০০ বছর আগের গল্প দেখানো হবে। লোকেশনসহ পুরো আবহও করতে হয়েছে সে সময়কার মতো। এর সেট নির্মাণে কাজ করেছেন হাজং, মগ ও চাকমা জাতিগোষ্ঠীর অর্ধ শতাধিক মানুষ। এ সিনেমায় চ্যালেঞ্জিং ছিল চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তোলাও। ‘কাজলরেখা’র মাধ্যমে প্রথমবার নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের নির্দেশনায় কাজ করেছেন অভিনেত্রী মিথিলা। ‘কঙ্কণ দাসী’র খলচরিত্রে তাকে দেখা যাবে এ সিনেমায়। সিনেমায় রাজা হয়েছেন অভিনেতা শরীফুল রাজ। আর খল চরিত্রে কাজ করেছেন রাজার বন্ধু রাজপুত্র খাইরুল বাশার। বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন গাউসুল আলম শাওন। নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, আমরা সমৃদ্ধশালী জাতি ছিলাম সেটা এই ছবিতে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

‘কাজলরেখা’য় গানের সংখ্যা কুড়ি

কাজটি যেহেতু মৈমনসিংহ গীতিকা নিয়ে, এখানে গানে গানে গল্প বলাটাই তো স্বাভাবিক। বড় ক্যানভাসে নির্মিত এই ছবিটিকে নির্মাতা বলছেন মিউজিক্যাল ফিল্ম। কেননা এই ছবিতে প্রায় কুড়িটির মতো গান রয়েছে। তবে ২০২২ সালে কাজলরেখা’র ৩৮-৪০টি গান থাকার খবর চাউর হয়েছিল। ‘কাজলরেখা’ সিনেমার গানগুলো লোকজ সুরেই হচ্ছে বলে জানালেন সংগীত পরিচালক ইমন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত কাজলরেখা আমাদের স্বপ্নের সিনেমা। আমার সুর ও সংগীতে এ সিনেমায় মোট ২৪টি গান আছে।

মৈমনসিংহ গীতিকা প্রকাশের শতবর্ষ ও কাজলরেখা

২০২৪ সালে মৈমনসিংহ গীতিকা প্রকাশের শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। ১৯২৩ সালে দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় মৈমনসিংহ গীতিকা এবং এর ইংরেজি তর্জমা ইস্টার্ন বেঙ্গল ব্যালাডস প্রথম খণ্ড দুটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর পরই এটি দেশি-বিদেশি সাহিত্যিক মহলে আলোড়ন তোলে। মৈমনসিংহ গীতিকার অন্যতম গল্প কাজলরেখা। সিনেমা নির্মাণে এ গল্প বেছে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘ষোড়শ শতাব্দীতে যত গীতি কবিতা লেখা হয়েছে তার সব কেন্দ্রীয় চরিত্র বীর না হলে দেবতা। একমাত্র মৈমনসিংহ গীতিকার সব কেন্দ্রীয় চরিত্রে নারী। আমাদের এ অঞ্চলে মাতৃপ্রধান সমাজ ছিল, এটা তারই আভাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *