হাজারো সন্তানের বাবা, নিজেই জানেন না সন্তানের সংখ্যা কত! 

Share Now..

নিজেকে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রকে বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন শত শত সন্তানের জন্ম দেওয়া একজন ডাচ শুক্রাণুদাতা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।  

গত ৩ জুলাই নেটফ্লিক্সে জোনাথন জ্যাকব মায়ার-এর শুক্রাণু ব্যবহার করে সন্তান ধারণ করা নারীদের নিয়ে তৈরি করা তথ্যচিত্রটি মুক্তি পায়। জ্যাকব কত সন্তানের বাবা তা জানার পর ‘ধোঁকা, খারাপ এবং রাগ’ বোধ করেছেন বলে জানান তাদের মধ্যে একজন নারী। 

এদিকে জ্যাকব বিবিসিকে বলেছেন, তথ্যচিত্রটি প্রতারণামূলক। কারণ এর মাধ্যমে যেসব পরিবার তার প্রতি কৃতজ্ঞ তাদের চেয়ে অসুখী মানুষগুলোকেই বেশি প্রধান্য দেওয়া হয়েছে। 

তবে তথ্যচিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক বলেছেন, বেশিরভাগ পরিবারের খুশি থাকার দাবিটি সম্পূর্ণ অসত্য। সাক্ষাৎকারে জ্যাকব জানান, শত শত সন্তানের বাবা হওয়ার বিষয়টিকে তিনি একদমই কোনো ভুল হিসেবে দেখেন না। 

৪৩ বছর বয়সী জ্যাকব নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া তথ্যচিত্রটির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে গত বুধবার বিবিসি রেডিও ফোর-এ ওইমেনস আওয়ার প্রোগ্রামে কথা বলেছেন তিনি। 

জ্যাকব বলেছেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে (তথ্যচিত্রটির) নাম দ্য ম্যান উইথ ১০০০ কিডস রেখেছে। অথচ এর নাম হওয়া উচিত ছিল যে, শুক্রাণুদাতা পরিবারগুলোকে ৫৫০টি সন্তানের গর্ভধারণে সাহায্য করেছেন। তার মানে শুরু থেকেই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারিত এবং বিভ্রান্ত করছে।

জ্যাকব আরও বলেছেন,  তিনি ২৫০ পরিবারকে শুক্রাণু দিয়ে সাহায্য করলেও নেটফ্লিক্স পাঁচটি অসন্তুষ্ট পরিবারকে বেছে নিয়েছে। এই পাঁচটি পরিবারের বাইরে অন্যান্য পরিবারগুলোর বক্তব্য নিশ্চয়ই ভিন্ন রকমের হবে বলে। 

অন্যদিকে নেটফ্লিক্স ওমেন’স আওয়ারকে বলেছে, তারা জ্যাকবের সাক্ষাৎকার নিয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। তবে তথ্যচিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক নাটালি হিল প্রোগ্রামটির সঙ্গে কথা বলেছেন।

নাটালি হিল বলেছেন, আমি গত চার বছর ধরে জোনাথনের মিথ্যার কারণে প্রভাবিত হওয়া পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৪৫ বা ৫০টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। 

তিনি বলেন, তার মিথ্যার বিষয়ে ৫০টি পরিবার আদালতে গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছে এবং বিচারকের কাছে অনুরোধ করেছেন যেন তিনি থামেন। তাই জোনাথনের গুটিকয়েকের সঙ্গে আলাপ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ অসত্য।

গত ১৭ বছর ধরে শুক্রাণু দিচ্ছেন জ্যাকব। অনেক ক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তিগতভাবে শুক্রাণু দিয়েছেন। অর্থাৎ কোনো ক্লিনিকের মাধ্যমে না দিয়ে সরাসরি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

জ্যাকবকে শুক্রাণুদাতা হিসেবে বেছে নেওয়া কয়েকজন নারী বলেন, তিনি কত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সে বিষয়ে তাদের কাছে স্পষ্ট করেননি জ্যাকব।

‘আমি দ্বিধাগ্রস্ত, কারণ সে আমাকে তখন বলেছিল যে সে পাঁচটি পরিবারকে শুক্রাণু দিচ্ছে’, নাটালি নামের একজন মা ওইমেসন আওয়ারকে জানান। তিনি আরও বলেছেন, ২০২১ সালে আমি একটি সংবাদপত্রে পড়লাম যে এমন পরিবারের সংখ্যা আসলে শত শত ছিল। আর তাই আমি দ্বিধাগ্রস্ত এবং তার পদ্ধতির সঙ্গে একমত নই। 

শুক্রাণু নেওয়া কিছু নারী জ্যাকবকে একজন নার্সিসিস্ট হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর অন্যরা পরামর্শ দিয়েছেন যে তিনি জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

৫৫০ সন্তানের জন্ম দেওয়ার সংখ্যাটিকে তিনি অনেক বেশি মনে করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জ্যাকব বলেন, একজন সাধারণ মানুষের জন্য (বেশি), তবে একজন শুক্রাণু দাতার জন্য না। 

তিনি বলেছেন, একজন শুক্রাণু দাতার জন্য এটা খুবই স্বাভাবিক। তারা শত শত শিশুর মধ্যে যায়। তারা (ক্লিনিকগুলো) দাতার শুক্রাণু বিভিন্ন দেশে পাঠাবে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী ১১টি ক্লিনিকে দান করা শুক্রাণু থেকে জন্ম নেওয়া ১০২টি সন্তানের বাবা জ্যাকব- এমন খবর আসার পর ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডে তার শুক্রাণু দান করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে।

তবে জ্যাকব ২০২৩ সাল পর্যন্ত অন্যান্য দেশে শুক্রাণু দান অব্যাহত রাখেন। পরবর্তী সময়ে একজন নারী এবং তাকে সমর্থন দেওয়া একটি ফাউন্ডেশন জ্যাকবের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন।

তার যুক্তি ছিল জ্যাকব তার সন্তানদের জন্য অজাচারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন।

জ্যাকব তার সাক্ষ্যে, ৫০০-৬০০ সন্তান থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে আদালত জানান যে তিনি বিভিন্ন মহাদেশে এক হাজার পর্যন্ত সন্তান জন্ম দিয়েছেন। 

শেষ পর্যন্ত বিচারক জ্যাকবকে নতুন কোনো বাবা-মাকে শুক্রাণু দানে নিষেধ করেন। সেইসঙ্গে জানান, এমনটি করলে জ্যাকবকে প্রতিবার দানের জন্য এক লাখ ইউরো (৮৫ হাজার পাউন্ড) করে জরিমানা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *