আইএস-কে জঙ্গিদের দমন প্রশ্নে চ্যালেঞ্জের মুখে যুক্তরাষ্ট্র!
আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধ শেষ করে ইতিমধ্যে সেনা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদেশি নাগরিক ও সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার সময় গত ২৬ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দরের কাছে আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ১৭৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জন মার্কিন সেনা ছিল। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস-কে বা খোরাসান প্রদেশের ইসলামিক স্টেট, যেটি মূলত ইসলামিক স্টেট গ্রুপের একটি শাখা। এটি আফগানিস্তানের সব জিহাদি জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও সহিংস।
এ ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই হামলার পেছনে যারা রয়েছে তাদের খুঁজে বের করা হবে। তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে। জঙ্গিদের চড়া মূল্য দিতে হবে।
সম্প্রতি তিনি আবারও বলেছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ক্ষতি করতে চায়, তাদের জন্য বার্তা হলো—যুক্তরাষ্ট্র কখনো বিশ্রাম নেবে না, কখনো ভুলে যাবে না, কখনো ক্ষমা করবে না। সময় বদলে গেছে। এখন মাটিতে পা না রেখেও দিগন্ত জুড়ে বিরাজমান শক্তি ব্যবহার করে জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্র সক্ষম। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বোঝাপড়া এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমরা শেষ সীমানা পর্যন্ত তাড়া করব। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যারা হুমকি, তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে।
কিন্তু সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে চলেছে। কারণ সেনা মোতায়েন না করে বিমান বা ড্রোনের মাধ্যমে জঙ্গি দমন করতে গিয়ে বড় বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের।
দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, সন্দেহভাজন আইএস-কে জঙ্গিদের টার্গেট করতে এখন যুক্তরাষ্ট্রকে পর্যবেক্ষণ চিত্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি মার্কিন সেনাবাহিনী বলেছে, তারা পূর্ব আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা চালিয়ে আইএস-কে এর একটি শাখার একজন পরিকল্পনাকারীকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে।
হামলার আগে পর্যবেক্ষণ চিত্রে দেখা যাচ্ছিল যে, একজন সন্দেহভাজন আইএস-কে যোদ্ধা একটি গাড়িতে গোলা-বারুদ ভর্তি ট্রাংক তুলছে। দীর্ঘক্ষণ ধরেই গোয়েন্দারা গাড়িটির ওপর নজর রাখছিল। ঐ গাড়ি লক্ষ্য করে আঘাত হানার আগে পেন্টাগনের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল যে, গাড়িটি হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছে জঙ্গি হামলা চালানোর জন্য।
মার্কিন বিমান হামলায় ঐ গাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর জানা গেল তাতে কমপক্ষে ১০ জন বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে শিশুও ছিল। সেখানে আইএস-কে সংশ্লিষ্ট কেউ ছিল কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। পেন্টাগন এই হামলার বিষয়টি সঠিক দাবি করলেও তারা বলেছে এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা বলছেন, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনারা থাকার সময় জঙ্গিবিরোধী অভিযান যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে করেছে তার থেকে এখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মার্কিন সেনারা না থাকায় সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি ও অন্যান্য কর্মকর্তারা সিএনএনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপকালে বলেছেন, এই হামলা খুবই যৌক্তিক ছিল। নিহতদের মধ্যে একজন আইএস-কের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আসন্ন জঙ্গি হামলার হুমকি মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল।
দুই জন মার্কিন কর্মকর্তা যারা মার্কিন হামলার পর সেখানকার ছবি দেখেছেন তারাও বলছেন, সেখানে বড় ধরনের সেকেন্ডারি বিস্ফোরণ হয়েছে। যা থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে, সেখানে বিস্ফোরক ছিল। এই বিস্ফোরকের কারণে কাছাকাছি থাকা বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
যদিও সাবেক কয়েকজন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা সিএনএনকে বলেন, এই হামলা প্রমাণ করে যে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে সঠিকভাবে বিমান বা ড্রোন থেকে আঘাত হানা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানে ছিল তখন মার্কিন পর্যবেক্ষণ অনেক বেশি মজবুত ছিল।
এখন সেনাদের উপস্থিতি না থাকায় কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো বা কমান্ডো পাঠানোর চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে স্থানীয় অংশীদারদের কাজে লাগাতে হবে। যাতে তথ্য সঠিক থাকে।