বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভক্তিকরণ নিয়ে শেখ হাসিনার বড় সতর্কবার্তা

Share Now..

বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের কিছু অংশকে নিয়ে ‘পূর্ব তিমুরের মতো একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র’ তৈরি করার চক্রান্ত চলছে বলে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডেইলি স্টার এর খবর অনুযায়ী হাসিনা এক বৈঠকে বলেছেন, ‘পূর্ব তিমুরের মতো… তারা বঙ্গোপসাগরে একটি ঘাঁটি সহ বাংলাদেশ (চট্টগ্রাম) এবং মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে একটি খ্রিস্টান দেশ তৈরি করার পরিকল্পনা করছে।

শেখ হাসিনা দাবি করেছেন যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তার সঙ্গে একজন ‘শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি’ দেখা করেন। সেই ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে বলেন, একটি বিশেষ দেশকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বিমানঘাঁটি নির্মাণের অনুমতি দিলে তিনি ‘কোনো সমস্যায়’ পড়বেন না।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেই দেশের নাম উল্লেখ না করেই বলেছেন, ‘এটা মনে হতে পারে যে এটি (প্লট) কেবল একটি দেশকে লক্ষ্য করে, কিন্তু তা নয়। আমি জানি তারা কী চায়।’

শেখ হাসিনার মন্তব্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার সাবেক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী স্পুটনিক ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সঠিক প্রমাণ ছাড়া কথা বলেন না। আমি নিশ্চিত যে তিনি এই বিবৃতি দেওয়ার আগে ভালভাবে ভেবেছিলেন।’

চলতি জানুয়ারিতে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। নির্বাচন বয়কট করেছিল দেশের প্রধান বিরোধী দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তারা একটি তত্ত্বাবধায়ক সেট-আপের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল, যদিও দাবিটি দেশের সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এটা মনে করা হয়েছিল যে, এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বিএনপির পক্ষে ব্যাটিং করছে। যদিও দুই দেশের সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সেই উত্তেজনা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে।

‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভক্তিকরণ’

যদিও কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করেই  বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের কিছু অংশকে নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা চলছে- এমনটা উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা, কিন্তু তার আওয়ামী লীগের নেতারা বিলক্ষণ জানেন প্রধানমন্ত্রী কার দিকে ইঙ্গিত করছেন।

আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য স্কোয়াড্রন লিডার (অবসরপ্রাপ্ত) সদরুল আহমেদ খান স্পুটনিক ইন্ডিয়াকে জানান, এটি স্পষ্ট  সরকার বিরোধীদের সমর্থনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই বিরোধীদের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এবং পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ)।

সদরুল আহমেদ খান বলেন, ‘মিয়ানমারের কুকি-চীন বিদ্রোহীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টান হওয়ায়, তারা বিদেশি এক্টরদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি।

মিয়ানমারের চীন রাজ্যের কুকি-চীন বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর সাথে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা উল্লেখ করেন, গত বছর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বার্মা আইনে স্বাক্ষর করার পর বাইডেন প্রশাসন মিয়ানমারের বিরোধী শক্তিকে সমর্থন করার বিষয়টি আর গোপন রাখেনি, চুক্তিতে মিয়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনের জন্য ‘প্রাণঘাতী নয় এমন সাহায্য’ প্রদানের কথা বলা হয়েছে।

এই আইনের অধীনে প্রথম কিস্তির সাহায্য এ বছর সরকারবিরোধী শক্তির কাছে পৌঁছেছে। ক্ষমতাসীন স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) দ্বারা সোচ্চারভাবে বিষয়টিতে আপত্তি জানানো হয়েছে। ভয়েস অফ আমেরিকা (ভিওএ) অনুযায়ী এসএসি বলেছে, ‘এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারকে হাতিয়ার করেছে।’

সদরুল আহমেদ খান উল্লেখ করেন যে, কুকি-চীন বিদ্রোহীদের আমেরিকার নিরঙ্কুশ সমর্থন বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের পাশাপাশি ভারতের নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। ভারতের মণিপুরের মতো উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে নৃ-ত্বাত্তিক গোষ্ঠীর বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং ফেব্রুয়ারিতে দাবি করেছিলেন যে, চীন-কুকি-জো উপজাতির বিস্তারে দেশের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর প্রভাব রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যটি গত মে মাস থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইটিস এবং কুকি-জো গোষ্ঠীর মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষের সম্মুখীন হচ্ছে। এর ফলে ২০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানুয়ারিতে পার্লামেন্টে বলেছেন, নয়াদিল্লি ১৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের পুরো অংশে বেড়া দেবে।

চৌধুরী হাইলাইট করেছেন যে, শেখ হাসিনার অধীনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় সহ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সার্বিক উন্নতিতে ভারতের উত্তর-পূর্বে অঞ্চল উপকৃত হয়েছে।

সেন্ট মার্টিনে ঘাটি স্থাপনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

তদুপরি, সদরুল আহমেদ খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সামুদ্রিক সীমান্তে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একটি ঘাঁটি স্থাপন করতে চাইছে।

তিনি বলেন, ‘শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, মানবিক সহায়তা কিংবা লজিস্টিক মহড়া এসবে বাংলাদেশ সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তবে, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নৌ ঘাঁটি স্থাপন করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশ এ ধরনের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার নিন্দা করে, কারণ বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে কোনও অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে সমর্থন করে না কিংবা চীনকে ঠেকাতে  মার্কিন স্বার্থের জন্য  ‘প্রক্সি’ হিসেবেও কাজ করবে না। কারণ, বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তিনি হাসিনার সুরেই বলেন, বাইরের চাপের মুখে দেশ আপস করবে না।’

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আরেকটি মার্কিন ঘাঁটি কেবল ঢাকা নয়, নয়া দিল্লির নিরাপত্তায়ও প্রভাব ফেলবে। তার মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, আমি নিশ্চিত যে নয়াদিল্লিও এই অঞ্চলে কোনও বাইরের হস্তক্ষেপ চায় না।’ 

3 thoughts on “বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভক্তিকরণ নিয়ে শেখ হাসিনার বড় সতর্কবার্তা

  • May 28, 2024 at 3:50 pm
    Permalink

    Write more, thats all I have to say. Literally, it seems as though you relied on the video to make your
    point. You clearly know what youre talking about, why waste your intelligence on just
    posting videos to your site when you could be giving us
    something enlightening to read?

    Reply
  • May 28, 2024 at 3:58 pm
    Permalink

    I know this if off topic but I’m looking into starting my
    own blog and was curious what all is required to get set up?
    I’m assuming having a blog like yours would cost a pretty penny?
    I’m not very internet savvy so I’m not 100% certain. Any tips or advice would be greatly appreciated.
    Thanks

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *