ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিতে হতে পারে ডিপ্রেশন

Share Now..

শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের মধ্যে একটি ম্যাগনেসিয়াম। এই উপাদানটি শরীরের বিভিন্ন বিপাকে সহায়তাসহ অনেক প্রয়োজনীয় কাজে অংশগ্রহণ করে। শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদা পূরণ না হলে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। হতে পারে মানসিক সমস্যাও। কিন্তু কিভাবে বোঝা যায় ম্যাগনেসিয়ামের স্বল্পতা রয়েছে? ম্যাগনেসিয়ামের গুরুত্ব নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানের অধ্যাপক নাজমা শাহীনের পরামর্শ রইলো: 

ম্যাগনেসিয়াম বিপাকে সহায়তা করে
শরীরের অসংখ্য এনজাইমের মধ্যে ৩০০টি এনজাইমের কো-ফ্যাক্টর হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম কাজ করে। ফলে এই উপাদান এনজাইমের ক্রিয়ায় সাহায্য করে। পুষ্টি উপাদান কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এগুলোর বিপাকে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম।এ ছাড়া গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতে ভূমিকা রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ম্যাগনেসিয়ামের বিকল্প নেই। এটি ন্যাচারাল ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার হিসেবে কাজ করে রক্তের নালিগুলোকে স্বাভাবিক রাখে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের জেনেটিক উপাদান যেমন ডিএনএ, আরএনএ তৈরি, সেলুলার ফাংশান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরে শক্তি উৎপাদন করে 
শরীরে শক্তি উৎপাদনের জন্য খাদ্য থেকে এটিপি তৈরি হয়। এটিপি তৈরি এবং শক্তি সংরক্ষণে ম্যাগনেসিয়ামের এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শরীরের নতুন কোষ তৈরি, কোষের ক্ষয়পূরণ ইত্যাদি কাজে প্রোটিন প্রয়োজন। আর এই প্রোটিন সংশ্লেষণের কাজে ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে। এমনকি ইনসুলিনের কার্যকারিতা সচল রাখতে ম্যাগনেসিয়াম কাজ করে। ইনসুলিনের কার্যক্রম সচল থাকলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য ডায়াবেটিক রোগীদের শরীরে পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম থাকা জরুরি।

হৃদরোগ ও হাড়ের সংকট দূর করতে সাহায্য করে
মাংসপেশির সংকোচন প্রসারণ, হার্টবিটের ছন্দ বজায় রেখে হার্টকে সুস্থ রাখা, এবং সকল স্নায়ুর কার্যসম্পাদনে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম। আমাদের শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম থাকে হাড়ের মধ্যে। এটি হাড়ের গঠন, হাড়ের ম্যাট্রিক্স সংশ্লেষণে কাজ করে। ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির কিছু লক্ষণ 

মাংসপেশিতে ব্যথা
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে মাসল ক্র্যাম্পস বা মাংসপেশিতে প্রদাহ,মাসল স্পাজম অর্থাৎ পেশি অনিচ্ছাকৃত এবং জোর করে সংকুচিত হয়ে পড়া এবং শিথিল হতে না পারা এমন সমস্যা দেখা যায়। ক্লান্তি
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে সবসময় ক্লান্ত লাগতে পারে। যেমন শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগা, শক্তি না পাওয়া, অবসাদগ্রস্ত থাকা।

মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ম্যাগনেসিয়াম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে ডিপ্রেশন, উদ্বিগ্নতা দেখা দিতে পারে। যারা আগে থেকেই এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত তাদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

হাত-পায়ে ঝিম ধরা
অনেক সময় হঠাৎ করে কিছু সময় হাত-পায়ের কিছু অংশ অসাড় হয়ে যায়, অনুভূতি পাওয়া যায় না, নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়।

অনিদ্রা
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিতে সময়মতো ঘুম আসতে চায় না। ঘুমালেও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হয় না। অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন
যেহেতু ম্যাগনেসিয়াম হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, তাই ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন দেখা দেয়।

অভাব পূরণে যা করবেন 
বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার ম্যাগনেসিয়ামের উৎস। চীনাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, মিষ্টিকুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি ইত্যাদিতে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এ ছাড়াও ডাল, সয়াবিন, ছোলা থেকে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার যেমন, লাল চাল, লাল আটা, লাল চিড়া, রোলড ওটস, বার্লি ইত্যাদিতে ভালো পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। সামুদ্রিক মাছে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। ইলিশ, স্যামন, টুনা ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *