দুই সিনিয়রের কাঁধে দোষ চাপালেন তাসকিন

Share Now..

ক্রিকেটে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট থেকে শূন্যহাতে ফেরা বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়।  কিন্তু এবার সম্ভাবনা ছিল বিশেষ কিছু প্রাপ্তির। হয়তো শিরোপা জিততে পারত না, তবে প্রথম বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারত। যদিও বেশ কিছু সমীকরণ ছিল মাথার ওপর তবে নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যেই ছিল। ঐ ম্যাচের প্রতিপক্ষও ছিল পরিচিত। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

এছাড়া গোটা বিশ্বকাপেই দলের পারফরম্যান্স ছিল প্রশ্নবিদ্ধ, হয়েছে তা নিয়ে বেশ সমালোচনাও। গ্রুপপর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় পারেনি কাজে লাগাতে। তা সমর্থকরা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে। পরে সুপার এইটে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াই করতে পারেনি। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে দলের পারফরম্যান্স দেখে তো মনে হয়েছে জয়ের ক্ষুধাই নেই তাদের, মাঠে নেমেছে যত কম ব্যবধানে হারা যায়। আর সবশেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সমীকরণের ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর এসব কিছুই হয়েছে ব্যাটিং ইউনিটের হতশ্রী পারফরম্যান্সের  কারণে। যদিও আসর শেষ করে দেশে ফেরার পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দলের সহঅধিনায়ক তাসকিন আহমেদ দায় চাপিয়েছেন দলের সিনিয়র দুই ক্রিকেটারের ওপর।

এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সব আসরে অংশগ্রহণ করা খেলোয়াড় রয়েছে দুই জন। তাদের মধ্যে এক জন সাকিব আল হাসান। তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও। এবারও ছিলেন দলে, তার পাশাপাশি ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। তিনি এক আসর বাদে ছিলেন সব কটিতেই। মূলত এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ঘিরেই সাজানো হয়েছিল স্কোয়াড। তবে টুর্নামেন্টে এই দুই ক্রিকেটারই ছিলেন বিবর্ণ। নিজেদের অভিজ্ঞতা তো কাজে লাগাতেই পারেননি, উলটো দলকে ডোবানোর জন্য যতটুকু করা দরকার ছিল তাই করেছেন।

সাকিব ব্যাট হাতে ৭ ম্যাচে করেছেন মাত্র ১১১ রান, তার মধ্যে এক ম্যাচেই করেছিলেন ৬৪ রান, বল হাতে উইকেট নিয়েছেন কেবল ৩টি। মাহমুদউল্লাহর অবস্থা আরো খারাপ। ফিনিশার হিসেবে পরিচিত রিয়াদ ৭ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৯৫ রান, বল হাতে পেয়েছেন মাত্র একবার। কোনো ম্যাচেই রাখতে পারেননি নিজের ছাপ। তাদের এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সই টুর্নামেন্টে দলের ব্যর্থতার পেছনের অন্যতম কারণ। গতকাল সকালে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমনটি বলেছেন তাসকিন আহমেদ।

টাইগার তারকা এ পেসার বলেন, ‘দুই জন সিনিয়র ক্রিকেটারের অফফরম আমাদের দলে প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু মাঠের বাইরে প্রভাব ফেলেনি, কেননা মাঠের বাইরে তারা ভালো সতীর্থ। আল্লাহর রহমতে এই যে ৪৭ দিন সবাই একসঙ্গে ছিলাম। সবার ব্যবহার খুব ভালো ছিল। মাঠের বাইরে তো সব ঠিকই ছিল। কিন্তু আসলে দলের প্লেয়াররা অফফরমে থাকলে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আশা করছি দ্রুতই সব কাটিয়ে উঠে সামনে ভালো কিছু করব আমরা।’

যদিও ব্যর্থতার গল্পে ভরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কাটানোর পরও এ ফরম্যাটে নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে তাসকিন শোনালেন আশার বাণী। বললেন, ‘ধীরে ধীরে আমাদের উন্নতি হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমাদের পরিসংখ্যান শুরু থেকে খুব একটা ভালো ছিল না। আগের থেকে তো উন্নতি হচ্ছে। শুধু মাইনাস পয়েন্ট দেখলে তো হবে না। এমনিই তো মাইনাসে আছি আমরা। প্লাসে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তো করেই যাব, আপনারা হতাশ হচ্ছেন স্বাভাবিক, আবার আমরা আপনাদের ভালো জয় উপহার দিব, বিশ্বাস রাখেন আমাদের ওপর, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি।’

এদিকে দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের ব্যর্থতার পাশাপাশি নিষ্প্রাণ ছিল দলের পুরো ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টই। প্রতিটা ম্যাচেই ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটারদের দায়িত্ব ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কেবল তাওহীদ হূদয় ছাড়া নিজেদের আর মেলে ধরতে পারেননি কেউই। দলের সহকারী অধিনায়কও মেনে নিয়েছেন বিষয়টি। বলেন, ‘ব্যাটিং বিপর্যয় যেটা, আসলে সত্যি বলতে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রে যখন খেলা হয়েছে, তখন কিন্তু ব্যাটারদের ফেভার খুব কম ছিল। আপনারা যদি স্ট্যাট চেক করেন, অন্যান্য দেশের ব্যাটার, বড় বড় দলগুলোও স্ট্রাগল করেছে। ওখানে বোলারদের একটু অ্যাডভান্টেজ ছিল। তো ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার পর একটু ভালো উইকেটে খেলছি আমরা। কিন্তু তাও আসলে, এত লম্বা…কখনোই আমি ক্রিকেট খেলার পর, বাংলাদেশ দলের হয়ে শেষ ১০ বছর ধরে খেলছি, কখনো এরকম লম্বা ব্যাটিংয়ে   খারাপ সময় দেখিনি। আশা করি এটা দ্রুতই কাটিয়ে উঠবে।’

তবে ব্যাটারদের ব্যর্থতা থাকলেও বোলাররা ছিল দুর্দান্ত। রং ছড়িয়েছেন, আসর জুড়ে দেখিয়েছেন নিজেদের সামর্থ্য। তাতে চলমান টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারদের তালিকার শীর্ষ দশে জায়গা করে নেন দুই বোলার। রিশাদ হোসেন ও তানজিম হাসান। আসরে ১৪ উইকেট নিয়েছেন লেগ স্পিনার রিশাদ। পেসার তানজিম সাকিবও দেখিয়েছেন ঝলক। বল হাতে এই পেসারের উইকেট সংখ্যা ১১টি। তাদের পারফরম্যান্সে বেশ সন্তুষ্ট তাসকিন। বলেন, ‘মাশআল্লাহ তানজিম সাকিব, রিশাদ এরা সেরা পাঁচ উইকেট শিকারির মধ্যে ছিল। রিশাদ এখনো আছে। ওভারঅল ভালো করছে মাশআল্লাহ। এটা খুব পজিটিভ সাইন, বাংলাদেশ থেকে ভবিষ্যত্ তারকারা উঠে আসবে। ইতিমধ্যে বিশ্বকে বোঝানো হয়েছে যে আমাদের সবার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা আছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *