মতামত: শিক্ষার্থী বনাম করোনা ভাইরাস
করোনা ভাইরাস শিক্ষার্থীদের জন্য এসেছে অভিশাপ স্বরুপ! দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসাবে বাংলাদেশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশে কথিত কঠোর লকডাউনের নামে গণপরিবহন, শপিংমল, দোকান, বাজার, গার্মেন্টস সবকিছু হারমেশাই খোলা এখন। তবে কি কোন অজানা কারণে লকডাউন শিক্ষার্থীদের জন্য!! যেখানে শিক্ষার্থীরা সবকিছু নিয়ে বরাবরই সচেতন, সেখানে বলা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারবে না। আমার মনে হয়, গার্মেন্টস কর্মীদের থেকে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে বেশি সক্ষম।
একটা জাতি গড়ে উঠে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উপর কিন্তু শিক্ষার্থীরা আজ বেওয়ারিশ ভাবে জীবন যাপন করছে! তাদের পাশে দাড়ানোর মত কেউ নেই। আজ পর্যন্ত কোন শিক্ষক সমিতিও শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়ায়নি যে তাদের ক্লাসে ফেরানো হোক স্বাস্থবিধি মেনে। শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়? কে দেখবে? শিক্ষার্থীরাও বাচতে চায়! শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্তৃক বলা হয়েছিলো করোনা সংক্রমণের হার ৫% এর কম হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে কিন্তু ২০২১ এর প্রথমদিকে আনুমানিক দুই মাস করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ছিলো তবুও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি।
অনলাইন ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীরা আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। ক্লাসের সময় ক্লাস না করে ফেসবুক বা গেমের দিকে ঝুকে পড়া। ফেসবুকে সম্পর্কে জড়ানো সহ অযথা ফোনের পিছনে সময় নষ্ট করছে যা শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আরও একটি মূল কারণ। এছাড়া আমাদের ইন্টারনের ব্যবস্থার যে হাল এবং যে চড়া মূল্য তাতে করে গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি সমস্যা। অনলাইনে ভিডিও ক্লাস করতে গেলে ধীরগতির ইন্টারনেটের কারনে শিক্ষার্থী অধৈর্য্য হয়ে পড়ে। এতে করে আরও বেশি গেম খেলা বা অপ্রয়োজনে সময় নষ্ট করার সুযোগ পাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা এখন অনলাইন দুনিয়ায়। সংগৃহিত ছবি।
বেশিরভাগ বাবা-মায়েরা অনলাইন সম্পর্কে অদক্ষ হওয়ার ফলে সন্তানেরা ফোন/ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কি করছে সেটা দেখতে পারে না। তাই শিক্ষার্থীরা এখন বাড়িতে বসে মোবাইলে অনলাইন গেম খেলা ও ফেসবুক ব্রাউজ করে সময় পার করা ছাড়া আর কোনো কাজ পাচ্ছে না। অভিভাবকরাও কিছু বলতে পারছে না বা বললেও কে শোনে কার কথা! অনেক শিক্ষার্থী এখন ভুলেই গেছে যে তারা ছাত্র/ছাত্রী। এখন পাবজি গেম খেলতে এমবি কিনে না দেয়ায় আত্মহত্যা, মানসিক বিসন্নতা, উন্মুক্ত জীবন যাবন শিক্ষার্থীদের অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দিয়ে হল খুলতে চাইছে কিন্তু এই টিকা দেওয়ার কোন অগ্রগতিই দৃশ্যমান নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি উদ্যোগ নেন তবে যেকোন এক চালানের টিকা শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব। কারণ শিক্ষার্থীরাই আগামীর বাংলাদেশ। দেশের কল্যাণের জন্য হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেন স্বল্প পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত।
শিক্ষার্থীদের “কোমলমতি” আখ্যা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে চাইছে কিন্তু এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার একন অধিক আশংকাজনক। যা হোক, যেমনিভাবে এখন গণপরিবহন, ট্রেন, রেস্তোরাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অল্প সংখ্যাক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ঠিক এমনিভাবে যদি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে ক্লাস অথবা মূল পরীক্ষাটা হলেও অন্ততঃ পক্ষে নেওয়া হোক। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ধারা বজায় থাকবে বলে আমার মনে হয়। তা না হলে শিক্ষার্থীরা দিন দিন মেধাশুন্য হয়ে পড়ছে।
আব্দুল্লাহ, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।