শতভাগ বিদ্যুতের সাফল্যে বাংলাদেশ

Share Now..

দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুতায়ন হয়েছে সব শহর, গ্রাম, চর, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। স্বাধীনতার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের জনগোষ্ঠীর ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতের সুবিধা পেয়েছিল। এরপর গত এক যুগে বাকি ৫৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎসংযোগের আওতায় এসেছে। এক যুগে এ অভাবনীয় সাফল্যের মাধ্যমে স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিববর্ষ পূর্তিতে দেশের সব নাগরিককে বিদ্যুতের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪ কোটি ২১ লাখের বেশি বিদ্যুৎসংযোগ রয়েছে, যার আওতায় জনগণের শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। এক যুগ আগে বিদ্যুৎ গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। এই মধ্যবর্তী সময়ে ২ কোটি ১৩ লাখ বিদ্যুৎসংযোগ বেড়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৮টিতে। দেশের যেসব স্হানে গ্রিডের বিদ্যুৎ সরাসরি পৌঁছানো যায়নি সেখানে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সংযোগ এবং সোলার মিনিগ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বিপুলসংখ্যক জনগণকে সংযুক্ত করার পর এখন টেকসই, নিরবচ্ছিন্ন এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করা হবে সরকারের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা গত ১২ বছরে পাঁচ গুণ বেড়েছে। ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎসহ দেশে এখন উত্পাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। আরো ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন অবস্হায় আছে। ভারত থেকে বর্তমানে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু সাধারণ শহর বা গ্রাম এলাকার বাইরে দুর্গম চরাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো। সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবল টেনে সংযোগ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎলাইনের। আবার পার্বত্য অঞ্চলের যেসব স্হানে বিদ্যুতের লাইন নেওয়া দুঃসাধ্য সেখানে সোলার প্যানেল বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎসেবার বাইরে কেউ নেই। প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় এক যুগে যে গতিতে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন ঘটেছে তা অভাবনীয়।

বিদ্যুৎসচিব হাবিবুর রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এখনো শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারেনি। সন্দ্বীপে, রাঙ্গাবালি দ্বীপেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ঐ অঞ্চলের মানুষও একসময় বিশ্বাস করতে চাননি যে, তারা বিদ্যুৎ পাবেন। হাতিয়া নিঝুম দ্বীপে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্হা নেওয়া হয়েছে। যমুনা, তিস্তার অনেক দুর্গম চরাঞ্চলেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হতো গ্রাহকদের। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা হয়নি। সব মানুষকে বিদ্যুৎসেবার আওতায় আনতে মাঠপর্যায়ে কর্মীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। সব বিতরণ সংস্হা ও কোম্পানিগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য যত আবেদন পড়েছে সবগুলোতেই সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে যারা আবেদন করেননি তাদেরকে স্হানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় অথবা এলাকায় এলাকায় মাইকিংসহ প্রচারণার মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যত নতুন স্থাপনা-বাড়ি-কারখানা উঠছে বা উঠবে তাতে যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ধারবাহিকতা রক্ষা করে শতভাগ বিদ্যুতায়নের গৌরব অক্ষুন্ন রাখতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি-গবেষণা সংস্থা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে অনেক বাধা ছিল। বিদ্যুৎ উত্পাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত নিয়োজিত সবাই একটি দল হয়ে কাজ করার ফলাফল হলো- নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এ অর্জন।
একনজরে দেশের বিদ্যুৎ খাত: দেশে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে। এক যুগে দৈনিক ২০ হাজার ৫৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা বেড়েছে। ১৩ হাজার ২১৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৬ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটারের বিতরণ লাইনের মাধ্যমে দেশ জুড়ে এ বিদ্যুৎসেবা পরিচালিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *