‘নির্মাতা কাজী হায়াতের কথা আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে’
ছবির নাম ‘অপারেশন জ্যাকপট’। মুক্তিযুদ্ধের সময় অপারেশন জ্যাকপট নামের এক অভিযানে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে একযোগে গেরিলা অপারেশন চালানো হয়েছিল। সেই অভিযানে পাকিস্তান ও অন্য আরো কয়েকটি দেশ থেকে অস্ত্র, খাদ্য ও তেল নিয়ে আসা ২৬টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
সেই ঘটনা নিয়ে বিশাল বাজেটে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ছবিটির বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন ছবিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান স্বপন চৌধুরী। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন তানভীর তারেক
সিনেমাটি নিয়ে নানান কৌতূহলী, মন্তব্যে ছেয়ে গেছে পুরো সোশ্যাল মিডিয়া। ইতিবাচক, নেতিবাচক দুই ধরনের কথাই আসছে। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
একটা বড় মাপের কাজ করলে, আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। আর কাজটা কত বড় মাপের তা এখানে যারা কাজ করছেন, যারা দেখছেন, তারা জানেন।
ছবিটি নিয়ে গিয়াসউদ্দিন সেলিম দীর্ঘদিন গবেষণা করেছিলেন। তিনি এই গবেষণার জন্য টাকাও পেয়েছেন। দীর্ঘ কয়েক বছর গবেষণার পর আবার নতুনভাবে আপনার প্রোডাকশন কাজটি পাওয়ায় নানান কথা উঠছে—
দেখুন, এটি পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। আমি সেলিম ভাইয়ের কয়েকটা ইন্টারভিউ দেখেছি। তিনি এদেশের খুব উঁচু মানের নির্মাতা। এখন তাকে কেন কাজটি ফাইনালি দেয়া হয়নি, সেটা তো আমি বলতে পারবো না। তবে আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি—তিনি আমাদের কাজটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তেমনি আমাদের প্রত্যেকেরই স্ব-স্ব কাজে সাধুবাদ জানানোটা জরুরি। কারণ ইন্ডাস্ট্রিটা একেবারেই ছোট। সেক্ষেত্রে একে অপরকে সাপোর্ট দিয়েই আমাদের নিজেদের ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
অনেকেই একটি বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। তা হলো—স্বপন চৌধুরীর তো সিনেমার কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। তিনি কীভাবে এত বড় একটি প্রজেক্ট সামলাবেন।
এটা খুবই হাস্যকর কথা। এই শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির এমন কোনো কিছুই বাদ নেই যেখানে আমি কাজ করিনি। আর আমার দায়িত্ব টোটাল কো-অর্ডিনেশন অর্থাত্ প্রযোজনা। সেক্ষেত্রে এধরনের দায়িত্বে ২ যুগের বেশি সময় ধরে দেশ-বিদেশের শিল্পীদের নিয়ে কাজ করে আসছি। তাই বিষয়টি তারাই বলছেন, যারা আমার প্রতি ঈর্ষাকাতর।
এত বড় ক্যানভাসে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবিটি খুব বেশি রিসার্চ না করেই নাকি শুরু করেছেন আপনারা। যেমন শুরুর দিকে অনন্ত জলিলের লুক, হেয়ার নিয়ে তুমুল সমালোচনা ছিল—
এটির এখনো শুটিংই শেষ হয়নি। আমাদের ছবিটি রিলিজ হতে দেন। তারপর না হয় কথা বলুন। আমার মতে আমাদের নিজেদের ভেতরে অস্থিরতাটা কমাতে হবে। শুরুতেই আমরা কোনো কিছুর গভীরে না যেয়েই মন্তব্য করতে থাকি। এটা ঠিক না। যেকোনো কিছু নিয়ে মন্তব্য করার আগে জরুরি তা নিয়ে অবজার্ভ করা। আর আমার এ যাবত কোনো কাজ হয়নি, যা নিয়ে মানহীনতার প্রশ্ন এসেছে। তাই এটা নিয়েও আমরা গর্ব করবো।
এই ছবিতে কোন বিষয়টি আপনার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে?
সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হলো—এই প্রথম দেশীয় কোনো ছবিতে ৮০ জন তারকা কাজ করছেন। এবং তারা বিভিন্ন মাধ্যমের তারকা। সাথে অন্যান্য শিল্পী ও কলাকুশলী তো রয়েছেই।
কার এপ্রিশিয়েশন আপনাকে খুব অনুপ্রেরণা দিলো?
নির্মাতা কাজী হায়াতের কথা আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। আমার ছবিতে বরেণ্য নির্মাতা কাজী হায়াত্ অভিনয় করেছেন। তার অভিনয়সত্তার চেয়েও বড় পরিচালক সত্তা। সেই মানুষটি আমাদের সেটে এসে চমকে গেলেন। বললেন,‘ কীভাবে তুমি এই মরা ইন্ডাস্ট্রিকে আবার সচল করে দিলে!’ এরচেয়ে বড় উত্সাহ আর কী হতে পারে!
আপনার ছবিতে নির্মাতা হিসেবে দেলওয়ার জাহান ঝন্টু কাজ করছেন। এত সিনিয়র একজন নির্মাতার সাথে কলকাতার নির্মাতা রাজীবকে কেন প্রয়োজন পড়ল—সেটিও অনেকের প্রশ্ন। এছাড়া বরেণ্য নির্মাতা দেলওয়ার জাহান ঝন্টুর সর্বশেষ ছবিটি নিয়েও অনেক রকম ট্রল হয়েছে। এ নিয়ে আপনার বক্তব্য শুনতে চাই—
একজন চিত্রনাট্যকার বা নির্মাতা হিসেবে দেলওয়ার জাহান ঝন্টুকে আপনি ফেলে দিতে পারবেন না। একসময় রাজ্জাক শাবানা তার ছবিতে কাজ করার জন্য আশায় থাকত। সেই মানুষটি হয়তো এখনকার টেকনিক্যাল পয়েন্টে আপডেট না। কিন্তু সিনেমার অভিজ্ঞতায় তো তিনি অনন্য উচ্চতায়। আমরা আসলে সিনিয়রদের অভিজ্ঞতাকে শ্রদ্ধায় রেখে কাজে লাগাতে জানি না। সে কারণেই রাজীবকে নিয়ে এই কলাবোরেশন। যা পর্দায় মানুষ টের পাবে। আমি শেষে এটুকুই বলি- এদেশে সবচেয়ে বড় ইভেন্ট আমি করেছি। সর্বশেষ দেশ-মুক্তিযুদ্ধ-বঙ্গবন্ধু নিয়ে ড্রোন শো এই উপমহাদেশের সেরা ছিল। তাই আমি যখন যা করেছি, তা সেরা হয়েছে। এই ছবিটিও হবে। আপনারা দোয়া রাখবেন। আস্থা রাখবেন।