সমালোচনার মুখে নারী আম্পায়ারিং নিয়ে অবস্থান বদলেছে ওরা: আম্পায়ারস কমিটি

Share Now..

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে মনিরুজ্জামানের সঙ্গে অন-ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার দায়িত্ব পাওয়ায় আপত্তি জানিয়েছিল দুই দল।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান আম্পায়ারস কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠু। তার দাবি, নারী বা পুরুষ বিবেচনা করাটা বৈষম্য। তবে সমালোচনার পর দুই দল দাবি করেছে, নারী নন, অনভিজ্ঞ বলেই জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার জেসির দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে কথা বলেছিলেন তারা। 

যা বলছে আম্পায়ারস কমিটি
দুই দল আসলে কী ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল বিসিবির আম্পায়ারস কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠুর কাছে।

এ ব্যাপারে ইফতেখার আহমেদ মিঠু সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বেসিক্যালি করেছে কী, যখন নারী আম্পায়ার দেখেছে, তখন ওরা নাকি বলেছে, আলাপ করেছে যে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নারী আম্পায়ার এল কেন? আমার কথা হলো, আমরা কোথায় প্র্যাকটিস করাব তাদের (নারী আম্পায়ারদের)? আমি তো বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করছি। সেকেন্ড ডিভিশন, ফার্স্ট ডিভিশন করে করে উপরে এনেছি। এখন প্রিমিয়ার লিগে সিনিয়র খেলোয়াড়দের সাথে কাজ করলেই কিন্তু আত্মবিশ্বাসটা বাড়ে। যেকোনো ক্ষেত্রেই তো তাই, ধীরে ধীরে ধাপ পার হতে হয়।’

গত বৃহস্পতিবার প্রথম নারী আম্পায়ার হিসেবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে দায়িত্ব পেয়েছিলেন জেসি। তার দায়িত্ব পাওয়াতে দলগুলোর আপত্তির কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না মিঠু, ‘প্রধান হিসেবে আমি তো বৈষম্য করতে পারি না। আমার কাছে সবাই সমান। আম্পায়ারিং তো এমন না যে ফিজিক্যালি বক্সিং করতে যাচ্ছে- ছেলেদের গায়ে জোর বেশি, মেয়েদের কম। আইসিসি, সবাই এ ব্যাপারে পুশ করছে। আমাদের বোর্ড সভাপতি, ক্রিকেট বোর্ড থেকে বলা আছে, নারী আম্পায়ারদের দেখভাল করতে হবে। এমন এক ম্যাচে দিয়েছি যার কোনো প্রভাব নেই। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ বা রেলিগেশন ম্যাচ হতো, তখন বুঝতাম (আপত্তি থাকতে পারে)। দুই হবে না তিন হবে, না চার হবে- এই ম্যাচেও যদি অসুবিধা হয়, তাহলে কিছু বলার নাই। ওরাও (দুই ক্লাব) বুঝছে। হয়তো প্রথম দিকে কথা বলছে, পরে তো খেলছে।’

মোহামেডানের মতামত
মোহামেডানের ক্রিকেট সমন্বয় তরিকুল ইসলাম টিটুর দাবি তারা কোনো অভিযোগ করেননি, ‘মোহামেডানের অফিশিয়াল হিসেবে একমাত্র আমিই মাঠে ছিলাম। আমরা কারও কাছে আম্পায়ার নিয়ে কোনো অভিযোগ করিনি। কেউ ফোনও করিনি। আমি মিঠুকে জিজ্ঞেস করতে চাই, অভিযোগ কে করেছে। বললেই তো হবে না, অভিযোগ করেছে। আম্পায়ার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। মিঠু কোথা থেকে শুনেছে। কোথা থেকে কী হলো, বুঝতে পারছি না। মোহামেডান বড় ক্লাব, আমরা আম্পায়ার সম্পর্কে হুট করে কথা বলতে পারি না। আর প্রথম ম্যাচ করতে এসে ও (জেসি) তো ভালো করেছে।’ 

তাহলে আম্পায়ারস কমিটির প্রধান এমন কথা কেন বলেছেন, সে প্রশ্ন করা হলে টিটু বলেন, ‘মিঠু তাহলে জানে না, ওকে জিজ্ঞেস করেন। কে অভিযোগ করল জানি না, মোহামেডানের কেউ দেয় নাই, এটা শতভাগ নিশ্চিত।’

তবে একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথোপকথনে মৌখিকভাবে নিজেদের অখুশি মনোভাব প্রকাশের কথা শিকার করেছেন টিটু, ‘আমরা আসলে আপত্তি তুলিনি। আমরা এমনিতে বলাবলি করছিলাম যে ম্যাচের মেরিট অনুযায়ী তো এত বড় ম্যাচে জেসি আম্পায়ার হতে পারে না। আমরা বলছিলাম এত বড় ম্যাচে আরও ভালো আম্পায়ার দরকার ছিল। আমরা অফিসিয়ালি অভিযোগ করিনি, অফিসিয়ালি অভিযোগ করব কেন। আমরা ওরকমভাবে রিপোর্ট-টিপোর্ট করিনি।’

প্রাইম ব্যাংক ক্লাব কী বলছে
একই প্রতিবেদনে প্রাইম ব্যাংক ক্লাবের ম্যানেজার শিকদার আবুল হাশেম কঙ্কনও বলেছেন তাদের আপত্তির কারণ, ‘মহিলা আম্পায়ার দেবে এটা তো জানি না আমরা। বাংলাদেশে মহিলা আম্পায়ারের অভিজ্ঞতা কেমন এটা তো আমরা সবাই জানি। আপত্তি করি না। যেহেতু এটা বড় ম্যাচ, এখানে নিয়মিত যারা করে তাদের আশা করছিলাম। মহিলা আম্পায়ার দেখেন যেটা এলবিডব্লিউ সেটা দেয় নাই, যেটা হয় নাই সেটা দিয়েছে। আমরা ম্যাচ শুরুর আগেও কিছু বলিনি। এমনিতে নিজেরা আলাপ করেছি। সিসিডিএমের কাউকে বলিনি। নিজেরাই আলাপ করেছি। অনভিজ্ঞতার জন্যই।’

দুই ক্লাবের বক্তব্য জানিয়ে মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সমালোচনার মুখে এখন অবস্থান বদলেছে তারা, ‘ফোন করেনি, ব্যাপারটা হয়েছে মাঠে। এখন হয়েছে কী, কাজটা করেছে, কথা বলেছে। কিন্তু এখন দেখছে ব্যাপারটা খারাপ দিকে চলে যাচ্ছে, সবাই সমালোচনা করছে… (তাই এখন না বলছে)। টিটুরাই মন্তব্য করেছে। আমি যতটুকু বুঝেছি, ওরা অখুশি ছিল। তারা বলেছেও। খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তারা বলছে এই ম্যাচে না দিলেও পারত। কে কতটা খারাপভাবে বলছে সেটা তো জানি না, শুধু এটুকু জানি… এখন টিটু আমাকে ফোন করছে, জেসিকে ফোন করছে। এখন বুঝছে যে মোহামেডানের ওপর… মাঠে যারা ছিল তারাও… আমরা শুনলাম কোত্থেকে? আমি তো মাঠে ছিলাম না। মাঠে ওরা এসব করছে। ওরা অখুশি ছিল, (জেসিকে) দিল কেন? যেখানে স্বাগত জানানোর কথা, সেটা করেনি। এখন যেহেতু সংবাদমাধ্যমে কথা হচ্ছে, ফেসবুকে আলোচনা হচ্ছে, এখন এরা পিছু হটছে। একদিক থেকে ভালো হয়েছে, ভবিষ্যতে আর চাপ দিতে পারবে না।’

এ ব্যাপারে সিসিডিএমের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, রেফারিং নিয়ে তাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি, ম্যাচ রেফারির রিপোর্টেও আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কিছু ছিল না, ‘এরকম কোনো কিছু আমাদের বলা হয়নি, শুনিওনি। কেউ কিছু বলেনি, ওদের মধ্যে ওরা কী আলোচনা করছে সেটা তো আমরা জানি না। আমাদের কেউ কিছু বলেনি। দুই ক্লাব থেকে দেওয়া বক্তব্যে কিছু নেই। ম্যাচের মাঝে খেলা বন্ধ হয়েছিল, সেটা অন্য ইস্যু। এর বাইরে মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে অন্য কিছু জানানো হয়নি। এর বাইরে আমরা কিছু জানি না।’

জেসি কি আসলেই অনভিজ্ঞ?
আগামী জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হবে এবারের নারী এশিয়া কাপ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসি নারী এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন। এরই মধ্যে মৌখিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)।

এর আগে ইমার্জিং এশিয়া কাপে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে জেসির। গত বছরের জুনে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে হংকংয়ে। এ ছাড়া চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এসিসি প্রিমিয়ার কাপে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম আম্পায়ারিং করলেন।

বাংলাদেশ দলের হয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা জেসির পুরো মনোযোগ আম্পায়ারিংয়ে। এখন পর্যন্ত ৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সামনেই ঘরের মাঠে আছে বিশ্বকাপ। জেসি এখন নিজেকে প্রস্তুত করছেন বৈশ্বিক মঞ্চে দায়িত্ব পালনের।

গত মাসেই সাথিরা, রোকেয়া সুলতানা, ডলি রানি সরকার ও চম্পা চাকমাকে আইসিসি আম্পায়ারিং ডেভেলপমেন্ট প্যানেলে যুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ম্যাচ রেফারি হিসেবে সুপ্রিয়া রানী দাসও ওই প্যানেলে যুক্ত হয়েছেন। বিসিবি এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সাথিরা ও রোকেয়া সুলতানাকে প্রথমবারের মতো বেতনের আওতায় এনেছে।

এ বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশে হতে যাওয়া মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেন বাংলাদেশের আম্পায়ারদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, সে জন্যই নারী আম্পায়ারিং নিয়ে বিসিবির এই উদ্যোগ। 

One thought on “সমালোচনার মুখে নারী আম্পায়ারিং নিয়ে অবস্থান বদলেছে ওরা: আম্পায়ারস কমিটি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *