ট্রাম্পকে গুলির কারণ এখনো অজানা

Share Now..

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টার কী কারণ থাকতে পারে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তদন্ত সংস্থা এফবিআইর কাছে। তবে এটা যে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রবাদের কারণে ঘটেছে এবং হামলাকারী যে একাই ঘটিয়েছে সেই বিষয়ে সংস্থাটি নিশ্চিত। শনিবার পেনসিলভেনিয়ায় নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এটি তার ডান কান ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়। এতে এক দর্শক নিহত এবং দুই জন আহত হয়। গুলি চালানো থমাস ম্যাথিউ ক্রুককেও গুলি করে হত্যার ঘটনায় সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এএফবিআই এ ঘটনার পেছনে নিরাপত্তার ব্যর্থতাকে দোষারোপ করছেন। এদিকে ট্রাম্প বলেছেন, গুলির পর তার কাছে মনে হয়েছিল যে তিনি মরে যাচ্ছেন।

তদন্তের সর্বশেষ
ট্রাম্পের ওপর হামলার নেপথ্যে উদ্দেশ্য কী, তা খুঁজতে সন্ত্রাস দমন সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। তদন্তকারী সংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে হামলাকারী একাই ছিলেন। তবে তদন্ত আরও সামনের দিকে গেলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। ট্রাম্পকে গুলি করতে ব্যবহৃত বন্দুকটি উদ্ধার করেছে এফবিআই। তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, ঐ অস্ত্রটি এআর-স্টাইল ৫৫৬ রাইফেল। লাইসেন্সও ছিল। তবে সেই লাইসেন্স ছিল ক্রুকের বাবার নামে। তবে সেই রাইফেলটি কীভাবে ক্রুক ব্যবহার করলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, তার বাবার নামে ২০টি বন্দুকের লাইসেন্স ছিল।

ট্রাম্পের ওপর বন্দুকধারীর হামলার ঘটনার তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে এফবিআই এবং সিক্রেট সার্ভিস। প্রেসিডেন্ট বাইডেনও তার ভাষণে স্পষ্ট করেছেন যে, এই হামলাকে ঘিরে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখনো অজানা। এফবিআই এজেন্টরা বলেছে যে তারা হামলার পেছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে সে বিষয়ে তদন্ত করছে এবং তাদের বিশ্বাস যে বন্দুকধারী একাই এই কাজ করেছে। বাইডেন বলেন, ‘আমরা এখনো বন্দুকধারীর উদ্দেশ্য জানি না। আমরা তার মতামত বা সংশ্লিষ্টতা জানি না। আমরা জানি না তার কোনো সাহায্য বা সমর্থন ছিল নাকি সে অন্য কারো সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল কি না।’

ট্রাম্পকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বে ছিল সিক্রেট সার্ভিস। এখন এই সিক্রেট সার্ভিসের ওপরেই তদন্ত করছে একাধিক সংস্থা এবং বিভাগ। এফবিআইর দাবি, এটি বেশ ‘আশ্চর্যজনক’ যে একজন বন্দুকধারী কীভাবে মঞ্চে তাক করে গুলি চালাতে পারল, কেউ তাকে আগেই কেন পরাস্থ করল না। এফবিআইর স্পেশাল এজেন্ট কেভিন রোজেক বলেছেন, বন্দুকধারী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন বলে এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে তার হামলার পেছনে স্পষ্ট উদ্দেশ্যও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, সন্দেহভাজনদের মোবাইল ফোন এবং হামলায় ব্যবহৃত বন্দুক পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য এফবিআইর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বন্দুকধারীর ব্যাপারে যা জানা গেছে তা হলো, ঐ বন্দুকধারীর নাম থমাস ক্রুকস, যার বয়স ২০ বছর। তিনি ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি পেশায় ছিলেন পেনসিলভানিয়ার একটি নার্সিং হোমে রান্নাঘরের সহায়ক।

রাষ্ট্রীয় ভোটার রেকর্ড থেকে জানা যায়, ক্রুকস একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান ভোটার ছিলেন। যিনি ২০২১ সালে উদারপন্থী প্রচারাভিযান গ্রুপ অ্যাক্টব্লুকে ১৫ ডলার দান করেছিলেন। ক্রুকসের অতীতের কোনো অপরাধের বিষয়ে বা তিনি কোন বিশেষ মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন কি না, এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। তিনি পেনসিলভেনিয়ার একটি অস্ত্র প্রশিক্ষণ ক্লাবেরও সদস্য বলে জানা গেছে। তার গাড়িতে সন্দেহজনক ডিভাইস পাওয়া গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এটি কী ধরনের ডিভাইস তা শনাক্তে প্রযুক্তিবিদরা কাজ করছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার রাষ্ট্রীয় ভাষণে জানিয়েছেন এই ঘটনায় স্বাধীনভাবে তদন্ত চলছে এবং তদন্তে কোনো অগ্রগতি হলেই তিনি সবাইকে অবহিত করবেন। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী এবং সাবেক ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প বন্দুকধারীকে ‘দানব’ বলে অভিহিত করেছেন এবং আমেরিকানদের ‘ঘৃণার ঊর্ধ্বে ওঠার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

নিরাপত্তার ব্যর্থতার অভিযোগ এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ এজেন্ট কেন গ্রে এই ঘটনার পেছনে নিরাপত্তার ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করেছেন। টুডে প্রোগ্রামকে গ্রে বলেছেন যে, বন্দুকধারী যতটা কাছাকাছি গেছে, তাতে এটাই স্পষ্ট হয় যে, সেখানে নিরাপত্তায় ব্যর্থতা ছিল এবং এফবিআই এই ধরনের সমাবেশে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এখনো পর্যন্ত এই ঘটনাকে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের একটি সম্ভাব্য ঘটনা হিসেবে নিয়ে তদন্ত করছে এফবিআই, যদিও হামলার উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। গ্রে বলেন, এ ধরনের যে কোনো সমাবেশের আগে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরো এলাকাটি জরিপ করে থাকেন। এটা নিশ্চিত হতে যে সেখানে কোনো সম্ভাব্য হুমকি রয়েছে কি না। যদি আশঙ্কা থাকে তাহলে সেটা কি ধরনেরর হুমকি হতে পারে, কোথা থেকে আসতে পারে এবং কীভাবে ভিড় থেকে কাউকে বের করা যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা করে।

গ্রে সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্পকে ঘটনাস্থল থেকে সরাতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ‘ভয়ংকর দীর্ঘ সময়’ লেগেছিল। সেখানে যদি কোনো দ্বিতীয় বন্দুকধারী থাকত এই সময়ে তিনি আরেকটি সুযোগ পেয়ে যেতেন। বিবিসি ভেরিফাইড ভিডিও বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছে যে, বন্দুকধারী সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থেকে দেড়শ’ মিটারেরও কম দূরত্বের একটি ওয়্যার হাউজের ছাদ থেকে গুলি করে। তবে একটি সিক্রেট সার্ভিস স্নাইপার দিয়ে পালটা গুলি চালিয়ে বন্দুকধারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। পরের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সশস্ত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থারা অস্ত্রসহ সেদিকে ছুটে যাচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রেসিডেন্সিয়াল রাজনীতিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। ম্যাগনেটিক স্ক্রিনিং, বুলেটপ্রুফ লিমোজিন এবং ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও এই ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করেছে।

মনে হচ্ছিল আমি মরে যাচ্ছি: ট্রাম্প

ট্রাম্প বলেছেন, তার কান ছিঁড়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার পর তার কাছে মনে হয়েছিল যে তিনি মরে যাচ্ছেন। গুলির ঘটনার পর শনিবার রাতে প্রথম বারের মতো রক্ষণশীল মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন এক্সামিনারকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, ঈশ্বর অথবা ভাগ্যের জেরে রক্ষা পেয়েছি। ট্রাম্প আরো বলেন, ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাপারটি ছিল, আমি কেবল মাথা ঘুরিয়েছিলাম তা নয়, সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে আমার মাথা ঘোরাতে পেরেছিলাম। যে বুলেটটি আমার কান ভেদ করে গেছে, তা সহজেই আমাকে মেরে ফেলতে পারত।’ সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার মারা যাওয়ার কথা ছিল, আমার এখানে থাকার কথা নয়। এদিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গোপন নথির মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত।’

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ট্রাম্প সমাবেশে উপস্থিত জনতার দিকে তাকিয়ে দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘ঐ মুহূর্তে দর্শক-শ্রোতারা যখন উঠে দাঁড়িয়েছিল এবং তাদের কাছ থেকে শক্তি এসেছিল। আমার সে মুহূর্তে কেমন বোধ হচ্ছিল তা ব্যাখ্যা করা কঠিন, তবে আমি জানতাম পুরো বিশ্ব আমাকে দেখছে।’ ওয়াশিংটন এক্সামিনারকে ট্রাম্প আরো বলেন, আমি জানতাম যে, ইতিহাস এর বিচার করবে এবং আমি জানতাম, আমাকে তাদের জানাতে হবে যে আমরা ঠিক আছি।

ট্রাম্প বলেন, তিনি তার জাতীয় সম্মেলনের বক্তৃতা সম্পূর্ণ নতুনভাবে লিখবেন। সেখানে বাইডেনকে সমালোচনা করার পরিবর্তে ঐক্যের বার্তায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আমি যে বক্তৃতা দেব, সেটা বিশেষ কিছু হতে যাচ্ছে। এ বক্তব্য এখনো দেওয়া হয়নি। তবে দিলে সেটা অসাধারণ বক্তব্যের মধ্যে একটি হতে চলেছে।’ তিনি আরো বলেন, এ বক্তব্যের বেশির ভাগই কথাই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিভিন্ন নীতিকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘সত্যি বলতে, এ বক্তৃতা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু হবে। দেশকে এক করার এটাই সুযোগ। আমাকে সে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’ গোলাগুলির সে মুহূর্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানতাম যে পৃথিবী এ ঘটনা দেখছে। আমি জানতাম যে, ইতিহাস এর বিচার করবে এবং আমি জানতাম যে, এ মানুষদের জানাতে হবে যে, আমরা ঠিক আছি।’ সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্টের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হবেন। নির্বাচনে তার রানিংমেট কে হবেন—তা-ও তিনি এ সম্মেলন থেকে ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার থেকে শুরু হওয়া রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দিতে উইসকনসিনে পৌঁছেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঐ হামলার জেরে তার নিজের নির্ধারিত প্রচারণামূলত কার্যক্রম স্থগিত করেছেন এবং পিছিয়ে দিয়েছেন। বাইডেন আজ মঙ্গলবার তার প্রচারাভিযানে ফিরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গোপন নথির মামলা খারিজ
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গোপন নথির মামলা খারিজ করেছেন বিচারক আইলিন ক্যানন। গতকাল সোমবার এক রায়ে ক্যানন বলেন, বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথের নিয়োগ সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। ৯৩ পৃষ্ঠার রুলিংয়ে বিচারক ক্যানন বলেন, এর কারণ বিশেষ কাউন্সেল সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না যে ট্রাম্প গোপন নথি স্থানান্তর করে সঠিক বা বেঠিক কাজ করেছেন। ক্যানন অরো লিখেছেন: ‘শেষ পর্যন্ত, মনে হচ্ছে সাম্প্রতিক যুগে ‘নিয়ন্ত্রক’ বিশেষ কাউন্সেল নিয়োগে নির্বাহীর ক্রমবর্ধমান স্বাচ্ছন্দ্য সামান্য বিচারিক যাচাই-বাছাইসহ একটি অ্যাডহক প্যাটার্ন অনুসরণ করেছে।’—বিবিসি ও সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *