রাশিয়ার তেল শোধনাগারে ব্যাপক ড্রোন হামলা ইউক্রেনের

Share Now..

রাশিয়ার তেল শোধনাগারগুলোতে দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। গত কয়েক মাসের মধ্যে এটি রাশিয়ার জ্বালানি খাতে ইউক্রেনের চালানো সবচেয়ে গুরুতর আক্রমণ। বুধবারের (১৩ মার্চ) এ হামলায় তেল কোম্পানি রোজনেফতের বৃহত্তম শোধনাগারে আগুন ধরে যায়। এতে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় তেলের মূল্য দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে বিঘ্নিত করার চেষ্টায় এসব হামলা চালানো হয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মন্তব্য করেছেন। ১৫ থেকে ১৭ মার্চ রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের দিন মঙ্গলবার নিজনি নভগোরোদে রাশিয়ার বহুজাতিক তেল কোম্পানি লুকোয়েলের একটি তেল শোধনাগারে হামলা চালায় ইউক্রেনীয় ড্রোন। এতে তেল শোধনাগারটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। 

রাশিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের ড্রোনগুলো বুধবার রোস্তভ ও রাইয়াজান অঞ্চলের তেল শোধনাগারগুলোতে হামলা চালিয়েছে। মস্কো থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বের রাইয়াজানে এক ড্রোনের হামলায় রোজনেফতের বৃহত্তম শোধনাগারে আগুন ধরে যায়। এটি রাশিয়ার সপ্তম বৃহত্তম তেল শোধনাগার।

রাইয়াজান অঞ্চলের গভর্নর পাভের মালকভ জানিয়েছেন, আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে, তবে হামলায় কয়েক জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত দুই রুশ নাগরিক জানিয়েছেন, হামলার পর তেল শোধনাগারটি তাদের দুটি তেল শোধন ইউনিট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। তবে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রোজনেফতের তরফ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। 

রোস্তভ অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি গোলুবেভ জানান, সেখানে কোনো হতাহতের ঘটেনি, কিন্তু হামলার পর নভোশাখটিনস্ক শোধনাগার উত্পাদন স্থগিত করতে বাধ্য হয়। পরে শোধনাগারটিতে উত্পাদন ফের শুরু হয় বলে জানা গেছে।

কিয়েভের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের এসবিইউ গোয়েন্দা সংস্থা ড্রোন হামলাগুলো পরিচালনা করেছে। বুধবার প্রকাশিত মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ১৫-১৭ মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টায় কিয়েভ এসব হামলা চালাচ্ছে।

এদিকে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেটেরি অর্পো বলেছেন, পশ্চিমাদের সঙ্গে দীর্ঘ সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। ইউরোপের প্রতিরক্ষায় আরো ব্যয় এবং সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়ে বুধবার তিনি একথা বলেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অর্পো বলেন, ‘রাশিয়া স্পষ্টতই পশ্চিমাদের সঙ্গে দীর্ঘ সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউরোপের জন্য একটি স্থায়ী ও অপরিহার্য সামরিক হুমকি হয়ে উঠছে দেশটি। আমরা সংঘবদ্ধ হতে না পারলে আগামী বছরগুলো বিপদসঙ্কুল হবে এবং হামলার হুমকি ঘনিয়ে আসবে।’

রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অর্পো ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং বলেন, ইইউকে নিজেদের প্রতিরক্ষার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাশিয়া অপরাজেয় কোনো দেশ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে বুধবারই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি মন্তব্য প্রকাশ পেয়েছে। তাতে তিনি বলেছেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের অন্তর্ভুক্তি ‘অনর্থক একটি পদক্ষেপ’। ফিনল্যান্ড এ জোটে যোগ দেওয়ার পর রাশিয়া ফিনিশ সীমান্তে সেনা এবং ধ্বংসাত্মক সব ব্যবস্থা মোতায়েন করবে।

পশ্চিমাদেরকে হুমকি দিয়ে এদিন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আরো বলেছিলেন, কারিগরিভাবে পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনে সেনা পাঠায় তাহলে মস্কো এ পদক্ষেপকে চলমান সংঘাতে বড় ধরনের উসকানি হিসেবে গণ্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *