শান্ত-লিটনের এ কী অবস্থা!

Share Now..

বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। যে হাওয়ায় ছিটকে গেছেন দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশার সুমন। যে হাওয়ায় ক্রিকেটে এসেছে নতুন নেতৃত্ব। এই নেতৃত্বের জায়গা নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যার কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে, তিনি কতটা যোগ্য সেই প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি আছে ভবিষ্যতের নতুন দিগন্ত খোলার আহ্বান।

ক্রিকেট অনুসারীদের মোটামুটি সবাই জানেন সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে তার নেতৃত্বেই খেলবে, সেটি পরিষ্কার। কারণ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, এই বছরের জন্য শান্তকে করা হয়েছে অধিনায়ক।

রাজনৈতিক ব্যস্ততা ও চোখের সমস্যায় সাকিব আল হাসান কতটা সময় জাতীয় দলে থাকতে পারবেন, সেই সংশয়ের কথা পাপন নিজেই বলেছেন। তাই সাকিবকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শান্তকে। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, নেতৃত্বের দৌড়ে কি শুধু শান্তই ছিলেন? এই জায়গায় চলে আসে লিটন দাসের নাম। কারণ বিসিবির একটি পক্ষ নাকি লিটনকেই অধিনায়ক হিসেবে চেয়েছিল। আবারও এ-ও শোনা যায়, ‘ভবিষ্যতের অধিনায়ক’ ভাবনা থেকেই শান্তকে দীর্ঘদিন টেনে আসছে বিসিবি।

লিটনকে যে অধিনায়ক হিসেবে বিসিবি পেতে চেয়েছিল, তার প্রমাণ ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজে তার নেতৃত্ব। এর আগে তামিম ইকবাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে যে সিরিজ থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেখানেও আপৎকালীন অধিনায়কের দায়িত্ব সামলেছেন লিটন। তবে গুঞ্জন আছে, লিটন নাকি নেতৃত্বে আগ্রহী নন। সেকারণেই হয়তো শান্তকে যোগ্য মনে করেছে বিসিবি।

নেতৃত্বের যোগ্যতার প্রমাণ কিছুটা দিয়েছেন শান্ত। সাকিবের অনুপস্থিতিতে বিশ্বকাপ কিংবা নিউজিল্যান্ড সিরিজে অধিনায়ক হয়েছিলেন তিনি। এবার পূর্ণকালীন দায়িত্বে কী করতে পারবেন, সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু অধিনায়ক হলেও তো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দরকার। সেই জায়গায় শান্তর অবস্থান কোথায়? ‘নেতৃত্ব নিতে না চাওয়া’ লিটনই-বা কেমন করছেন? দুজনের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে চোখ দিলে কেবলই হতাশার ছবি!

২০২৪ সাল, ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপের বছর। সামনের জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসবে কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসর। সেই হিসাবে এবারের বিপিএল ছিল নিজেকে যোগ্য প্রমাণের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। কিন্তু শান্ত-লিটন যেন এখানে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন।

এবারের বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক লিটন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ তার। দলীয় পারফরম্যান্সে এবারও উজ্জ্বল কুমিল্লা। তবে অধিনায়কের ব্যাটে রান নেই। কুমিল্লার খেলা ৯ ম্যাচের সবক’টিতে লিটন খেলেছেন। দুটো ইনিংস বাদ দিলে শুধু ব্যর্থতাই ঘুরেফিরে। টানা পাঁচ ম্যাচ হতাশায় কাটানোর পর খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে রানে ফিরেছিলেন। ৩০ বলে ৪৫ রানের ইনিংসে নতুন ফেরার বার্তাই যেন দিয়েছিলেন এই্ উইকেটকিপার ব্যাটার।

কিন্তু পরের ম্যাচে আবারও পুরনো চিত্র। ৮ রানে বিদায়। যদিও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে স্বরূপে ফিরেছিলেন তিনি। ৩১ বলে খেলেন ঝড়ো ৬০ রানের ইনিংস। এই বুঝি লিটন ফিরলেন আলো ছড়িয়ে! নিভে যেতেও সময় লাগেনি। সবশেষ খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে আউ্ট হয়েছেন মাত্র ২ রানে।

লিটনকে বিবেচনা করা হয় বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকের বিচারে, টেকনিক্যালি ‘বাংলাদেশের সেরা’। কিন্তু বিপিএলের পরিসংখ্যানে শুধু ব্যর্থতার কথাই লেখা আছে। এবারের আসরে ৯ ম্যাচে তার রান ১৫২। হাফসেঞ্চুরি একটি, গড় মাত্র ১৬.৮৮। ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা ২০-এও নেই লিটন!

অবশ্য শান্তর প্রসঙ্গ টানলে লিটনের খুশিই হওয়ার কথা! কারণ বাংলাদেশের নতুন অধিনায়কের অবস্থা আরও শোচনীয়। লিটন অধিনায়ক, চাপের ভার পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু শান্ত তো এবারের বিপিএলে নেতৃত্বে নেই। সিলেট স্ট্রাইকার্সে খেলছেন শুধু খেলোয়াড়ের ভূমিকায়। তারপরও রান নেই তার।

২০২৪ বিপিএলের শুরুটা ভালোই হয়েছিল শান্তর। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে করেছিলেন ৩৬। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে তার করা ১৪ রানও ভালো স্কোর মনে হবে যখন জানবেন পরের ম্যাচগুলোতে তার ইনিংসগুলো এমন-৫, ৫, ৯, ৩ ও ১! মোবাইল ডিজিটের এই স্কোরগুলো আর বাড়েনি দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৩৩ রানের ইনিংস খেললে। এবারের বিপিএলে শান্তর ব্যাটে এটিই সর্বোচ্চ।

টানা ব্যর্থতায় এই রানও অনুপ্রেরণার হতে পারতো শান্তর জন্য। কিন্তু হয়নি তা। কারণ সবশেষ ম্যাচে আউট হয়েছেন ১৮ রানে। ফলে বাংলাদেশ দলের নতুন অধিনায়ক ও অন্যতম সেরা ব্যাটার কোনোমতে আছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার ৩০-এর ঘরে। ৯ ম্যাচে তার রান ১২৪, গড় মাত্র ১৩.৭৭।

এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা ৩০ ব্যাটারের মধ্যে সর্বনিম্ন গড় শান্তর। এরপরই লিটনের ১৬.৮৮। তাদের তুলনায় অর্ধেক ম্যাচ কম খেলে বেশি রান করেছেন উইল জ্যাক (৪ ম্যাচে ১৫৭ রান) ও টম ব্রুস (৫ ম্যাচে ১৫৩ রান)। বাংলাদেশের ইমরুস কায়েসও তো দুর্দান্ত। শান্তর চেয়ে অর্ধেকেরও কম  ম্যাচ খেলে বেশি রান করেছেন তিনি।

কুমিল্লার এই ক্রিকেটার ৪ ম্যাচে করেছেন ১৪৯ রান। কুমিল্লা সতীর্থ লিটনের চেয়ে মাত্র ৩ রান কম! বিপিএলে আরও কয়েকটি ম্যাচ বাকি আছে। সামনের ম্যাচগুলোতে কি ব্যর্থতা ঝেরে উঠতে পারবেন লিটন-শান্ত?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *