পাপনের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ!

Share Now..

ক্রীড়াঙ্গনে নতুন মানুষ নন তিনি। দেশের ক্রিকেট বলতেই তার নাম প্রচারযন্ত্রে ভেসে বেড়াত। ক্রিকেট-ক্রিকেটার-পাপন—এগুলো যেন সমার্থক শব্দে পরিণত ছিল এতটা দিন। আজ থেকে নতুন পরিচয়ে আসনে বসতে যাচ্ছেন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। মন্ত্রী হওয়ার আগেই তিনি বিভিন্নভাবে বলে আসছিলেন বিসিবির দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। দায়িত্ব ছাড়ার কথা এমন এক সময়ে বলতে শুরু করেছিলেন, যখন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভরাডুবি হয়েছে।

বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের সমালোচনা যতটা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি কথা উঠেছিল সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে। সমালোচিত হয়েছেন বোর্ড সভাপতি পাপন। সমালোচনার তির ছোড়া হয়েছিল তার দিকে। বোর্ড পরিচালনার মধ্যেই পাপন এখন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। ক্রিকেট একটি খেলা, আরও অর্ধশতাধিক খেলার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। পাপনের জন্য কঠিন হতে পারে কি না, সেটি একটি প্রশ্ন। কারণ এখানে খেলার সংখ্যা বেশি, সংগঠনের সংখ্যাও বেশি। আরও খেলোয়াড় বেশি, তার চেয়েও বেশি  সংগঠক, আরও বেশি আলোচনা-সমালোচনা। পাপন কীভাবে দেশের ক্রীড়াঙ্গন এগিয়ে নিয়ে যাবেন, তা একটি প্রশ্ন। আগে ক্রীড়াঙ্গনের বাইরের মানুষদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। 

এবার খোদ ক্রীড়াঙ্গনের মানুষকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি শুধু আবাহনীর পরিচালকই নন, দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে সভাপতির চেয়ারে বসে ছিলেন টানা এক দশক। আজ সকালে তিনি সচিবালয়ের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে প্রথম অফিস করবেন। দুপুরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে যাবেন। ক্রীড়ামন্ত্রী একই সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেরও চেয়ারম্যান।

পাপন দেশের ক্রীড়ামন্ত্রীই শুধু নন, তিনি দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ প্রয়াত জিল্লুর রহমান-আইভী রহমানের সন্তান। পাপন ক্রিকেটে কতটা সফল, সেটা নিয়ে কথা থাকতে পারে। কিন্তু পাপন এখন পুরো দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক। তার ওপর দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ভাগ্য নির্ভর করছে। কঠিন পরীক্ষায় পাপন উতরে যাবেন কি না, তা এখনই বলা যাবে না। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

পাপন এরই মধ্যে জানিয়েছেন, তিনি খেলাগুলোকে অগ্রাধীকার দিতে চান। কোন খেলায় কী সম্ভাবনা রয়েছে, তা নিয়ে কথা বলতে চান। কোন খেলায় আগে স্পন্সর ছিল, এখন কেন আসছে না—সবকিছুই তিনি আমলে নিতে চান।    

পাপন ক্রীড়ামন্ত্রী হওয়ার পর ক্রীড়াঙ্গনের মানুষের কাছে চাওয়া, তিনি যেন ব্র্যাকেটবন্দি না হয়ে পড়েন। ক্রীড়াঙ্গনের কিছু মানুষ আছেন, যারা প্রত্যেক ক্রীড়ামন্ত্রীকে পরক্ষোভাবে পরিচালনা করতেন। সেই মানুষগুলো দলীয় প্রতীকের পরিচয়ে কাছাকাছি চলে এসেছেন। এখনো তারা প্রস্তুতি রেখেছেন পাপনের গুণগান গাইবেন বলে। অনেক ধরনের কুটিলতা-জটিলতা দেখতে হবে। বাইরে থেকে ক্রীড়াঙ্গনকে যতটা সহজ মনে হয়, সাংগঠনিক পর্যায়ে ভেতরটা অনেক বেশি জটিল। 

সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা কামরুন নাহার ডানা জানিয়েছেন, তিনি একটি সুন্দর ক্রীড়াঙ্গন চান। তিনি চান প্রকৃত ক্রীড়ামনস্কদের দ্বারা ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হোক।’ ডানা বলেছেন, ‘গুণগত পরিবর্তন দরকার। জেলা, বিভাগ ও ঢাকার ফেডারেশন পরিচালনায় কারা কীভাবে আসবেন, কীভাবে পরিচালিত হবে—এসব অনেক কিছুই নতুন করে আলোচনায় থাকা দরকার।’ 

ডানা দাবি করেন, ‘একটা ফেডারেশন পরিচালনায় অন্তত নিজ নিজ খেলার সাবেক খেলোয়াড়দের অগ্রাধীকার থাকা উচিত। সংখ্যাটা হতে পারে পাঁচ জন। সেটা হোক পুরুষ কিংবা নারী ক্রীড়াবিদ। বিশেষ করে বলব, যারা ঐ খেলা উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন, তাদের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্তারাও এই পরিকল্পনায় আসবেন। আমার কথা কী, রাষ্ট্র পুরস্কার দিচ্ছে আর পুরস্কার নিয়ে তিনি ঘরে বসে থাকলেন, তাতে দেশের কী লাভ হলো? পুরস্কার দিয়েছে কি ঘরে বসিয়ে রাখার জন্য। তাদের ফেডারেশনে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। আমি জানি উনি (পাপন) এই ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ, তাই ওনার পক্ষে এটি করা সম্ভব। উনি জানেন, কে কী করেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *