ঝিনাইদহে ৬৭টি বিসিআইসি সার ডিলারশিপের ৫০টি আওয়ামী লীগের কব্জায়
\ নবচিত্র রিপোর্ট \
ঝিনাইদহে বেশির ভাগ বিসিআইসি সারের ডিলারশিপ আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে থাকায় সার নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশংকা রয়েছে। এসব ডিলারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন মতো সার না দেয়া এবং অতিরিক্ত মূল্যে কালো বাজারে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে অনেক ডিলারের বিরুদ্ধে গোপনে এক ইউনিয়নের সার অন্য ইউনিয়নে বিক্রির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহে ৬ উপজেলায় বিসিআইসি সার ডিলার রয়েছে ৬৭টি। এরমধ্যে ৫০টিই আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপিসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নামে। এরমধ্যে মামলায় হওয়ায় ৮/১০ জন ডিলার পলাতক রয়েছেন। কোটচাঁদপুরে আ’লীগ সভাপতি শাহজাহানের সার গোডাউন লুট হয়ে গেছে। লুটকৃত সার তিনি কি ভাবে সমন্বয় করছেন এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি এখনো পর্যন্ত পলাতক। কালীগঞ্জের প্রগতি ট্রেডার্সের নামে ডিলারশিপ নিয়ন্ত্রন করেন মাহবুব রহমান মহাব্বত। মুল মালিক নারী হওয়ায় তিনি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। যুবলীগ নেতা শিমুল শৈলকুপার বগুড়া ইউনিয়নের ডিলারশিপ নিয়ন্ত্রন করেন। তিনিও মামলার আসামী হয়ে পলাতক। এছাড়া শৈলকুপার নায়েব আলী জোয়ারদার কারাগারে, সদরের নলডাঙ্গা ইউনিয়নের সার ডিলার মোদাচ্ছের, নলডাঙ্গার কাজী আলম ও তাহেরহুদা ইউনিয়নের ডিলার আফজাল হোসেন দীর্ঘদিন পলাতক রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে সার কেনাবেচা হলেও সার নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশংকা তৈরী হয়েছে। অনেক ডিলার রাতের আঁধারে জেলার বাইরেও সার বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। অথচ নিয়ম রয়েছে নিজ ইউনিয়ন ব্যাতিত কোথাও সার বিক্রি করা যাবে না। ডিলার সমিতির একটি সুত্র জানায়, ১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে জেলায় মাত্র ১৩টি বিসিআইসি সারের ডিলার ছিল। এরপর আওয়ামীলীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০০ সাল পর্যন্ত ৫৪টি ডিলার নিয়োগ করে। এরমধ্যে আবার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আ’লীগের এমপিরা কালীগঞ্জে ২টি ও শৈলকুপা উপজেলায় ৩টি ডিলার নিয়োগ দেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১৮ জন ডিলারের মধ্যে ১২টি, কালীগঞ্জে ১৪টি ডিলারের মধ্যে ১৩টি, কোটচাঁদপুরে ৬টির মধ্যে ৪টি, মহেশপুরে ১৩টির মধ্যে ৮টি, শৈলকুপায় ১৫টির মধ্যে ১০টি ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় ১০টির মধ্যে ৬টি আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে বিসিআইসি সার ডিলারশিপ রয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি সারের ডিলার নিয়োগ নীতিমালা-২০০৯ উপেক্ষা করে এসব নেতাদের নামে ডিলারশিপ দেয়া হয় বলেও অভিযোগ। ওই ডিলারদের দিয়ে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কৃষি নীতিমালা বাস্তবায়নে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ এর ৩ ধারার ৩.২ উপধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘নিজ মালিকানায় অথবা ভাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় বিক্রয়কেন্দ্র্রসহ কমপক্ষে ৫০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম থকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ঝিনাইদহের কিছু কিছু ইউনিয়নে ডিলারদের ৫০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গুদাম নেই। সার মনিটরিং কমিটি এ বিষয়ে রহস্যজনক ভাবে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। গত ১৬ বছর ধরে এসব সারের ডিলাররা সরকারের
আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কৃষি অধিদপ্তরের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে এক ডিলার একাধিক লাইসেন্সের অধীনে সার উত্তোলন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কালো বাজারে চড়াদামে বিক্রি করছেন। আবার অন্য উপজেলার বাসিন্দা হয়েও সদর উপজেলায় ডিলারশিপ বাগিয়ে নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি করার কারণ মিলন ঘোষ নামে এক ব্যক্তির ডিলারশিপ বাতিল করে তার কাছে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন আ’লীগের এক প্রভাবশালী নেতা। পরে তিনি উচ্চ আদালতে আপীল করে ডিলারশিপ ফিরে পান। মিলন ঘোষ দাবী করেন ডিলার সমিতির সভাপতির কারসাজিতে সাবেক জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম তার ডিলারশিপ বাতিল করেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সদরের সাগান্না ইউনিয়নের ডিলার কোটচাঁদপুরের সাইদুর রহমানের কোন গোডাউন নেই বলে জানা গেছে। ডিলার পারভীন ইসলাম এলিজার বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলায় হলেও তিনি সদরের মহারাজপুর ইউনিয়নে ব্যবসা করছেন। একই ভাবে সদরের সাগান্না ইউনিয়নের ডিলার সাইদুরের বাড়ি কোটচাঁদপুর হলেও তিনি ঝিনাইদহে ডিলারশিপ নিয়েছেন। কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের সার ডিলার ইয়াসমিন ফেরদৌেেসর সেখানে কোন গোডাউন নেই বলে অভিযোগ। এ সব বিষয় নিয়ে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় জানান, সার নিয়ে যাতে কেউ ষড়যন্ত্র না করতে পারে সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কঠোর নজরদারী চলছে। তাছাড়া সার উত্তোলন, বিতরণ ও মজুদ এখনো স্বাভাবিক আছে। তাতে কোন গরমিল নেই। তিনি জানান কিছু ডিলার গাঢাকা দিয়ে থাকলেও মুলত তারাই ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে জানতে পেরেছি। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার ডিলার সমিতির ঝিনাইদহ সভাপতি হাজী জাহাঙ্গীর বলেন, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন যাচাই-বাচাই শেষে আমাদেরকে ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও সার্বিক ভাবে জেলায় কোন সমস্যা নেই। আমরা সব সময় সরকারকে সহায়তা করে আসছি, আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা (সার মনিটরিং কমিটি) বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তারা জানান, সার নিয়ে যাতে কেউ কারসারি বা ষড়যন্ত্র করতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ে কঠোর নজরদারী রয়েছে।
Unleash your inner warrior gear up for the ultimate gaming experience Lucky Cola