ফ্রান্সকে বিদায় করে ইউরোর ফাইনালে স্পেন

Share Now..

কার্ড ও ইনজুরির কারনে দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন খেলোয়ার নেই। তাইতো স্পেনকে ফাইনালে নিতে প্রয়োজন ছিল নতুনদের জাদুকরী পারফরম্যান্স। আর এই পারফরম্যন্স করলেন টুর্নামেন্টজুড়ে জাদুকরী ফুটবল খেলা ১৬ বছর বয়সী ইয়ামাল।

বয়স ১৭ হতে বাকি মাত্র ৩ দিন। ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে ১৬ বছর বয়সে প্রথম গোল করা ফুটবলার হতে আজ লক্ষ্যভেদ করতেই হতো লামিনে ইয়ামালকে। এর মধ্যে সেমিফাইনালের মঞ্চে ৯ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পের সহায়তায় রানদাল কোলো মুয়ানি ফ্রান্সকে এগিয়ে দিলে চাপ বাড়ে স্পেনের।

ম্যাচের আগের এমন চাপ সামলে ইয়ামাল দলকে ফাইনালে নিতে পারবেন কি না সে প্রশ্ন তুলেছিলেন ফরাসি মিডফিল্ডার আদ্রিয়েন রাবিও। প্রশ্নের জবাব দিতে এরচেয়ে বড় মঞ্চ আর কি হত পারত! সুযোগ হাত ছাড়া করলেন না ইয়ামালও। তাঁর রেকর্ড গড়া গোলেই পিছিয়ে থাকা স্পেন ফেরে সমতায়।

এরপর দারুণ এক গোলে স্পেনের হয়ে ব্যবধান ২–১ করেন দানি অলমো। এই স্কোরলাইন চেষ্টা করেও আর বদলাতে পারেনি এমবাপ্পের ফ্রান্স। ২–১ গোলের জয়েই এক যুগ পর ইউরোর ফাইনাল নিশ্চিত করল স্পেন।  

মিউনিখে আজ গোল করে দলের জয়ে অবদান রাখার সঙ্গে ইয়ামাল খেলেছেনও দুর্দান্ত। তাঁর পায়ে বল মানেই যেন দারুণ কিছুর সম্ভাবনা। অ্যাটাকিং থার্ডে ফ্রান্সের জন্য রীতিমতো আতঙ্ক হয়েই ছিলেন এই বার্সেলোনা তারকা।

বিপরীতে এই ম্যাচে চোখ ছিল এমবাপ্পের ওপরও। নাক ভাঙার পর আজ প্রথমবারের মতো মাস্ক ছাড়াই খেলতে নেমেছিলেন ফ্রান্স অধিনায়ক। আগের ম্যাচগুলোর তুলনায় আজ যথেষ্ট ভালোও খেলেছেন। শুরুতে দলকে এগিয়ে দেওয়া গোলের নির্মাতাও ছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত হাসি মুখে মাঠ ছাড়তে পারেননি। হতাশা নিয়েই বিদায় নিলেন ইউরোর মঞ্চ থেকে।

আজ ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই নিজেদের লক্ষ্য স্পষ্ট করে দেয় স্পেন। তবে পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি ফ্রান্সও। শুরুতে মিডফিল্ড দখলে রাখার চেষ্টা করে দিদিয়ের দেশমের দল।

এর মধ্যে ম্যাচের ৫ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত স্পেন। কিন্তু লামিনে ইয়ামালের দুর্দান্ত এক ক্রসকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ফাবিয়ান রুইজ। তাঁর হেড চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। পাল্টা আক্রমণে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন ৩৮ বছর বয়সী ডিফেন্ডার জেসুস নাভাস।

নিষেধাজ্ঞার কারণে দানি কারভাহাল না থাকায় ‘বুড়ো’ নাভাসের কাঁধেই ছিল ছিল এমবাপ্পেকে থামানোর দায়িত্ব।   তবে প্রথম যাত্রায় সফল হলেও দ্বিতীয়বার আর এমবাপ্পেকে আটকাতে পারেননি নাভাস। উসমান দেম্বেলের কাছ থেকে বল পেয়ে নাভাসের মার্কিংয়ের ফাঁদ এড়িয়েই এমবাপ্পে অসাধারণ একটি ক্রসে বল বাড়ান কোলো মুয়ানির উদ্দেশে। নিঁখুত হেডে বল জালে জড়াতে বেগ পেতে হয়নি এই স্ট্রাইকারের।

গোল খেয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে স্পেন। প্রেসিং ও পাসিংয়ের শক্তি দেখিয়ে একাধিকবার আক্রমণেও যায় তারা। যদিও সেসব আক্রমণ গোলের জন্য যথেষ্ট ছিল না। উল্টো ১৯ মিনিটে দারুণ এক পাল্টা–আক্রমণে স্প্যানিশ ডিফেন্স কাঁপিয়ে দেন এমবাপ্পে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য গোলটি পাওয়া হয়নি তাঁর।

অবশেষে ২১ মিনিটে দেখা মিলে বহুল প্রতীক্ষিত  ইয়ামাল–জাদুর। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেললেও গোল পাওয়া হচ্ছিল না ইয়ামালের। সেমিফাইনালের মঞ্চটাকে নিজের করে নিতেই যেন সবাইকে অপেক্ষায় রেখেছিলেন এই কিশোর।

স্পেনের আক্রমণের ধারায় ইয়ামাল বলটি পান বক্সের কিছুটা বাইরে। তবে কি ঘটতে যাচ্ছে তা হয়তো তখনো কেউই আন্দাজ করতে পারেননি! কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখা মেলে জাদুকরের জাদুর। ২৫ মিটার দূর থেকেই চার ডিফেন্ডারকে হতভম্ব করে অবিশ্বাস্য এক শটে বাঁ পাশের ওপরের কোনা দিয়ে বল জালে জড়ান ইয়ামাল। অনেক অনেক দিন মনে রাখার মতো এক গোল বটে!

এই গোলে ইউরোতে নতুন এক ইতিহাসও লিখলেন ১৬ বছর বয়সী এ উইঙ্গার। ইয়ামালই এখন ইউরোতে ১৬ বছর বয়সে গোল করা একমাত্র ফুটবলার। পাশাপাশি এই গোলে ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হলেন ইয়ামাল (১৬ বছর ৩৬২দিন)। এর আগে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ১৭ বছর ২৩৯ দিনে গোল করেছিলে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল সম্রাট পেলে।

সমতাও ফিরিয়েও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখে স্পেন। যা ২৫ মিনিটে তাদের এনে দেয় নিজেদের দ্বিতীয় গোলটিও। দুর্দান্ত এক আক্রমণে নাভাসের শট প্রতিহত হয়। ফিরতি বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শট নেন অলমো। যা ইউলেস কুন্দের গায়ে জালে জড়ালে ২–১ গোলে এগিয়ে যায় স্পেন।

বিরতির পর শুরুতেই গতিময় আক্রমণে ফ্রান্স ডিফেন্সকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল স্পেন। তবে দ্রুত পাল্টা জবাব দিয়ে স্পেনকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেও ফ্রান্সও। পরপর দুইবার আক্রমণে গিয়ে স্প্যানিশ সমর্থকদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেন ফরাসি ফরোয়ার্ডরা। যদিও বারবার নিরাশ হতে হচ্ছিল তাঁদের।

দলীয় প্রচেষ্টা কাজে না আসায় এমবাপ্পে একক নৈপুণ্যের কিছু ঝলকও দেখিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। গোলটা অধরাই থেকে যাচ্ছিল বারবার। ৭৫ মিনিটে আবারও সুযোগ হাতছাড়া করে ফ্রান্স। আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও স্পেনকে যতটা কোণঠাসা করার কথা ততটা পারেনি ফ্রান্স। ৮১ মিনিটে ইয়ামালের শট বার ঘেঁসে বাইরে না গেলে ম্যাচটা তখনই শেষ হয়ে যেতে পারত। ৮৬ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে সুযোগ নষ্ট করেন এমবাপ্পে। ম্যাচের বাকি সময়ে চেষ্টা করেও ফ্রান্সকে আর সমতায় ফেরাতে পারেননি এমবাপ্পে–গ্রিজমানরা। দারুণ জয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে স্পেনই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *