চাপে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা

Share Now..


মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করে যে সরকারপ্রধান অং সান সু চি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করার পর তারা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেই সময় পরবর্তী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে রাজধানী নেপিডো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে কারফিউ জারি করা হয়।পরে হাজার হাজার মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। তার আগে ২০২০ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির দল এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ওই নির্বাচন নিয়ে বেসামরিক সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে মতপার্থক্যের সূত্র ধরে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে।বিশ্লেষকেরা বলছেন, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার কিছুকাল পরই বার্মার রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রবেশ ঘটে। শুরুতে পরোক্ষ এবং পরে প্রত্যক্ষভাবেই সম্পৃক্ত হয় তারা।

কিংস কলেজ লন্ডনের সমরবিদ্যা বিভাগের সিনিয়র ফেলো ও এশিয়া বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলছেন, স্বাধীন হওয়ার কিছুকালের মধ্যেই দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মীদের সঙ্গে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ওই সময় নিরাপত্তার নামে এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অভাবে রাজনীতিতে ঢুকে পড়ে সামরিক বাহিনী।

তিনি বলেন, শুরু থেকেই বার্মিজ আর্মি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। কারণ, সমাজে নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভেদ ছিল। সম্পদের বণ্টন নিয়ে বিরোধ এবং শক্তিশালী কোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান না থাকাটাও এর কারণ। এভাবেই তারা রাজনীতিতে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে।

পরে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে এই অবস্থা বদলাতে শুরু করে, যোগ করেন আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি আরও বলেন, তখন অং সান সু চি গৃহবন্দীত্ব থেকে মুক্তি পান, নির্বাচনে লড়ার অনুমতি পান। নির্বাচনে তার জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তিনি সরকার গঠন করেন।

কিন্তু সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা কমানোর সামর্থ্য তার ছিল না। আর অং সান সু চির অন্যতম একটি ত্রুটি হচ্ছে তিনি যে আন্দোলনের কর্মী এই পরিচয়টা ঝেড়ে ফেলেছিলেন। তার বদলে তিনি হয়ে ওঠেন একজন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ, বলেন এশিয়া বিশ্লেষক।

আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, অং সান সু চি ওই সময় মনে করতেন সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে, কিন্তু সেটি করতে হবে ধীরে ধীরে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেনাবাহিনীকে চটিয়ে দ্রুত সে পরিবর্তন সু চি করতেও চাননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন তিনি সেটা করার পরিকল্পনা করেন, অর্থাৎ দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার আগে, সেটি সামরিক বাহিনী পছন্দ করেনি। সে কারণেই ২০২১ সালে অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক জান্তা।

সরকার উৎখাতের পরপরই অং সান সু চিকে গৃহবন্দী করা হয়। এরপর সু চির মুক্তির দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ব্যাপক গণআন্দোলন চলেছে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক জান্তাকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বিরোধিতা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিদ্রোহ।

One thought on “চাপে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *