চুয়াডাঙ্গায় শীতে পাওয়া যাচ্ছে পাঁকা কাঁঠাল; চারা কিনতে দর্শনার্থীদের ভীড়

Share Now..

\ চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি \
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সজল আহমেদ বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে তুলেছেন ভিয়েতনামের বারোমাসি কাঁঠাল বাগান। সরকারি প্রণোদনার সুবিধা পেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে কাঁঠাল বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষায় কাঁঠাল পাওয়া গেলও সজলের বাগানে শীতেও পাঁকা কাঁঠাল পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে কাঁচা-পাকা ফলে ভরা তার বাগানের কাঁঠাল গাছ গুলো। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় নতুন জাতের এই কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাজারে। তাই তিনি এই চাষে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
জানাগেছে, জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা জীবননগরের মনোহরপুর ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের মো. আব্দুল আলীমের ছেলে কৃষি উদ্যোক্তা সজল আহমেদ। বাণিজ্যিক ভাবে ভিয়েতনামের বারোমাসি জাতের কাঁঠাল বাগান করেন ২০১৮ সালে। ভারতের বিপুল মজুমদার নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি এ জাতের চারা সংগ্রহ করেন। চারাগুলো বাগানে লাগানোর ছয় মাস থেকে অল্প পরিমাণে ফল আসা শুরু করে। আর ৪ বছর বয়স হলেই প্রতিটি গাছে পরিপূর্ণ মাত্রায় ফল ধরে। বর্তমানে বাগানের প্রত্যেকটি গাছে কাঁচা-পাকা প্রচুর কাঁঠাল রয়েছে। বাগানের নার্সারিতে প্রতিদিন বারোমাসি কাঠালের চারা কিনতে দর্শনার্থীদের ভীড় করছে।
কৃষি উদ্যোক্তা মো. সজল আহম্মেদ জানান, বছরের প্রথম থেকে গাছে ফল আসলেও ফল বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয় মার্চ মাস থেকে। এই জাতের কাঁঠালের গায়ের রঙ কাঁচায় গাঢ় সবুজ। আর পাকলে ভিতরের রঙ গাঢ় হলুদ। কাঁঠাল খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু এবং সুগন্ধি যুক্ত হয়। অন্যান্য কাঁঠালের তুলনায় এ জাতের কাঁঠালে আঠা কম হয়। উৎপাদন খরচও তুলনামূলক কম। নিয়মিত পরিচর্যা, আর জৈব সার ব্যবহার করলেই হয়।
সজল আরোও বলেন, এ ধরনের বাগান বাংলাদেশেই খুবই কম। এ জাতের কাঁঠালে তেমন কোনো খরচ নেই। চারাও বেশ চাহিদা রয়েছে। নার্সারিতে প্রতিদিন লোকজন আসছে কেনার জন্য। তিনি ৭ বিঘা জমি থেকে চাষ শুরু করলেও বর্তমান ১২০ বিঘা জমিতে তার কমলা, ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারাসহ মিশ্র বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ রয়েছে।
তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, এতো জমিতে চাষ করা সত্তে¡ও সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি তিনি। অথচ যারা নাম মাত্র চাষ করেন, তারা সরকারি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। যদি সরকারিভাবে প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে বেকার সমস্যা দূর করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে ফল রপ্তানি করা সম্ভব।
সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা গেছে, ১০ থেকে ১২ ফুট দীর্ঘ গাছগুলোর গোড়ার মাটি থেকে থোকায় থোকায় কাঁঠাল ধরে আছে। কাঁঠালের ওজনে গাছ যেন ভেঙে না যায়,সেজন্যে বাঁশের খুঁটি গেড়ে গাছগুলো বেধেঁ দেওয়া হয়েছে। পানি ও সার দেওয়া হয় নিয়মিত। প্রতিটি গাছ প্রায় ৫০-৬০টি কাঁঠাল ধরেছে। গড় ওজন প্রায় ৫-৬ কেজি। প্রতি পিচ কাঁঠাল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা দরে। অসময়ে পাকায় এই কাঁঠালের দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
দর্শনার্থী পার্শ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের ফয়সাল আহম্মেদ কাঁঠাল বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেন, এই সময় পাকা কাঁঠাল পাওয়া যায় এটা আমি প্রথম দেখলাম। কাঁঠাল খেতেও অনেক স্বাদ এবং গন্ধ অনেক সুন্দর। তবে দেশী কাঁঠালের যে পরিমাণ আঠা থাকে এতে অত আঠা নেই। কৃষি বিভাগ থেকে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণসহ প্রণোদনা দেওয়া হলে একদিকে যেমন বেকার সমস্যা দূর হবে। অন্যদিকে দেশের ফলের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলে মনে করেন বেকার যুবকরা।
মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খাঁন বলেন, আমি মনে করি, কৃষি বিভাগের এসব তরুণ উদ্যোক্তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো দরকার। সরকার অনেককেই ভর্তুকি দিচ্ছে। সে রকম এদেরকে ভর্তুকি বা ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করা দরকার। বেকার যুবকরা আর্থিক লাভবানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে।
জীবননগর কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, কৃষি উদ্যোক্তা সজলের বাগানে সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়। সজল একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। বাজারে বারোমাসি কাঁঠালের চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সাহায্য সহযোগীতা করা হবে।

7 thoughts on “চুয়াডাঙ্গায় শীতে পাওয়া যাচ্ছে পাঁকা কাঁঠাল; চারা কিনতে দর্শনার্থীদের ভীড়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *