হাথুরুসিংহের আলোয় জ্বলছেন সৌম্য
এভাবেও ফিরে আসা যায়। খারাপ সময় কাটিয়ে আবারও জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ হয়ে উঠলেন ওপেনার সৌম্য সরকার। তবে এই টাইগার ক্রিকেটারের ফিরে আসার গল্পের সবচেয়ে বড় নায়ক হয়তো শ্রীলঙ্কান মাস্টারমাইন্ড ও দলের প্রধান কোচ চাণ্ডিকা হাথুরুসিংহে।
ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে সফরকারীদের বিপক্ষে মাত্র তিন রানে হারে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচে ২২ গজে আস্তে আস্তে নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় যখন লঙ্কানরা, তখন সৌম্য সরকারের হাতে বল তুলে দেন টাইগার ক্রিকেটের নয়া অধিনায়ক শান্ত। সৌম্যও আস্থার প্রতিদান দেন ভালোভাবেই। উইকেট তুলে চাপে ফেলেন লায়নদের। ২২ বল খেলে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকা লঙ্কান উইকেটরক্ষক ব্যাটার কুশাল মেন্ডিসকে গুড লেন্থে স্লোয়ার বলে বোকা বানিয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দিতে বাধ্য করেন। বল হাতে দলের জন্য অবদান রাখার পর ব্যাট হাতে দলের জয়ে রাখেন বড় অবদান। ওপেনিংয়ে লিটন দাসের সঙ্গে জুটি গড়েন ৬৮ রানের। সেই সঙ্গে ২২ বল খেলে ৫টি চারে সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে গুরুত্বপূর্ণ ২৬ রান। তবে হারিয়ে যাওয়া সৌম্য সরকারের জাতীয় দলে এই প্রত্যাবর্তনের পেছনের মূল কান্ডারি হয়তো কোচ হাথুরুসিংহে।
২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হওয়ার পর ২০১৫ সালের এপ্রিলে ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল সৌম্য সরকারের। সেই সময় বাংলাদেশ জাতীয় দলে প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছিলেন লঙ্কান হেডমাস্টার হাথুরুসিংহে। এই লঙ্কান কোচের অধীনে ভয়-ডরহীনভাবে ক্রিকেট খেলে এবং ধারাবাহিকভাবে ব্যাট হাতে ঝলক দেখিয়ে জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেন সৌম্য। সেইসঙ্গে জানান দেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাট হাতে নিজের সামর্থ্যের কথা। হাথুরু বাংলাদেশ দলের দায়িত্বে থাকাকালীন সৌম্য সরকার মোট ৩২টি ওয়ানডে এবং ২৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন। সেইসব ম্যাচে এক দিনের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ৯৫৯ রান করার পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতে করেন ৫২৭ রান।
তবে ২০১৭ সালে হাথুরুসিংহে প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকেন জাতীয় দলের এই ওপেনার। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাট হাতে রান না পাওয়ার কারণে জায়গা হারিয়েছেন জাতীয় দল থেকে। শুধু জাতীয় দল থেকে নয়, ধারাবাহিক ব্যথর্তার কারণে বিপিএল এমনকি ঘরোয়া টুর্নামেন্টেও মাঝেমধ্যে সাইডবেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছে এই হার্ডহিটার ব্যাটারকে। তবে ২০২৩ সালে দ্বিতীয় বার বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর সৌম্যকে খুঁজেন হাথুরু। চেষ্টা করেন প্রিয় ছাত্রকে ২২ গজে প্রতিষ্ঠিত করতে, চেষ্টা করেন সৌম্য নিজেও। শিষ্যকে আবারও যুক্ত করেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। তবে অফফর্মে থাকা সৌম্যকে কেন সুযোগ দিচ্ছেন হাথুরু, সেটি নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি ক্রিকেট মহলে। সৌম্য আস্থার প্রতিদান হিসেবে গেল বছর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে খেলেন ১৬৯ রানের এক কালজয়ী এই ইনিংস। শুধু বাংলাদেশ না, এশিয়ার ক্রিকেটারদের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখন এই ক্রিকেটারের দখলে। সেইসঙ্গে সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলের দশম আসরেও ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন এই ক্রিকেটার। যেখানে তিনি ব্যাট হাতে করেন ২৬২ রান, এর মধ্যে একটি ৭৫ রানের ইনিংসও ছিল। পুরো টুর্নামেন্টে উপহার দিয়েছেন ১৩টি ছক্কা ও ২৫টি চার। আর শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতে আসরটি শেষ করেছে তার দল। এবার ওপনিংয়ে নিয়মিত হতে পারলে বাংলাদেশেরও স্বস্তি মিলবে, এমনটি বললে নিশ্চয়ই অত্যুক্তি করা হবে না। তবে দিনশেষে মাঠের পারফরম্যান্সেই বলে দেবে সফলতা-ব্যর্থতার কথা।