কোথায় ব্রাজিলের সেই ফুটবল?

Share Now..

ফুটবলে ব্রাজিলের নামটি দিনে দিনে পাণ্ডুবর্ণে পরিণত হচ্ছে। যুগে যুগে পেলে, এদুয়ার্দো তোস্তাও, মানে গারিঞ্চা, আর্থার জিকো, সক্রেটিস, রবার্তো রিভেলিনো, রোমারিও ডি সুজা, পাওলো রবার্তো ফালকাও, কাফু, রোনালদো নাজারিও, রোনালদিনিওর মতো মহাতারকারা ফুটবলকে শাসন করেছেন। ব্রাজিলের এই মহাতারকাদের নামের তালিকা আরো লম্বা।

লিখতে বসলে তাদের গল্প নিয়ে অনায়াসে মহাকাব্যও রচনা করা যায়। কিন্তু সেসব এখন অতীত। বর্তমানে ব্রাজিল দল কেবল নামের ভারেই চলছে। কাতার বিশ্বকাপের মতো একই গল্প লিখে গতকাল কোপা আমেরিকা থেকে বিদায় হয়েছে সেলেসাওদের। এক সময়ে ফুটবলে রাজত্ব করা দলটি এখন উপহাসে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত ভক্তদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের প্রেক্ষাপট তৈরি করছেন অ্যালিসন বেকার, মারকুইনহোস, এদের মিলিতাও, দানিলো, রদ্রিগো, রাফিনিয়ারা। আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলটির গুরুত্বপূর্ণ তারকার মাঠের বাইরে থাকা যেন অনেকটাই নিয়ম ও মন্দ ভাগ্যে পরিণত হয়েছে।

গতকাল কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে ছিলেন না ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। পরপর দুটি ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখে এই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। গ্যালারিতে বসে নিজ দলের হার দেখেছেন। অথচ দলে তাকে কতটা প্রয়োজন ছিল, সেটি প্রতিটি আক্রমণের সময়ে টের পেয়েছে সেলেসাও বাহিনী। অবশ্য উরুগুয়ের বিপক্ষে সেভাবে আক্রমণের পসরা বসাতে পারেনি দলটি। কোচ দরিভাল জুনিয়র শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো থেকেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম হারের স্বাদ পেলেন তিনি। অবশ্য হার যে আসবে, সেটি এই টুর্নামেন্টের কয়েকটি ম্যাচ দেখেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষেও শক্তি দেখাতে পারেনি ব্রাজিল। কোস্টারিকা, কলম্বিয়া ম্যাচে ড্র নিয়েই খুশি থাকতে হয়েছে। তাতে এমন ম্যাচে পতন হওয়ার শঙ্কা আগে থেকেই যেন তৈরি ছিল।

দুই বছরেও নেই অগ্রগতি

কাতার বিশ্বকাপ থেকে কোপা আমেরিকা। ব্রাজিল বসে আছে যেন একই জায়গায়। মরুর বুকে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্রয়ের পরে টাইব্রেকারে ব্রাজিল হারে ৪-২ ব্যবধানে। সেদিন নেইমার জুনিয়র থেকে শুরু করে দলের প্রতিটি সদস্যের অশ্রু ব্যথিত করেছিলে ফুটবল ভক্তদের। তারপরে কেটে গেছে দুই বছরের বেশি সময়। অথচ কোপার ক্ষেত্রেও একই চিত্র মঞ্চায়ন করল ব্রাজিল। এবার প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে ও পূর্ণ সময়ে গোলশূন্য ড্র ছাড়া বাকি সব গল্প একই। বিশ্বকাপে রদ্রিগো ও মারকুইনহোস জালের দেখা পাননি টাইব্রেকার শটে। এবার পেলেন না এদের মিলিতাও ও ডগলাস লুইস। উভয় বিদায় কোয়ার্টার ফাইনালের মঞ্চে দাঁড়িয়ে। অথচ এই সময়ের মধ্যে নিজেদের দুর্বলতা থেকে বের হতে পারল না ব্রাজিল।

মন্দভাগ্য ও খামখেয়ালিপনা

ব্রাজিলের খেলা এখন অনেকটাই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের মতো হয়ে গেছে। খেলার প্রতি আগ্রহ ও জয়ের নেশা প্রতিটি দলকে সফলতা এনে দেয়। নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগার বাহিনীর খেলা দেখে বিশ্লেষকরা বলেছেন, দলটির জয়ের কোনো ইচ্ছাই দেখা যায়নি। কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল যেন সেই রূপেই হাজির হলো। গতকাল জয়ের জন্য কিংবা গোল তুলে নেওয়ার জন্য খেলোয়াড়রা যেন খামখেয়ালিপনায় মেতেছিলেন। এই ম্যাচে ভিনি ও টুর্নামেন্টে নেইমারের না থাকার জন্য দলকে ভুগতে হয়েছে পদে পদে।

২০১৪ সালে ঘরের মাটিতে উড়তে থাকা নেইমার যখনই দলের বাইরে গেলেন কলম্বিয়ার বিপক্ষে চোটে পড়ে, তখন জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হতে হয়েছিল। এবারের কোপা আমেরিকায় ভিনিকে নিয়ে একই কথা বলা যায়। কলম্বিয়ার বিপক্ষে তার খামখেয়ালিপনা দলকেই ছিটকে দিল পরের ম্যাচে এসে। এরপরে ২০১৮ বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের গতিশীল ফুটবলের কাছে পরাস্থ না হয়ে উপায় ছিল কী! কাতার বিশ্বকাপে এসে দেখা গেল টাইব্রেকার দুর্বলতা। সেটি মাথা চাড়া দিয়ে উঠল গতকালও।

ভবিষ্যত্ লক্ষ্য

কাতার বিশ্বকাপের পরে ১৭টি ম্যাচ খেলেছে ব্রাজিল। এর মধ্যে ৬টি করে হার ও জয় রয়েছে, ড্র ৫টিতে। তাতে জয়ের হার খুবই কম। বর্তমানে যে পথে হাঁটছে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা তাতে ভবিষ্যত্ খুব বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে না। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার জন্য শঙ্কার মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল। বাছাইপর্বের ম্যাচগুলোতে একের পর এক হার তাদের বিদ্ধস্ত করেছে। কোচ দরিভাল জুনিয়র এখন লক্ষ্য হিসেবে দেখছেন, সামনের ম্যাচগুলোতে ভালো করে কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে বসতে যাওয়া বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নেওয়া। হয়তো দলটি সেটি করতে পারবে, আবার এভাবে চলতে থাকলে সেখানেও হোঁচট খাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। আগামী সেপ্টেম্বরে ইকুয়েডর ও প্যারাগুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে ব্রাজিল। তার আগে দলটি কতটা গুছিয়ে উঠতে পারে, সেটিই এখন সময়ের ব্যাপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *