কালীগঞ্জে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রয়োজন

Share Now..

\ হুসাইন কবীর সুজন \
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। এখন এডিস মশার প্রজননের মূল মৌসুম হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্কও বাড়ছে। পৌর ও ইউনিয়নগুলোতে মশা নিধন ও নিয়ন্ত্রণে লোক দেখানো যৎসামান্য পদক্ষেপ নিলেও এর পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না পৌর এবং ইউনিয়নবাসী। রীতিমতো মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ পৌর ও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। বর্ষা মৌসুমে সাধারণত ডেঙ্গু বাড়ে, পরে তা কমে আসে। তবে এখন বর্ষার যে ধরন, তাতে মৌসুমের পরে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বেশি বৃষ্টি হয়। তাই নিশ্চিন্ত থাকার কিছু নেই। প্রয়োজনীয় কিছু ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে। কারণ, বর্ষার মূল মৌসুমের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার নজির অতীতে আছে। কিন্তু পৌর এলাকার অপরিষ্কার রাস্তাঘাট, ভঙ্গুর ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণের ব্যাপারে এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণার অভাবে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা বিস্তার করতে পারে সহজে। মাঝেমধ্যে পৌর কর্তৃপক্ষ লোক দেখানো মশা নিধনে স্প্রে করলেও তা আসলে কোনো কাজে আসছে না। অপরদিকে, স্থানীয় সরকারের অধীনে থাকা ইউনিয়ন পরিষদ বর্তমানে অনেকটা অকার্যকর অবস্থায় থাকায় গ্রামীণ পর্যায়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দৃশ্যমান কোন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে গ্রাম কিংবা শহর অনেকের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা কাজ করছে। চলতি বছরের আগস্ট মাসে ৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী কালিগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতালটির বহির্ভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। উক্ত মাসে ৭ জন ডেঙ্গু রোগীর প্রত্যেকেই পুরুষ ছিলেন। পরের মাস সেপ্টেম্বরে ২২ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। যা গতা মাসের থেকে অনেক গুণে বেশি। এদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ এবং ১০ জন মহিলা রোগী। কালিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা নেওয়া অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগীর বাড়ি উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী গ্রামে। সরোজমিনে হাসপাতালে যেয়ে দেখা যায়, চারদিন আগে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত বেথুলী গ্রামের তপেন্দ্র সাহার ছেলে বিকুল সাহা (৫৫) ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার পাশেই মশাড়ি টাঙানো বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন বকেরগাছি গ্রামের জামির হোসেনের ছেলে ডেঙ্গু রোগাক্রান্ত ফয়সাল (১১)। এ সময় তপেন্দ্র সাহার স্ত্রী শ্রীমতি রানী জানান, প্রথম দিকে আমার স্বামীর শরীরে প্রচন্ড জ্বর আসে। জ্বর না কমায় আমরা দ্রæত হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পারি তার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। বর্তমানে আগের চেয়ে সে অনেক ভালো আছে। কালিগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপ যাতে বৃদ্ধি না পাই সেজন্য নিজেদের সচেতনতার পাশাপাশি উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে অবশ্যই তা লোক দেখানো নয়; কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা পৌরবাসী এখনো সেভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পৌর কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে দেখিনি। আশা করছি পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এগিয়ে আসবে। কালিগঞ্জ পৌরসভার সেনেটারি ইন্সপেক্টর আলমগীর কবির জানান, পৌরসভার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শহর এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মশা নিধনে স্প্রে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া পৌর এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক নগণ্য। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জ্বর। এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের একমাত্র বাহক। এই মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়ায়। এডিস মশা দিনের বেলায়, সাধারণত ভোরে এবং সন্ধ্যায় কামড়ায়। এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশের শরীরে প্লাটিলেট বেশ কম পাওয়া যাচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আমাদের এই হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকলেও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *