জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন আদিবাসী ক্রিকেটার অনিকের 

Share Now..

মেঘলা আকাশ, ঘুরি ঘুরি বৃষ্টির ফোটাও পড়ছে মাঝে মাঝে। এর মধ্যেই শনিবার মিরপুরে হোম অব ক্রিকেট খ্যাত শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলন ও ট্রায়াল দিয়েছেন ৩০ তরুণ ক্রিকেটার। আগামী ২০২৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জন্যই এদের নিয়ে চলছে দল গঠনের পরিকল্পনা। এদের মধ্যেই একজন অনিক দেব বর্মন। উচ্চতায় প্রায় ৬ ফুট তিন ইঞ্চি। ফলে এই করণেই দূর থেকে সবার চেয়ে খানিকটা আলাদা লাগছিলো তাকে। 

এর মধ্যেই শোনা গেলো এই তরুণ ত্রিপুরা সম্প্রদায় থেকে এসেছে। এতে করে সবার আগ্রহ তাকে নিয়ে আরও বেড়ে গেলো। এর কারণও অবশ্য রয়েছে। কেননা ক্রিকেটে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে ক্রিকেটে খুব বেশি কাউকে উঠে আসতে দেখা যায়না, খুঁজলেও দুই একজনের নাম পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে খানিকটা সন্দেহ। পরে অনুশীলন শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন অনিক। সেখানেই জানা গিয়েছে তিনি একজন বোলার। এসময় শুনিয়েছেন নিজের উঠে আসার গল্পও।  সচরাচর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের বাংলাদেশের ফুটবল, কাবাডি ও অন্যান্য খেলার দিকে ঝোঁক থাকে বেশি। তাই সেসব খেলায় মূল দলেও তাদের দেখা যায় তবে ক্রিকেটে চিত্র ভিন্ন। তবে অনিক যেনো মুদ্রার উল্টো পিঠ। তিনি ভালোবাসেন ক্রিকেটকে। এ নিয়ে বলেন, ‘ক্রিকেট আমি অনেক ভালোবাসি, তাই এটাতে আসা। ফুটবল আমি জানি না।’ 

কেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ কম তা জানিয়ে অনিক বলেন, ‘আমাদের খেলার জন্য মাঠ থাকে না। আমি তো চলে এসেছিলাম শহরে (শ্রীমঙ্গলে) এ জন্য সুযোগ পেয়েছিলাম (ক্রিকেট খেলার)।’ এসময় ক্রিকেটে নিজের উঠে আসার গল্প শুনিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যখন ছোটো ছিলাম বড় ভাইদের সঙ্গে খেলতাম। আমাদের এলাকার বিদ্যুৎ ছিলো না। তখন একটা রাবারের বল ছিলো ঐটা দিয়ে খেলতাম। আমাকে দলে নেওয়া হত না। বড় ভাইরা বল মাঠের বাহিরে পাঠালে তা কুড়ানোর জন্য পাঠাতো আমাকে। যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি তখন হাল্কা বোলিং শুরু করি। সে সময় একটু একটু রানআপ নিয়ে বোলিং করতাম। ধীরে ধীরে বড়ভাইদের সঙ্গে খেলা শুরু করলাম। পঞ্চম শ্রেণীতে উঠার পর পড়াশুনার জন্য শ্রীমঙ্গল শহরে চলে আসলাম। ঐখানে গিয়ে টেপ টেনিস দিয়ে খেলতাম ছোটো একটা একাডেমিতে ভর্তি হই।’ 

এদিকে একাডেমিতে থাকালীন ২০১৯-২০ এ মৌলভীবাজার জেলার অনূর্ধ্ব-১৬ ট্রায়ালে ভালো বোলিং করে টিকে যান অনিক। যদিও মূল স্কোয়াডে জায়গা পাননি। তবে চেষ্টা চালিয়ে গেলেন সেই ফলাফল পেলেন ২০২১ সালে। ঐ বছর মৌলভীবাজারে স্কুল ক্রিকেটে দারুণ বোলিং করে নজরে আসেন সবার। শিক্ষকদের পরামর্শে হবিগঞ্জ জেলা দলের ট্রায়ালে নাম দেন তিনি। সেখানেও নিজের প্রতিভা দিয়ে কোচদের মনোযোগ কাড়েন। ফোনে তারা সেটি জানান বিসিবির কোচ নাজমুল হোসেনকে। জাতীয় দলের সাবেক এই পেসার অনিকের উচ্চতার কথা জেনেই বোলিংয়ে ভিডিও দেখতে চান। ভিডিও ক্লিপ দেখে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়নি তার। দ্রুতই জেলা কোচদের জানিয়ে দেন, জেলা দলে যেন নেওয়া হয় দীর্ঘদেহী এই পেসারকে। 

এরপর বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এ পর্যন্ত উঠে আসা। বর্তমানে তিনি অনূর্ধ্ব ১৯ দলের সঙ্গে অনুশীলন করছেন। স্বপ্ন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর। অনিক বলেন, ‘আমার স্বপ্ন, আমি এক দিন বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলব। এটাই স্বপ্ন। এখন যে মঞ্চটা পেয়েছি, মনে হচ্ছে সামনে এগোতে পারি। কোচরা বলেছেন, ‘তুমি ভালো বোলিং করো। সামনে আরও ভালো হবে।’ 

ক্রিকেটে তার আইডল তিন পেসার তার মধ্যে রয়েছেন টাইগার গতি তারকা তাসকিন আহমেদও। বাকী দুইজন পাকিস্তানের শোয়েব আখতার ও অস্ট্রেলিয়ান ব্রেট লি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অনিকের উঠে আসাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বড় পাওয়া হিসেবে দেখছে। বিসিবির গণমাধ্যম বিভাগের ম্যানেজার জাহিদুর রহমান বলেছেন, ‘অনিক দেব আমাদের জন্য বড় পাওয়া। আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের যেই প্রাথমিক স্কোয়াড আছে সেখানে আছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থেকে সেভাবে আমাদের ক্রিকেটার উঠে আসে না। এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা ভালো দিক।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *