মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় ডিবির ৭ সদস্যের ১২ বছরের কারাদণ্ড

Share Now..


ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বহিষ্কৃত সাত সদস্যকে পৃথক ধারায় ১২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এক ধারায় ৫ বছর, আরেক ধারায় ৭ বছর কারাদণ্ড দিলেও উভয় সাজা একসাথে গণ্য হয়ে সাত বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে তাদের। একই সাথে প্রত্যেকজনকে ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে।মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে বেলা ১১টা হতে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। পরবর্তীতে বেলা সোয়া ১২টার দিকে রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক এ রায় দেন। বিচারক ৩৬৫ ধারায় ৫ বছর এবং ৩৮৬ ধারায় ৭ বছর কারাদণ্ড দেন। উভ সাজা একসঙ্গে ভোগ করতে হবে। ফলে সাজা ৭ বছর বলে গণ্য হবে।

রায় ঘোষণাকালে সাত আসামিই এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর কক্সবাজার শহরের থানার পেছনের রোড থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা টেকনাফের ব্যবসায়ী আবদুল গফুরকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। এরপর ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তার স্বজনদের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। দেনদরবারের পর ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় পরিবার। টাকা বুঝে নিয়ে পরদিন ভোররাতে আবদুল গফুরকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি গফুরের স্বজনেরা সড়কে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তাচৌকির কর্মকর্তাকে জানান। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সেনাবাহিনীর এই নিরাপত্তাচৌকি স্থাপন করা হয়েছিল।

মুক্তিপণ আদায়কারী ডিবি পুলিশের সদস্যরা মাইক্রোবাস নিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে ফেরার পথে চৌকির সেনাসদস্যরা মাইক্রোবাস তল্লাশি করে তাতে ১৭ লাখ টাকা পান। এ সময় ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান দৌড়ে পালিয়ে গেলেও বাকি ছয়জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেন সেনাসদস্যরা।

পিপি জানান, এ ঘটনায় ব্যবসায়ী আবদুল গফুর বাদি হয়ে ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান ও আবুল কালাম আজাদ, এএসআই ফিরোজ, গোলাম মোস্তফা ও আলাউদ্দিন এবং দুই কনস্টেবল আল আমিন ও মোস্তফা আজমকে আসামী করে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার প্রায় ১০ মাস ২০১৮ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ডিবির সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিপি ফরিদ আরো জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে জামিনে থাকা ডিবি পুলিশের ৭ সদস্যের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করেন বিচারক। এবং মামলার রায়ের জন্য ২০ সেপ্টেম্বর সময় নির্ধারণ করেন। মঙ্গলবার এ রায়টি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন পিপি। সেই মতেই রায় ঘোষণা হয়েছে।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে রায় ঘোষণার সময় মামলার বাদী আবদুল গফুর উপস্থিত ছিলেন না। তবে তার বড় ভাই টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় সেটি তুলে ধরেছেন আদালত।

One thought on “মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় ডিবির ৭ সদস্যের ১২ বছরের কারাদণ্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *