আবাসিক সুবিধা ছাড়াই সশরীরে পরীক্ষায় বসলো ইবি শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ইবি-
আবাসিক সুবিধা ছাড়াই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সশরীরে অনার্স-মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে সশরীরে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে, প্রথমদিনে মোট সাতটি বিভাগের অনার্স-মাস্টার্স চূড়ান্ত পরীক্ষা ও মানোন্নয়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট চারঘন্টা ব্যাপি অনুষ্ঠিত হয় এসব পরীক্ষা। এসময় পরীক্ষার হল পরিদর্শন করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। এ সময় তিনি পরীক্ষা কক্ষের পরিবেশ, পরীক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি, করোনাকালীন সময়ে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সুষ্ঠু সুন্দরভাবে পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
পরীক্ষার বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থেকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। পরীক্ষার্থীদের সন্তোষজনক উপস্থিতি ছিল। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। পরীক্ষা দিতে পেরে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখে আমরাও আনন্দিত।’
এদিকে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রায় ২০ টি বিভাগে অনার্স-মাস্টার্সসহ বিভিন্ন বর্ষের ইতোমধ্যে পরীক্ষা তারিখ ঘোষিত হয়েছে। দীর্ঘদিন পর পরীক্ষায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসের আশেপাশের বিভিন্ন মেস-বাসাবাড়িতে হাজার-হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়েছে। হল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া গুণে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে মেস-বাসাবাড়িতে অবস্থান করছেন তারা। মেস ও বাসাবাড়ির তুলনায় শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ^বিদ্যালয়ে ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করেন। এছাড়া ক্যাম্পাস পাশর্^বর্তী এলাকার মেস-বাসাবাড়িতে ৭ হাজার এবং ৫ হাজার শিক্ষার্থী কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে অবস্থান করেন। হল বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত চার হাজার শিক্ষার্থীর চাপ পড়েছে ক্যাম্পাস পাশর্^বর্তী এলাকার মেস- বাসাবাড়িগুলোতে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ শিক্ষার্থী এখন মেসে অবস্থান করছেন। ফলে থাকার জায়গা খুঁজে পেতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা। ছাত্রী মেসগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় রয়েছে ঝুঁকিও।
লোক প্রশাসন বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্রী নাজিফা সাইয়ারা জানান, অধিকাংশ বিভাগে পরীক্ষা শুরু হওয়ার মেস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। অনেক কষ্টে মেস খুঁজে পেলেও ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ। এছাড়াও নিরাপত্তা, খাবার ব্যবস্থাপনা, পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা তো আছেই।
এদিকে হঠাৎ করে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মেস বা বাসা মালিকরাও ভাড়া বাড়িয়েছেন ইচ্ছেমতো, যা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার বেশি ভাড়া দিয়েও সিট পাচ্ছেন না অনেকে। ফলে বিপাকে পড়েছে দূর-দূরন্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীরা। বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কয়েকজন মেস মালিকের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে উপাচার্যদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সভায় পজিটিভ সিদ্ধান্ত আসলে একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে আমরা হলগুলো খুলে দিবো।’