৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকার বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংকের ৮৩৫ মামলা / সার্টিফিকেট মামলার জালে ঝিনাইদহের কৃষকরা / ঋণ পরিশোধে কপালে চিন্তার ভাজ

Share Now..

\ আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ থেকে \
খেলাপি ঋণের ভারে দেশের কোনো কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলেও মাত্র এক লাখ টাকার নিচে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় কৃষকদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা করার অভিযোগ উঠেছে। হাজার বা শতকোটি টাকার ঋণখেলাপিরা যখন অধরা, তখন ঝিনাইদহের ৮৩৫ জন কৃষকের নামে ঝুলছে সার্টিফিকেট মামলার খড়গ। মামলার কারণে অনেক কৃষক চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে নতুন করে এনজিও’র ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন। ঝিনাইদহ জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, গত মার্চ মাস পর্যন্ত ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার ৮৩৫ জন কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেনারেল সার্টিফিকেট আদালতে ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার বিপরীতে কৃষকের নামে ১৪৯টি, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা সার্টিফিকেট আদালতে ২৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বিপরীতে ১১৪টি, শৈলকুপায় ৬২ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিপরীতে ১০৩টি, হরিণাকুন্ডুতে ২৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার বিপরীতে ২৬টি, কালীগঞ্জে ৯৮ লাখ ১৬ হাজার টাকার বিপরীতে ১৭৫টি, কোটচাঁদপুরে ৩৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকার বিপরীতে ১১টি ও মহেশপুর সার্টিফিকেট আদালতে ২৬ লাখ ৭ হাজার টাকার বিপরীতে ২৭৫টি সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে। এসব কৃষকের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওয়ানা আছে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। প্রাপ্ত তথ্যমতে গত মার্চ পর্যন্ত ৮টি মামলা নিস্পত্তির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ৯৯ হাজার ২৭০ টাকা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া ১১টি মামলা নিস্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তরের জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের অফিস সুত্রে জানা গেছে, কৃষকদের বিরুদ্ধে সবচে বেশি মামলা করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। তারা কৃষকের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার জন্য ৩৮৮ জন কৃষকের নামে মামলা দিয়েছে। এছাড়া সোনালী ব্যাংক ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আদায়ের জন্য ৮টি, জনতা ব্যাংক ২৮ লাখ ১৩ হাজার টাকার জন্য ৪০টি, অগ্রনী ব্যাংক ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার জন্য ৮১টি মামলা, কর্মসংস্থান ব্যাংক ২৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকার জন্য ২৮টি, ন্যাশনাল ব্যাংক ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার জন্য ১০টি, বিআরডিবি ৮৮ লাখ ৫ হাজার টাকার জন্য ৯১টি পল্লী বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকার জন্য ১৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার ও নওসীনা আরিফ ব্যাস্ত থাকায় কথা বলতে চাননি। ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী ও সিনিয়র সাংবাদিক অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, মামলা কোন সমাধান নয়। মামলা দেখে কৃষকরা ভয় পান। কারণ কৃষকরাই আমাদের অর্থনীতির মৃল চালিকা শক্তি। তিনি বলেন, কৃষি ঋন আদায়ের ক্ষেত্রে কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা খুজে বের করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি সায়েদুল আলম জানান, দরিদ্র কৃষকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে ব্যাংকগুলো যতটা তৎপর, ঠিক ততটাই নিক্রিয় বড় বড় ঋণখেলাপির কাছ থেকে টাকা আদায়ে। তিনি জানান, ঋণ আদায়ে এমন বৈষম্য কাম্য নয়। কৃষকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানী বন্ধ করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *