‘খেলা রাতে হবে, না হলে হবে না’

Share Now..

প্রখর রৌদে ওষ্ঠাগত অবস্থা। খেলোয়াড়েরা টার্ফে খেলছেন। টার্ফ থেকে তাপ উঠছে। আর ওপর থেকে সূর্যের তাপ। দুই তাপে মাঝখানে শরীর পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। এই অবস্থায় ৯০ মিনিট দৌড়াতে হবে বল পায়ে। একজন পুরুষ ফুটবলার পেরে উঠছেন না, সেখানে একজন নারী ফুটবলার কীভাবে খেলবেন? খেলতে পারবেন, তবে সেটিকে অমানবিক বলেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন। কমলাপুরে লিগ উদ্বোধন করতে এসে বাফুফে সভাপতি উদ্বোধনী বক্তব্যে নারী ফুটবলারদের মাথায় মানবিকতার হাত রাখলেন। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘এই রোদের মধ্যে ওরা (নারী ফুটবলার) ফুটবল খেলতে পারে না। এটি অমানবিক। খেলার সময় পরিবর্তন করতে হবে। সালাউদ্দিন বললেন, ‘প্রথম খেলা বিকাল ৫টায়, দ্বিতীয় খেলা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। খেলা হবে ফ্লাডলাইটের আলোয়।’ সালাহউদ্দিন বললেন, ‘সন্ধ্যার পরও গরম থাকে। আমরা যখন রাস্তায় সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে দেখি, তখন বোঝা যায় রাতেও কতটা গরম থাকে। বিকালে কিংবা সূর্য ডোবার পর দিনের তুলনায় সন্ধ্যায় গরমটা একটু হলে কমে আসে। রোদে পুড়তে হচ্ছে না।’

নারী লিগের ম্যাচ দেওয়া হয়েছিল বিকাল পৌনে ৪টায় এবং সকাল সাড়ে ৯টায়। রোদের মধ্যেই খেলতে হবে। ফিকশ্চার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সেভাবেই। শুক্রবার দুপুরে বাফুফে ভবনে নারী ফুটবল লিগ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ছিল গরমের মধ্যে কীভাবে খেলবেন মেয়েরা। সেই প্রশ্নে বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ জানিয়েছিলেন, ফ্লাড লাইটে খেলা সম্ভব নয়। খেলতে হলে ক্রীড়া পরিষদকে লাইটের বিল পরিশোধ করতে হবে। ম্যাচপ্রতি ১৩ হাজার টাকা খরচ দিতে হবে। এটা সম্ভব নয়। বাফুফের কাছে অত টাকা নেই।’ আগেও নাকি মেয়েদের ফুটবল ম্যাচ চালাতে গিয়ে ক্রীড়া পরিষদকে টাকা দিতে হয়েছে। মিটার রিডিং দেখে বিল গুনতে হয় বাফুফেকে। সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছিলেন কিরণ। তিনি জানিয়েছেন, বাফুফেতে টাকা নেই যে ফ্লাড লাইটের বিল পরিশোধ করে খেলা চালাবে। তাই ফ্লাইড লাইটে খেলা রাখা হয়নি। ২৪ ঘণ্টা না যেতেই সিদ্ধান্ত বদলে গেল। কিরণ সিদ্ধান্ত নিলেন শরীর পুড়ে যাওয়া রোদে খেলতে হবে। বাফুফের দীনতা প্রকাশ করলেন। আর গতকাল বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন এসেই নারী ফুটবলারদের রোদ থেকে সরিয়ে ফ্লাড লাইটে খেলার ব্যবস্থা করে ফেললেন। কিরণের কাছে মানবিকতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ না হলেও সালাহউদ্দিন বুঝলেন এটা অমানবিক। ম্যাচপ্রতি যদি ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়, তবু মেয়েদের রোদে পুড়তে দেবেন না। জাত সংগঠকের পরিচয় দিয়েছেন সালাহউদ্দিন।

লিগের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিনের ঘোষণার পর সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন উঠল— রোদে খেলতে হবে আগে কথাটা জানানো হয়েছিল কি না। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কার ভুল হয়েছে সেটা নিয়ে কথা নেই। অফিস যেটা করেছিল সেটা ঠিক আছে। আজকে আমি যেটা করেছি সেটাও ঠিক আছে।  উদ্বোধন করতে আসার আগে শুনলাম গরমে খেলতে হবে। শুনলাম ফ্লাড লাইটে খেলা হচ্ছে না। আমি আমার সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বললাম, তিনি বললেন বড় বাজেট লাগবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কথা বলতে হবে। আমি বললাম এনএসসির সঙ্গে কথ বলো। কীভাবে এটা করা যায় অর্গানাইজ করো। বাজেট অ্যারেঞ্জ করে দিচ্ছি। খেলা রাতে হবে, না হলে খেলা হবে না। এই আবহাওয়ায় ফুটবল খেলা হিউম্যানলি পসিবল নয়।’

লিগে ৩৫টা ম্যাচ হবে। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা অতিরিক্তি ব্যয় হবে। কাজী সালাহউদ্দিন বললেন, শেষ ১০ বছর কোনো কিছুই আটকে থাকেনি। জাপান থেকে শুরু করে সৌদি আরব থেকে শুরু করে সব জায়গায় ট্রেনিং করেছে, খেলেছে। যেখান থেকেই হোক আমরা ব্যবস্থা করেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *