রাসেলস ভাইপার: আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা

Share Now..

এককালে বলা হতো চন্দ্রবোড়া। তবে এখন পরিচিত রাসেলস ভাইপার নামে। সম্প্রতি দেশে এই প্রজাতির সাপ নিয়ে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক রয়েছে। রাসেলস ভাইপার বিষধর, তবে সবচেয়ে বিষধর নয়। জনমনে একধরনের ধারণা গড়ে উঠেছে, সাপটি মানুষকে দেখলেই আক্রমণ করে।

রাসেলস ভাইপার কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হয়। ওঝার কাছে নিয়ে সময়ক্ষেপণ করলে সঠিক সময়ে চিকিৎসার সুযোগ নষ্ট হবে। আক্রান্ত অঙ্গ দড়ি জাতীয় কিছু দিয়ে বাঁধা যাবে না। ছুরি, কাঁচি কিংবা ব্লেড দিয়ে কাটাছেঁড়া করা যাবে না। এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজের রেজিস্টার্ড ডা. লিপি বিশ্বাস।

রাসেলস ভাইপার কামড়ালে কী হয়
চন্দ্রবোড়ার কামড়ে আক্রান্ত স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, ফুলে ওঠে, ফোসকা পড়ে, রক্তক্ষরণ হয়। কখনো আক্রান্ত স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়, পচন ধরে এমনকি পড়ে গ্যাংগ্রিন হতে পারে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও এর প্রভাব দেখা দিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। নাক, মুখের পাশাপাশি বমির সঙ্গে, পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

এই সাপের কামড়ে অরুচি হতে পারে। মাংসপেশির কোষ ভেঙে র‍্যাবডো মায়োলাইসিস হতে পারে। এতে প্রস্রাব কমে যায়, খয়েরি বর্ণ ধারণ করে। কিডনি বিকল হতে পারে। রক্তচাপ কমে যায়, হৃদস্পন্দন এলোমেলো হয়ে যায়। অনেক সময় রক্তনালী থেকে রক্তরস বের হয়ে আসে।

কামড়ালে কী করণীয়
বিষধর সাপ কামড় দিলেই বিষ শরীরে ঢুকবে এমন নয়। তাই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। সাপের ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই হতে পারে ড্রাই বাইট। অর্থাৎ সাপ কামড়ালেও শরীরে বিষ ঢোকে না। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। রোগীর আক্রান্ত স্থান অনড় রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রেশার ব্যান্ডেজ ব্যবহার করতে হবে। হাতে-পায়ে আংটি,  চুড়ি থাকলে খুলে ফেলতে হবে।

সময় নষ্ট নয়
অহেতুক সময়ক্ষেপণ হয় এমন কিছুই করবেন না। সাপের কামড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ, দেরিতে হাসপাতালে নেওয়া।

চিকিৎসা
রাসেলস ভাইপারসহ সব প্রজাতির সাপের কামড়ের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা রয়েছে। সাপের কামড়ের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রয়েছে। যথাসময়ে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে। হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের ফলে ৭০ শতাংশ রোগীর বেঁচে যাওয়ার নজির রয়েছে। তবে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া গেলে এই মৃত্যুহার আরো কমিয়ে আনা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *