ঝিনাইদহে টক অব দি টাউন কার ইন্ধনে এমপি আনার হত্যার ‘অংশ’ হলেন গ্যাস বাবু ?

Share Now..

\ নবচিত্র রিপোর্টার \
ঝিনাইদহের আওয়ামীলীগ নেতা কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু গ্রেফতারের পর এমপি আনার হত্যায় ঝিনাইদহের প্রভাবশালী আ’লীগ নেতারা আতংকে আছেন। ইতিমধ্যে বাবু একজনের নামও বলেছেন। গোয়েন্দা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুরের অন্তত ৬ জন নেতার উপর নজরদারী রাখা হচ্ছে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। নতুন করে ঝিনাইদহ থেকে কেউ গ্রেফতার হলে আবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না এমন কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। সোমবার (১০ জুন) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদেরও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন আনার হত্যাকান্ডের তদন্ত শেষ হলে অনেকেই গ্রেপ্তার হতে পারেন। আমরা সত্যের কাছাকাছি এসে গিয়েছি। মরদেহের বিষয়টি নিশ্চিত হলেই অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই “অনেকেই” কথাটির মধ্যে ঝিনাইদহের কেউ নতুন করে গ্রেফতার হচ্ছেন কিনা তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ঝিনাইদহ শহরে প্রায় প্রতিদিন প্রভাবশালী এক নেতার গ্রেফতারের গুজব ছড়াচ্ছে কেউ কেউ। এদিকে গ্যাস বাবু কি ভাবে এই হত্যাকান্ডের অংশ হলেন এ নিয়ে ঝিনাইদহ শহরে নানা আলোচনা হচ্ছে। বলা যায় গ্যাস বাবুর সম্পৃক্ততার বিষয়টি ‘টক অব দি’ টাউনে পরিণত হয়েছে। কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু শহরে একজন নিরীহ ও ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দলদারি করলেও তার বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষের তেমন কোন অভিযোগ নেই। ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলায় রয়েছে তার এলপিজি গ্যাসের ব্যবসা। পারিবারিক ঐতিহ্য আর সুনাম নিয়ে চলাফেরা করতেন। সেই মানুষটিই কিভাবে বা কার ইন্ধনে এমপি আনার হত্যায় জড়িয়ে পড়লেন তা নিয়ে মানুষের মুখে মুখে সেই কথাই ফিরছে।
ডিবি সুত্রগুলো বলছে, ভারতের কলকাতার ফ্ল্যাটে খুন করার পরে তাঁর পোশাক খুলে ছবি তোলেন খুনিরা। সেই ছবি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হয় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুর ফোনে। কামালের কাছে ছবি পাঠিয়েছেন তারই আত্মীয় চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়া। খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে যুক্ত ছিলেন শিমুল। তিনি অপরাধ স্বীকার করে ঢাকার আদালতে গত সপ্তাহে জবানবন্দি দিয়েছেন। ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভারতের কলকাতায় সংসদ সদস্য খুন হয়েছেন এই বার্তা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতাকে পৌঁছে দিতেই মূলত ওই ছবি কামালের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাঁকে এও বলা হয়েছিল, ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ওই নেতার মনোনয়ন পাওয়া এখন নিশ্চিত। ছবিটি কেন কামালের কাছে পাঠানো হয়েছিল এ বিষয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এখানে দুটি বিষয় থাকতে পারে। প্রথমত, খুনিরা হয়তো চেয়েছিলেন আনোয়ারুল হত্যাকান্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক দ্বন্দ হিসেবে উপস্থাপন করতে। দ্বিতীয়ত, ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনা অঞ্চলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা এই খুনের বিষয়ে অবগত থাকতে পারেন। এর কারণ হিসেবে ডিবি সূত্র বলছে, শিমুল ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কাজী কামালের বাইরেও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের আরও এক নেতার নাম জানা গেছে। চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়ার আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামালের নাম এসেছে। গত ১৫ মে ভারতের কলকাতা থেকে দেশে ফেরেন শিমুল। এর পরদিন ১৬ মে কামালের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন তিনি। তাঁদের দেখা হয় ১৭ মে, ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। সেখানে ছবির (সংসদ সদস্যকে খুনের পর তোলা ছবি) বিষয়ে এবং টাকা লেনদেন নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হয়। কাজী কামালের মামাতো ভাই সংসদ সদস্য খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন। ডিবি সূত্র বলছে, সংসদ সদস্যকে খুনের আগে শিমুল ভূঁইয়াকে কাজী কামালের মুঠোফোন নম্বর দেন আক্তারুজ্জামান। এখনও পর্যন্ত এই খুনের ঘটনায় ১২ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ডিবি। এর মধ্যে খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মো. আক্তারুজ্জামান শাহিন, মো. সিয়াম হোসেন, জিহাদ হাওলাদার, শিমুল ভূঁইয়া, তাঁর ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও কাজী কামাল। এর মধ্যে প্রথম তিনজন অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পলাতক থাকা অন্য আসামিরা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী সাজি, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজি ও মো. জামাল হোসেন। এদিকে কলকাতায় খুন হওয়া বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার তদন্তকালে সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার মাংসের টুকরোগুলো মানুষের বলে জানা গেছে। তবে সেটি এমপি আনারেরই কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। ডিএনএ পরীক্ষার পরেই সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *