ভুল রক্ত প্রয়োগে গর্ভের শিশুর মৃত্যু, মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন

Share Now..

সাথী খাতুন (১৮) নামের এক অন্তঃসত্ত্বার শরীরে ভুল রক্ত প্রয়োগ করায় গর্ভের প্রায় ৯ মাস বয়সি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভের মৃত শিশুকে বের করা হলেও জীবন সংকটে পড়েছেন ওই নারী। গুরুদাসপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তার চিকিৎসা চলছিল।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাথী খাতুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে মৃত শিশুর ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার সকালেই নাটোর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। সাথী খাতুন গুরুদাসপুর উপজেলার সাবগাড়ি গ্রামের আব্দুস সালাম মণ্ডলের মেয়ে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে সাথী খাতুন ইত্তেফাককে বলেন, আলপনা ক্লিনিকে রক্ত গ্রহণের পরপরই তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। দুই বছরের সংসারে এটিই ছিল তার প্রথম সন্তান। অথচ ভুল রক্ত প্রয়োগে তার গর্ভের সন্তানটি হত্যা করা হয়েছে। তিনিও জীবন সংকটে পড়েছেন। তিনি এর সঙ্গে জড়িতদের কঠিন শাস্তির দাবি করেছেন।

ওই নারীর স্বামী খায়রুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, রক্তশূণ্যতা দেখা দেওয়ায় গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারের নিউ আলপনা ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ভর্তি করে ছিলেন গত রোববার (২২ সেপ্টম্বর) সকালে। সেখানে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে ‘এ পজেটিভ’ বলা হয়। তাৎক্ষণিক ‘এ পজেটিভ’ গ্রুপের এক ব্যাগ রক্ত সাথীর শরীরে প্রয়োগ করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। রক্ত প্রবেশের পরপরই শ্বাসকষ্ট এবং শরীরজুড়ে লাল চাকার মতো হয়ে যায়। একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় গর্ভের শিশুর নড়াচড়া। পরিস্থিতি খারাপ হলে সোমবার দুপুরে স্ত্রী সাথী খাতুনকে গুরুদাসপুর পৌর সদরের হাজেরা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর জানতে পারেন স্ত্রীর শরীরে ভুল রক্ত প্রয়োগ করায় গর্ভের সন্তান মারা গেছে। হাজেরা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ইসলাম সাগর বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ওই নারীকে তার ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর পুনরায় রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে দেখা যায়, অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তের গ্রুপ ‘ও পজেটিভ’। অন্য ক্লিনিক থেকে ভুল রক্ত প্রয়োগ করায় সাথীর শরীরে নানা ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে তারা সোমবার রাত ৯টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভের মৃত শিশুটি বের করেন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে সাথী খাতুনকে রাজশাহী পাঠিয়েছেন তারা।

ওই নারীর স্বামী খায়রুল ইসলাম আরও বলেন, মৃত সন্তানকে নিয়ে তিনি সোমবার রাতেই থানায় হাজির হন। পুলিশের পরামর্শে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এখন শিশুটিকে মর্গে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে তিনি। এই ঘটনায় তিনি নিউ আলপনা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিচার দাবি করেন।

চিকিৎসক চৈতি মুন্সি ইত্তেফাককে বলেন, কোনো ব্যক্তির শরীরে ভুল রক্ত প্রয়োগ করলে হার্ট এ্যাটাক, এলার্জি, জ্বর-ব্যথা, শ্বাসকষ্ঠসহ নানা ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যা চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী নিশ্চিত মৃত্যু।

সোমবার দুপুরে ক্লিনিকে গিয়ে নির্ভরযোগ্য কাউকে পাওয়া যায়নি। আলপনা ক্লিনিকের স্বত্তাধিকারী আলাল উদ্দিন ও সানোয়ার হোসেন মোবাইল ফোন না ধরায় তাদের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। 

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ২০২২ সালে আলপনা ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছিল। ওই ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে ভুল রক্ত প্রয়োগ করা দুঃখজনক। দ্রুত তারা ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গুরুদাসপু থানার ওসি মো. গোলাম সরোয়ার হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, মঙ্গলবার সকালে শিশুর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। শিশুটির পিতা একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *