প্রেমময় সম্পর্ক সূচনার তাত্ত্বিক ধাপসমূহ

Share Now..

প্রেমময় সম্পর্ক মানবজীবনের সুন্দর সম্পর্কগুলোর অন্যতম। এই সম্পর্কের কারণ, ধরণ ও প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের আগ্রহের সূচনা অনেক আগে থেকেই। মানুষ স্বভাবতই এটা নিয়ে কৌতূহল ও আবেগী হয়ে থাকে।

প্রেমময় সম্পর্কের কারণ নিয়ে গবেষকদের মাঝে নানা মত প্রচলিত আছে। মনোবিজ্ঞানী ডেভিড টি লেকেন ও আউকে টেলিজেন মনে করেন, প্রেমময় সম্পর্কের সূচনা ঘটে সম্পূর্ণ ভাগ্যক্রমে। ফ্রেসার মনে করেন, ব্যক্তির প্রেমময় সম্পর্কের সূচনাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে মানুষের দৈহিক জৈব-রাসায়নিক মিথস্ক্রিয়া। অন্যদিকে ডেভিড বুস মনে করেন, প্রেমময় সম্পর্কের সূচনা কতগুলো ধাপের মধ্য দিয়ে সমন্বিত প্রক্রিয়া পূরণের ফলেই ঘটে থাকে।

তবে একথা ঠিক যে কতগুলো বিষয়, ধাপ ও কারণ আছে যেগুলোর আদলে যোগাযোগ প্রক্রিয়া চলমান থাকলে তা প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকে।

দৈহিক আকর্ষণ

আমরা যতই বলি না কেনো ‘মলাট দেখে বইয়ের বিচার করা ঠিক না’, তবে বাস্তবজীবনে আমরা অধিকাংশ সময়ই ‘আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী’ নীতিরই বাস্তবায়নই করে থাকি। কম বেশি সবার মধ্যেই প্রেমময় সম্পর্ক সূচনার প্রধান প্রভাবক হিসেবে দৈহিক আকর্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রেমময় সম্পর্ক নিয়ে প্রচলিত কথাটি হলো প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যাওয়া। যা আসলে সঙ্গী নির্বাচনে দৈহিক আকর্ষণের ফলেই ঘটে থাকে। অনেকের মতে, দৈহিক আকর্ষণকেই সাধারণত প্রেমের প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে থাকে।

অস্পষ্টতা দূরীকরণ ও তথ্যের ব্যাপ্তি

মানুষ যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মাঝে মধ্যকার বিভিন্ন তথ্যাদি ভাগাভাগি করে নেয়। মানুষ একে অপরের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহী হয়ে থাকে। এই তথ্যের আদান-প্রদানের মাধ্যমেই নিজেদের মধ্যকার বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে স্পষ্টতা অনায়নের চেষ্টা করে থাকে।

তাত্ত্বিকদের মতে, যতবেশি তথ্যের আদান-প্রদান ঘটে থাকে, সম্পর্কের ব্যাপ্তি ও গভীরতার তেমনি বৃদ্ধি পায়। আবার এই রকম ঘটনাও খুব অস্বাভাবিক নয় যে দুইজন অপরিচিত ব্যক্তিদ্বয়ের মাঝে ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্যের অদান প্রদান আকর্ষণ সৃষ্টিতে ব্যর্থ। তথ্যের আদান প্রদানের ফলে একে অন্যের মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ স্থান করে নেয়। ব্যক্তি যে ধরনের ও পরিমাণের তথ্যাদি ভাগাভাগি করে সে অনুপাতে ফলাফল ও ফলাবর্তনের মাধ্যমেই সম্পর্কের ব্যাপারে ব্যক্তির পরবর্তী ধাপের আগ্রহকে প্রভাবিত করে।

সাদৃশ্য

প্রেমময় সম্পর্কের ধাপে সাদৃশ্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। অনেক সময় সাদৃশ্যতার অভাবে সম্পর্কের সূচনা মুকুলেই বিনষ্ট হয়ে যায়। এই সাদৃশ্য হতে পারে, জাতিগত, ধর্মীয়, মানসিক, চিন্তাগত, দর্শন, ভাষাগত, শিক্ষা, বয়স, পেশা ও বিভিন্ন সামাজিক মাপকাঠিতে। এমন ঘটনাও দেখা যায় যেখানে দৈহিক ও মানসিকভাবে আকর্ষণ অনুভব করার পরেও সাদৃশ্যগত অন্তমিল না থাকায় প্রেমময় সম্পর্কে পথ প্রশস্ত হয় না।

নৈকট্য

প্রেমময় সম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে নৈকট্য ভৌগোলিক ও মনস্তাত্ত্বিক এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। ভৌগোলিকভাবে যারা নিকটে অবস্থান করে তাদের মাঝে প্রেমময় সম্পর্ক সৃষ্টির সম্ভবনা বেশি থাকে বলে গবেষকরা মত প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, ভৌগোলিকভাবে নিকটে অবস্থান না করে মনস্তাত্ত্বিক নৈকট্য প্রেমময় সম্পর্ক সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।

আধুনিক প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সুবাধে ভৌগোলিকভাবে দূরে অবস্থান করেও মানসিক নৈকট্যতার ফলে প্রেমময় সম্পর্ক সৃষ্টিতে সম্ভবনা অনন্য মাত্রা যোগ করেছে। প্রকৃতপক্ষে ভৌগোলিকভাবে নৈকট্য ও দূরত্বের থেকেও বেশি ভূমিকা রাখে মানসিকভাবে গ্রহণ করার দিকটা।

ভৌগোলিকভাবে নিকটে অবস্থান না করেও যেমন মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিকটে অবস্থান করা যায়, তেমনি ভৌগোলিকভাবে নিকটে অবস্থান করেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিকটে অবস্থান না করলে, প্রেমময় সম্পর্ক সৃষ্টির কোনো সম্ভবনা থাকে না। প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যক্তি মানসিকভাবে কীভাবে অন্যকে অন্যকে গ্রহণ করছে তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

প্রেমময় সম্পর্ক মানবজীবনে বিভিন্নসময় বিভিন্নভাবে আগমন করে। উভয়ের সম্মতিতেই প্রতিটি সুন্দর সম্পর্কের সূচনা ঘটে। কেউ জীবনের বিভিন্ন ধাপে ধাপে নতুন প্রেমের সম্পর্কে উপনীত হয় কেউবা কোনো একটি বিশেষ প্রেমকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায় আজীবন। এই কথা সম্পূর্ণরূপে সত্য যে সবার জীবনে প্রেম একরকম পদ্ধতি অনুসরণ করে আসে না। তবে প্রেমের প্রভাব মানুষকে বিভিন্নভাবে ত্বরান্বিত করে থাকে। প্রেমের সুন্দর সম্পর্ক প্রতিটি মানুষের জীবনকে করে তুলে আন্দোলিত ও স্মৃতিময়।

সূত্র: দ্য ইভ্যালুয়েশন অব ডিজায়ার. দ্য অ্যানাটমি অব লাভ, সোশ্যাল পেনিট্রেশন (ইন শর্ট)।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *