বাজারে নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দিশেহারা সাধারণ মানুষ
যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ
যশোরের বাজারে নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ এক প্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কাঁচাপণ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের খাদ্যসামগ্রী কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নআয়ের মানুষেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। বাজারে চাল, ডাল, তেল, নুন, পেঁয়াজ, শাকসবজি থেকে শুরু করে এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নেই, যার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না।
এদিকে পাইকাররা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানার একমাত্র উপায় আমদানি পণ্যের শুল্ক কমানো। এ ছাড়া কোনোভাবেই কমবে না জিনিসপত্রের দাম।
ইতিমধ্যে লাগামছাড়া হয়েছে তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য। একই অবস্থা কাঁচা পণ্যেও। সবজির বাজারেও প্রবেশ করা দায় হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। কোনো সবজির দাম ৩০ টাকার নীচে নেই। দু’ একশ’ টাকায় ভরছে না বাজারের ব্যাগ।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি জনগণের স্বার্থের পরিপন্থি। ভোক্তারা বলছেন, খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। এ কারণে খাদ্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। এসব কারণে অবিলম্বে বাজার মনিটরিং করার দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রয়োজনে মনিটরিং সেল করার দাবি জানিয়েছেন বাজারের আগুনে পোড়া অনেক মানুষ।
অপরদিকে, বিক্রেতারা বলছেন, সরকারকে মজুতদারদের খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নিউ আমিন ব্রাদার্সের এক স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, বড় বড় মোকামে বিশেষ করে কুষ্টিয়া, পাবনা, ফরিদপুরসহ আশপাশ এলাকায় ব্যাপক পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত করে রাখা হয়েছে। তারাই মূলত সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এসব মজুতদারকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ওই ব্যবসায়ী।
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কথা হয় হাজি আলী স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী মো. মোস্তাকের সাথে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর সব দেশ আমদানি শুল্ক কমায়। ইতিমধ্যে ভারতসহ অনেক দেশ তাদের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। একমাত্র বাংলাদেশে কমানো হয়নি। শুল্ক কমালে বাজারের অস্থিরতা কমে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কম বেড়েছে রসুন-আদার দাম
৩০ টাকার রসুন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। তবে, ৩০ টাকায়ও রসুন বিক্রি হচ্ছে। তার মান একটু কম। বেড়েছে আদার দামও। প্রতি কেজি আদায় বেড়েছে কমপক্ষে ১০ টাকা।
আলুর দাম একদম বাড়েনি
অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি আলুর দাম। অথচ এই আলুর ব্যবহার সবকিছুতে। গতকাল আলু খুচরা বিক্রি হয়েছে ১৬ টাকা কেজি। তবে, দু’ এক জায়গায় ১৮ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। কোথাও কোথাও ২০ টাকায়ও বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।
সয়াবিন তেলে দিশেহারা মানুষ।
সয়াবিন তেলের বাজার সবচেয়ে গরম। এই বাজারে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। তেলের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।যশোর শহরের গোহাটা রোডের অন্যতম বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাজি আলী স্টোরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।বর্তমানে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে একশ’ ৪৫ টাকা ৯৪ পয়সা। একশ’ ৮৫ কেজির এক ব্যারেল সয়াবিন তেল ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ায় প্রতি কেজির দাম এমন পড়ছে। আর খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছে একশ’ ৬০ টাকা কেজিতে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে অন্তত ১৫ টাকা বেশি। কোম্পানি ভেদে বোতলজাত তেলের দাম কমবেশি রয়েছে।
গত ২০-২৫ দিন ধরে তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা। সয়াবিন তেল আমদানি করা হয় আমেরিকা ও ব্রাজিল থেকে। প্রতিকেজি সয়াবিন তেলের আমদানি শুল্ক ২৭.৫০ টাকা বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এই শুল্ক না কমানো পর্যন্ত তেলের দাম কমবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
চিনিতে বেড়েছে ১৫ টাকা
চিনি পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৭৭ টাকা ৪০ পয়সা কেজি। খুচরা বাজারে ৮৫ টাকার নীচে কোনো চিনি নেই। কোথাও কোথাও আরও বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, যশোরের বাজারে ৫০ কেজির চিনির বস্তা তিন হাজার আটশ’ ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে পাইকারি। ২০ দিন আগে যার দাম ছিল তিন হাজার সাতশ’ ৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি ছিল ৭৫ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বেড়েছে চিনির দাম। চিনি তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্রুড আমদানি করা হয় ব্রাজিল থেকে। প্রতি কেজি চিনির আমদানি শুল্ক ২৬ টাকা বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে দেশীয় বাজারে চিনির দাম অত্যধিক। তারা বলছেন, আমদানি শুল্ক অর্ধেক করলেও প্রতি কেজি চিনির দাম কমবে ১৩ টাকা। যা মানুষের নাগালের মধ্যে আসবে।
মসুর ডাল একশ’ ১০ টাকা
ডালের দাম ছিল ৮৪ টাকা।এটিও বাইরে থেকে আমদানি করা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি মসুর ডালে বেড়েছে চার-পাঁচ টাকা। তবে, খুচরা বাজারে এর দাম আরও বেশি। খুচরা বাজারে মোটা মসুর ডাল ৯০ এবং চিকন ডাল একশ’ পাঁচ থেকে একশ’ ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আটার দাম বেড়েছে কেজিতে সাত টাকা
আটার দামও বেড়েছে সাংঘাতিকভাবে। বর্তমানে খুচরা বাজারে আটা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩১.৬০ টাকায় প্রতি কেজি। খুচরা বাজারে ৩৫ টাকার কম নেই আটার দাম। অথচ পনের দিন আগেও আটার দাম খুচরা বাজারে ছিল ৩০ টাকা। ময়দার দামও বেড়েছে আশঙ্কাজনকহারে।
কেজিতে ২০ টাকা বেশি পেঁয়াজে
পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত পনের দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যে পেঁয়াজ পনের দিন আগেও ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
শহরের হাটখোলা রোডের নিউ আমিন স্টোরে ভালোমানের পেঁয়াজ পাইকারি প্রতিকেজি বিক্রি হয় ৬৫ টাকায়। আর খুচরা বিক্রি করে ৭০ টাকায়। একটু বড় আকৃতির পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। আর ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। গত পনের দিনে পেঁয়াজে বৃদ্ধি পেয়েছে কমপক্ষে ২০ টাকা।
দাম কমেনি সবজির
বেড়েছে কাঁচা পণ্যের দামও। অন্য সব নিত্যপণ্যের সাথে আগুন লেগেছে সবজির বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বাড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ক্রেতারা। যশোরের বড়বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগে উচ্ছে কেজি প্রতি ৬০ টাকা ছিল। বর্তমানে তার দাম ৮০ টাকা। টমেটো কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ৮০ টাকায় ঠেকেছে। ঝিঙে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে এখন ৪০ থেকে ৫০টাকা, পটল কেজিতে ১০টাকা বেড়ে এখন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কুশিতে ১০ টাকা বেড়ে বর্তমান দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়। বরবটির দাম ১০ টাকা বেড়ে ৭০, লাউ ১০ টাকা বেড়ে প্রতি পিছ কমপক্ষে ৪০, চালকুমড়া পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁড়স ৪০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া পাঁচ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে বাধাকপি, বেগুন, লতি, কচুরমুখি, কাঁচকলা, ওল, পেঁপে ও ধুন্দলের দাম। কিছুটা কমেছে শসা, শিম ও মুলার দাম।
When I initially commented I clicked the “Notify me when new comments are added” checkbox and now each
time a comment is added I get three e-mails with the same comment.
Is there any way you can remove me from that service? Thank
you!