চুরির অভিযোগে ছাত্রকে হাত-পা বেঁধে অমানবিক নির্যাতন \ শিক্ষক আটক

Share Now..

\ ঝিনাইদহ অফিস \
চুরির অভিযোগে মাদ্রাসার এক ছাত্রকে অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। রাতের আঁধারে হাত-পা বেঁধে ২ ঘন্টাব্যাপি চলে বর্বোচিত অত্যাচার। এতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি শিক্ষকদ্বয় এরপরে দুই দিন তাকে আটকে রাখা হয়। পরে মাদরাসা থেকে সুযোগ বুঝে ছাত্র তাওহীদ পালিয়ে ফিরে আসে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। এখন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে সে। এ ঘটনায় সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিতিমতো সমালোচনার ঝড় বইছে। সন্তানের নির্যাতনের বিচার চেয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন ওই ছাত্রের পিতা। ঘটনার সত্যতা মেলাই দুই শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। তাওহিদ হোসেন শৈলকুপা উপজেলার রঘুনন্দনপুর গ্রামের মান্নান বিশ্বাস ছেলে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সরেজমিনে শৈলকুপা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ৯ বছর বয়সী তাওহীদ হোসেন। ঝিনাইদহরে শৈলক‚পা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় কাতরাচ্ছে। না পারছে শুতে, না পারছে বসতে। সারা শরীরে চরম অমানবিকভাবে পেটানোর ছাপ। শরীরের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে দগদগে ক্ষত চিহ্ন নেই। হুজুরের ঘড়ি চুরির অভিযোগে হাত-পা বেঁধে রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলে দুই শিক্ষকের পৈশাচিকতা। গত ২৭ মে হাটফাজিলপুর মুহাম্মাদিয়া মাদরাসায় ঘটে এ ঘটনা। এতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি শিক্ষক মাহমুদ হাসান ও মাহাদী হাসান। তাকে মাদরাসার কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে রাতের আঁধারে পালিয়ে পাশের এক আত্মীয় (ফুফু) বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে বাবা-মা জানতে পেরে শৈলকুপা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সন্তানের এমন নির্যাতনের বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশি তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলায় ওই দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। মাদরাসা সূত্রে জানা যায়, জেলার শৈলকুপা উপজেলার হাটফাজিলপুর বাজার এলাকায় দারুল উলুম মুহাম্মাদীয়া কাওমী মাদরাসা ও নূরানী কিন্ডারকর্টেন। যা ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মরহুম তাইজাল হোসেন মোল্লা। মাদরাসার বর্তমান ছাত্রের সংখ্যা ২শ’ ৫০ এর বেশী। তবে বোডিং থাকে ১শ ছাত্র। তাওহীদের বাড়ী একই উপজেলার রঘুনন্দনপুর গ্রামে। সে ৩ বছর ধরে এই মাদরাসায় পড়ছে। তার বাবা কৃষক। এলাকাবাসী পারভেজ হোসেন অপু ঢাকা পোস্টকে জানান, ঘটনা আমি সরাসরি দেখিনাই, ফেসবুকের মাধ্যমে দেখছি এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের মুখে শুনেছি। যে আমার কাছে খুই খারাপ লাগছে। এমন ঘটনা না ঘটাই উচিৎ। কোন ছেলে যদি খারাপ কাজ করে থাকে তাহলে গার্জেন পক্ষকে ডেকে নিয়ে এসে তাদের কাছে বিচার দেওয়া উচিৎ ছিল। অথবা গার্জেনকে দিয়েই শাসন করা উচিৎ ছিল। হয়ত কোন ভুল বসত এটা হয়ে গেছে। তবে এটা আমরা কামনা করি না। এরকম ঘটনা শুধু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এমন ঘটনা যেন আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে আমরা সেটাই চাই। যদি এমন ঘটনা ঘটতে থাকে তাহলে আর কোন অভিভাবক তাদের সন্তানদের মাদরাসা শিক্ষা দিকে আগিয়ে আসবে না সবাই মুখ ফিরিয়ে নিবে। ঘটনা খুবই দুঃখ জনক। প্রতিবেশি শাহনাজ পারভীন ঢাকা পোস্টকে জানান, আমরা একটা ছেলেকে মাদরাসায় ইসলামী শিক্ষার জন্য দিই। কিন্তু কোন অন্যায় পেয়ে এমন অমানবিক ভাবে মারা আমরা আশা করি না। পরিবারের কাজে জানানো উচিৎ ছিল। এই ছেলের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। এ নির্যাতনের সঠিক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক । বাবা মান্নান বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলেকে ৩ বছর আগে হাটফাজিলপুর মুহাম্মাদিয়া মাদ্রাসায় দিয়েছিলাম ইসলামিক শিক্ষায় বড় হবে সেজন্য। কিন্তু গত (২৭ মে) সোমবার রাতে আমার ছেলেকে চুরির অপবাদ দিয়ে অমানবিক ভাবে মারধর করা হয়েছে। সে যেন মারের কথা বাড়িতে কাউকে বলতে না পারে সেজন্য তাকে মাদরাসায় আটকে রাখা হয়েছিল। আমার ছেলে খারাপ, চুরি করে এমন কথা কখনই বলেনি। আমার ৪ ছেলে-মেয়ে তাদের এমন ঘটনার কোন রেকর্ড নেই। সবসময় শিক্ষকরা বলেছে ভালো ছেলে। ভালো করে পড়াশুনা করছে। কিন্তু তারা যে অভিযোগ এনেছে তা মিথ্যা। আমার ছেলে সত্যই যদি এমন কোন কাজ করতো তাহলে আমাদের কাছে বলতে পারতো। শিক্ষকদের সাশন করার অধিকার আছে তাই বলে এমনভাবে বর্বোচিত ভাবে কোন শিক্ষক মারে না। আমি বিচার চাই। তাওহীদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি অনেক কাকুতি মিনতি করেছি কিন্তু তারা আমাকে ছাড়েনি। আমি চুরি করিনি তার পরও আমাকে হাত বেধে মারা হয়েছে। ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছিল বের হতে পারিনি। পরে রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছিল তখন পালিয়ে পাশের ফুফুদের বাড়িতে যায়। মাদরাসা থেকে লোক গেছিল, আমার ফুপু তাদের কাছে দেয়নি। পরে আমার বাবা-মা এসে হাসপাতালে ভর্তি করে। এখন ব্যথার জ্বালাই ঘুমাতেও পারি না, আবার বসতেও পারিনা। আমি চুরি করিনি। আবাইপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ মিন্টু খাঁ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চুরি করার অপরাধে ছেলেটাকে মারা হয়েছে। তবে এটাকে অনেক বড় করে দেখা হচ্ছে। ওই ছেলের অভিভাবকরা চাইলেই সমাধান করে দেওয়া যেত। শৈলকুপা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডাঃ শোহেলি ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগের চেয়ে রুগীর অবস্থা এখন অনেকটা উন্নতির দিকে। প্রথমে বাচ্চাটা যে পর্যায়ে আসছিল এতে করে তার অনেক বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা ছিল। যেহেতু দুইদিন পার হয়ে গেছে এবং ভালো চিকিৎসায় হওয়ায় এখন আর সেই ঝুঁকিটা নাই ঝিনাইদহ শৈলক‚পা ওসি সফিকুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় আমরা দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *