বাবা-মায়ের নিষ্ঠুরতার শিকার শিশুরা
সমাজে নির্মমতা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই নির্মমতার সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে শিশু হত্যা ও নির্যাতন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। নির্দয়ভাবে একের পর এক শিশু হত্যার ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, দেশে সামাজিক ও নৈতিকতার অবক্ষয় বাড়ছে। ধীরে ধীরে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে নির্মমতা ও সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। মাদক-হতাশা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধ। বাবা মায়ের কাছেই সন্তানদের সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকার কথা। অথচ নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণে সেই বাবা মায়ের নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে শিশুরা। বড়দের স্বার্থ কিংবা লালসার শিকার হয়ে অকালেই প্রাণ ঝরছে কোমলমতি শিশুদের। ঘরে কিংবা বাইরে, পরিবার কিংবা সমাজ- কোথাও নিরাপদ নয় শিশুরা। গড়ে মাসে ৩৪ শিশুর বেশি খুন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশু হত্যা প্রতিরোধে রাষ্ট্রের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সমাজের সচেতন সব নাগরিককে। ঘরেই শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অবক্ষয়ের কারণ চিহ্নিত করে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। তবেই নিশ্চিত হবে শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ।কুমিল্লার দেবিদ্বারে নিখোঁজের সাতদিন পর ৫ বছরের শিশু ফাহিমার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বাবা আমির হোসেনসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। ফাহিমা দেবিদ্বার পৌর এলাকার চাপানগর (চম্পকনগর) গ্রামের ট্রাক্টর চালক আমির হোসেন ও গৃহিনী হোছনা বেগমের একমাত্র কন্যা। হোছনা বেগম বর্তমানে ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গত ৫ নভেম্বর আমির হোসেনকে পার্শ্ববতী বাড়ির মহিলা লাইলী আক্তারের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলে তার মেয়ে ফাহিমা আক্তার। ফাহিমা তার মা’কে বিষয়টি জানিয়ে দেবে বলেও জানায়। পরবর্তীতে তখন লাইলী আক্তারের প্ররোচনায় আমির হোসেনের দুই চাচাতো ভাই রেজাউল ইমন, রবিউল আউয়াল ও তাদের বন্ধু সোহেলসহ রেজাউলের ফার্নিচারের দোকানে বসে একটি পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনানুযায়ী আমির হোসেন ৭ নভেম্বর ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ফাহিমাকে সোহেলের সিএনজিতে করে ঘুরতে যায়। সন্ধ্যা একটি নির্জন স্থানে পিতা কন্যার মাথা চেপে ধরে এবং অন্যান্য জড়িতরা তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। তখন লাইলি আক্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বাবাকে মেয়েটি বলে, আব্বু আমাকে মেরো না, আমাকে মারো কেন? মুহূর্তের মধ্যে খুনিরা তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে হত্যা করে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বিবেককে নাড়া দেয়। খুনি পিতার বিবেককে একটুও কাপেনি। পিতাসহ ৫ জন কয়েক মিনিটের মধ্যে হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে আমির ও লাইলিসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল তথ্য তারা র্যাবের কাছে স্বীকার করে। গত ১৫ জানুয়ারি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায় আকন্দবাড়ীর পেছনের জঙ্গলে অপহরণকারীরা মুক্তিপনের টাকা না পেয়ে শাহজাহান আকন্দের মেয়ে সানজিদা আক্তার (৭) কে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১৪, ময়মনসিংহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হত্যার বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পারিপার্শ্বিকতার বিচার ও নিহতের বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে নিবিড় তদন্তপূর্বক র্যাব-১৪ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১৪ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানার হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে শাকিনুল ইসলাম (১৯) কে ময়মনসিংহকে কোতোয়ালী থানাধীন রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে গত তিন ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ৮টা ২০ মিনিটে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সুপারি কুড়ানোর নাম করে ভিকটিম সানজিদা আক্তারকে তার বাড়ির পাশের জঙ্গলে নিয়ে সে এবং ইয়াছিন মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।