সেই নেপালকে হারিয়ে শুরু বাংলাদেশের

Share Now..

কমলাপুর স্টেডিয়ামের এই টার্ফেই গত ৯ ফেব্রুয়ারি অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে গতকাল এই টুর্নামেন্টে নিজেদের ম্যাচে বাংলাদেশ ৩-১ গোলে হারিয়েছে নেপালকে। নেপালকে হারিয়ে শুরু করল বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। আগের ম্যাচে ৩ গোল করে বাংলাদেশ। সেবার প্রথমার্ধের শেষ ৫ মিনিটে দুই গোল করে।  

এবারও শেষ ৫ মিনিটে দুই গোল পায় বাংলাদেশ। প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দল। নেপালের দুই ভুল কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। যে দুটি ভুলের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল, সেই দুটি ভুল ছিল নেপালের গোলরক্ষক সুজাতা তামাংয়ের। গোলরক্ষক সুজাতা তামাং গোলকিক করেন বল গিয়ে পড়ে বাংলাদেশের স্বপ্না রানীর মাথায়। স্বপ্না বলটাকে পাল্টা হেড করে বক্সের ভেতরে ফেলেন সাগরিকার পায়ে। নেপালের দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে গোলরক্ষক সুজাতা তামাংকে কাটিয়ে গোল করেন সাগরিকা ১-০।

৪০ মিনিটের এই গোলের পরই ৪২ মিনিটে দ্বিতীয় গোল পায় বাংলাদেশ। এবারও সেই গোলরক্ষক সুজাতা তামাংয়ের ভুলের সুযোগে। বক্সের ভেতরে বল রেখে নিজেদের ডিফেন্ডারকে পাস দেন। দুর্বল গতির বলটাকে ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় মুনকি আক্তার ২-০। গোল সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ পেতে পারতো বাংলাদেশ। বিরতিতে যাবার আগে পেনাল্টি পেয়েছিল। নেপালের সিমরান বাংলাদেশের সাগরিকাকে ফেলে দিলে রেফারি কনিকা বর্মন পেনাল্টির নির্দেশ দেন। কিন্তু অধিনায়ক আফিঈদা খন্দকার গোল করতে পারেনি। তার শট পোষ্টে লেগে ফিরে আসলেন আবার সুযোগ পায় বাংলাদেশ, এবার সাগরিকা শট করলে সেটি ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক সুজাতা তামাং। আফসোস করেনি কমলাপুর স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসা শপাঁচেক দর্শক। 

বিরতির পর মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে নেপালের গোলরক্ষক সুজাতা তামাংকে তুলে নেন কোচ বাল গোপাল সাহু। নতুন গোলরক্ষক লিলা জোসি মাঠে নেমেও বাংলাদেশের আক্রমণের স্রোত থামাতে পারেননি। এরই মধ্যে স্রোতের বিপরিতে গোল হজম করে বাংলাদেশ। সুকরিয়া মিয়া বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডারের মাঝখানে বল পান। বিপদ দেখে বাংলাদেশের গোলরক্ষক স্বর্ণা রাণী মন্ডল দৌড়ে আসেন, কিন্তু তিনি দোটানায় ছিলেন। বলের কাছে পৌছাতেই নেপালের সুকরিয়া বলটাকে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে জালে ফেলেন, ১-২। স্টেডিয়াম চুপ। 

পাল্টা আক্রমণে গোল করে বাংলাদেশ। আবার সেই সাগরিকা দুর্দান্ত একটি গোল করেন। সাগরিকাকে থামার জন্য নেপালের ডিফেন্ডার ফেলে দিয়েছেন। বদলী গোলরক্ষক লিলা জোসি মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েও সাগরিকাকে ঠেকাতে পারেননি। বল জায়ে ঠেলেন সাগরিকা, ৩-১। খেলা শেষে নেপালের কোচ বাল গোপাল জানিয়ে গেলেন বুলের সুযোগ নিয়ে জয় পেলো বাংলাদেশ। আগামীকাল ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় খেলা।

ভুটানের গলায় ১০ গোলের মালা

ভুটানের নারী ফুটবলারদের গায়ের রং ফর্সা। খেলোয়াড়দের গায়ে ছিল সাদা রঙের জার্সি, সাদা রঙের প্যান্ট এবং সাদা রঙের মোজা। সবই উন্নত মানের। সবুজ রঙের টার্ফে খেলছিলেন, দেখতেও সুন্দর লাগছিল। ভুটানিজ ফুটবলাররা অদম্য। শারীরিক শক্তি আছে। তার পরও ভারতের নারী ফুটবলারদের চেয়ে ভুটান যেন অনেকটাই পিছিয়ে। বিশেষ করে মানসিকভাবে অনেক পিছিয়ে থাকেন ভুটানিজরা। এক দুইটা ভালো পাস খেললেও তৃতীয় পাসটা হয় ভুল। কোনো রকমে ভারতের বক্স পর্যন্ত গেলেও ওখানেই থেমে যায় ভুটানের ফুটবল আক্রমণ। 

ভুটানকে নিয়ে ভারতের গোলরক্ষক আনিকা দেবীকে টেনশন করতে হয়নি। বরং গোলপোস্ট ছেড়ে বক্সের বাইরে এসেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। কারণ ভুটান সেভাবে আক্রমণই করতে পারেনি। ভারতের গোলরক্ষকে কঠিন পরীক্ষাও দিতে হয়নি। সহজ ম্যাচ, ভারত জিতেছে ১০-০ গোলে। ভুটান যেভাবে গোল হজম করেছে, যেন অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। ১০ গোলের ভাগ যদি করা হয় তাহলে ৯ দশে ৯০। ৯০ মিনিটে ১০ গোল। প্রতি ৯ মিনিটে ১ গোল। হ্যাটট্রিক হয়েছে, দুটি। প্রথমার্ধে ৪-০, দ্বিতীয়ার্ধে আরও ৫ গোল। গোলের মালা পরেছে ভুটান। একাধিক গোল মিস করেও ৪ গোল করেছেন পুঁজা, শিবানী দেবী ৩, সুলঞ্জনা রাউল, মেনেকা লরেমবাম এবং আরিনা দেবী ১টি করে গোল করেন। 

অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে এটাই বড় জয় নয়। এর আগে বাংলাদেশ ১২-০ গোলে জিতেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেখানেও দুটি হ্যাটট্টিক ছিল। গতকাল বিকালে কমলাপুর স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া প্রথম খেলায় ভুটানের হারের পর সংবাদ সম্মেলনে কোচ তানকা মায়া ঘালি সংবাদ সম্মেলনে এসে গোমড়া মুখে বসেছিলেন। দল ১০ গোলে হেরেছে কথা বলার যেন মুখ নেই। নিচু স্বরে কথা বললেন, ‘আমি তো আগেই বলেছি আমরা শিখছি। আমরা উন্নতির পথে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ১০ গোল নিয়ে ভাবছি না। স্কোর কোনো ব্যাপার না। আমরা খেলার স্পিরিড নিয়ে ভাবছি। ভবিষ্যৎ দল গড়ার ব্যাপার নিয়ে ভাবছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *