দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের বাইরে
বাংলাদেশ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন সেক্টরে যথেষ্ট উন্নতি করলেও এখনো দেশের ৬১ শতাংশ জনগণ নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের বাইরে। দেশের ২ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ এখনো অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করছে। জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করলেও তা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মানদণ্ডের অনেক নিচে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনস্বাস্থ্য নির্ভর করে শৌচাগারের ওপর। শৌচাগার লিঙ্গ সমতা, শিক্ষা, অর্থনীতি ও পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখে। তাই শৌচাগার নিয়ে আমাদের অনেক বেশি যত্নবান হতে হবে। কারণ, নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ছাড়া জীবন অনেক বেশি নোংরা, বিপজ্জনক ও অসম্মানের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের গুচ্ছ জরিপ বা মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিকস) পরিচালিত-২০১৯ সালের তথ্যে বলা হয়েছে, দেশের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করে। আর ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করছে। দেশের ১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ এখনো উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করে।জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বার্ষিক বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রতিবেদন-২০১৯ অনুযায়ী, দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮১ লাখ। সেই হিসেবে বর্তমানে দেশের ২ কোটি ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করছে। আর উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করছে ১৪ কোটি ২২ লাখ ১২ হাজার মানুষ।
বাংলাদেশে এখনো দেশের ৬১ শতাংশ জনগণ নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের বাইরে। অর্থাৎ তারা নিজেদের হাতের নাগালে প্রয়োজন অনুযায়ী মল ত্যাগের সুবিধা পায় না এবং যেখান থেকে পানির উৎস এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে না। জাতীয়ভাবে যে ৩৯ শতাংশ জনগণ নিরাপদ ব্যবস্থাপনার স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আছে, তাদের মধ্যে ৩২ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে। মোট জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ মৌলিক হাত ধোয়ার সুবিধার আওতায় আছে এবং মাত্র ১৬ শতাংশের বাড়িঘরে বর্জ্যপানি পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাংলাদেশে নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় টয়লেট ব্যবস্থার আওতায় আসার গতি খুব ধীর।
সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞজনেরা বলছেন, বাংলাদেশে পাঁচ ভাগের তিন ভাগ শহরের মানুষ দূষিত উৎস থেকে খাবার পানি খায়। এই পানির এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৬ অনুযায়ী মৌলিক স্যানিটেশন কভারেজ সার্বজনীন নিরাপদ স্যানিটেশন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ বন্ধ হলেও মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন স্যানিটেশনের নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।